২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৭:৩৪

কৃষিঋণে খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১৫৮ কোটি টাকা

কয়েক দফা বন্যায় ফসলের ক্ষতি

দেশে কয়েক দফা বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না কৃষক। এ কারণে বেড়ে গেছে কৃষিঋণে খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কৃষিঋণে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ হার ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। কৃষিঋণের প্রায় অর্ধেক খেলাপির বাস্তব কারণ থাকলেও বাকি অর্ধেক খেলাপির সুনির্দিষ্ট বা যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এ েেত্র বিভিন্ন সময় অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া ঋণগুলো খেলাপি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দেশে কয়েক দফা বন্যার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে ঋণ নিয়ে বেশির ভাগ কৃষক আর ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন উদ্যোমে ফসল রোপণের জন্য কৃষিঋণের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে নতুন ঋণ পেতে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন বন্যায় তিগ্রস্ত কৃষকেরা। কোনো ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই তাদের কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। কোনো ধরনের জমা ছাড়াই নতুন ঋণ পাবেন। এ ছাড়া ঋণ পুনঃতফসিলের েেত্র ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড (কিস্তি আদায় বন্ধ) প্রদান করা যাবে বন্যায় তিগ্রস্ত কৃষকদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দুই হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা ল্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় ৮০৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে এক হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটি ৪৮২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা দুই মাসে ল্যমাত্রার প্রায় ১০ শতাংশ। পুরো অর্থবছরের জন্য এই ব্যাংকের ল্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। দুই মাসে ব্যাংকটি ২৫৭ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা ল্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির কৃষিঋণ বিতরণের ল্যমাত্রা ২৩১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রায় ১৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির ল্যমাত্রা এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, কৃষিঋণের অধিকাংশই শস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে। দুই মাসে শস্য খাতে প্রায় এক হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া পোলট্রি খাতে ৫৬৫ কোটি টাকা, মৎস্য খাতে ৩৮২ কোটি টাকা, সেচ যন্ত্রাংশ খাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা, কৃষি যন্ত্রাংশে প্রায় ১৭ কোটি টাকা, খাদ্য ভাণ্ডার খাতে ১৫ কোটি টাকা, দারিদ্র্যবিমোচনে ১৫১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৪১০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253786