২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৭:৩৩

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আহমদ হোছাইনসহ সহস্রাধিক আলেম-ওলামাকে হত্যা

মিয়ানমারের আরাকানে চলমান গণহত্যায় নারী ও শিশুদের পাশাপাশি সহস্রাধিক আলেম-ওলামাকেও হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমদ হোছাইন (৯০)। একই সাথে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে রাজ্যের কয়েক শ’ মসজিদ-মাদরাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা। বিছিন্নভাবে কিছু মসজিদ টিকে থাকলেও সেগুলোতে আজান দেয়া ও নামাজ আদায়ের কেউ নেই। জীবন বাঁচাতে সবাই পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমারের বর্বর বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা আরাকান থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের নাম-নিশানা মুছে দিতেই পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বশূন্য করতে বেছে বেছে হত্যা করেছে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। উখিয়ার বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া হাফেজ আইয়ুব জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনা ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, নারী-শিশু ও পুরুষদের হত্যা করে এবং যুবতীদের ধর্ষণ করেই থামছে না, তারা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে আরাকানের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোও জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা দুই শতাধিক মসজিদ, অর্ধশত মাদরাসা ও অসংখ্য খানকাহ পুড়িয়ে দিয়েছে।

কিছু আলেম-ওলামা সেনা-পুলিশ ও উগ্র বৌদ্ধদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারলেও বেশির ভাগ বয়স্ক আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখকে হত্যা করেছে তারা। এতে করে গত ২৪ আগস্ট থেকে আজান ও নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে জনশূন্য আরাকানের অবশিষ্ট মসজিদগুলোতে। আরাকানের ২০টি দাওরায়ে হাদিস (কামিল) মাদরাসার সাথে এবতেদায়ি বাদ দিয়ে মাধ্যমিক স্তরের আরো ৩০টি মাদরাসা এখন বিরান।

সায়দুল্লাহর চর এলাকার বড় মাদরাসার মুহাদ্দিস প্রবীণ আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমদ হোছাইনকে (৯০) বর্মি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি ছিলেন ওই মাদরাসার মুহাদ্দিস ও পরিচালক। ৬০ বছর ধরে তিনি হাদিসের দরস দিয়ে আসছেন।
গত ৩০ আগস্ট সেনা-পুলিশ ও মগদের একটি দল সায়দুল্লাহর চর এলাকা ঘেরাও করে ওই মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের কাউকে গুলি করে আবার কাউকে ধারালো ছুরি দিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। কেউ বা পাশের বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে পরে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসেন।

সবার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমদ হোছাইন কোথাও যেতে পারেননি। তিনি মাদরাসায় থেকে যান। সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, তারা দূর থেকে দেখেছেন সেনা-পুলিশ ও মগরা তাকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়। পরপর কয়েকটি গুলি করলেও একটিও তার শরীরে না লাগায় তারা ক্ষেপে যায়। এরপর দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার পর তারা তার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করে।
একইভাবে টেকিবুনিয়ার কোয়াইংচিবং মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নুর আহম্মেদকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে সেনা ও উগ্রপন্থী মগরা। মৌলভী ইউসুফ নামের পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গা বলেন, কোনো আলেম-ওলামাকে তারা বাঁচিয়ে রাখেনি। কোনো কোনো আলেমকে হাত-পা কেটে পুরো শরীর টুকরো টুকরো করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253749