২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৭:২৯

বিবিসিকে ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারী

পা ধরে বলেছি কাউকে বলব না বাংলাদেশে চলে যাবো

মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখনো পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা।
বনে জঙ্গলে লুকিয়ে যারা বাঁচতে পেরেছেন তারাই এখন আসছেন বলেই জানাচ্ছেন আশ্রয় প্রার্থী নারী পুরুষেরা।
শুরুর মতো ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের ঢল এখন না থাকলেও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ আর শিশুরা আসছে ছোট ছোট দলে।
তাদের বেশির ভাগই হারিয়েছেন পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য। নিজেরাও কেউ কেউ বর্বর নির্যাতনের শিকার।
টেকনাফে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা শাহপরীর দ্বীপে কথা হয় মংডুর ২০ বছর বয়সী আসমার সাথে।
গত মঙ্গলবার পনের জনের একটি দলে বাংলাদেশে ঢুকেছেন আসমা। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তার ছদ্মনাম ব্যবহার করছি।

আসমা জানান, মিয়ানমারে সেনাসদস্যরা তার স্বামী ও ভাইকে হত্যা করে আর তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন।
তার বক্তব্য: ১০-১২ জন সৈন্য মিলে আমাকে ধর্ষণ করে, কি যে কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না, ওদের অত্যাচারে অনেক মেয়ে মরে গেছে। আমাকেও যখন মেরে ফেলতে চাইল, তখন শিশু দুটোকে দেখিয়ে ওদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিা চাইলাম। বললাম, কাউকে বলব না বার্মায় কী হয়েছে, বাংলাদেশে চলে যাবো এখুনি।
কাকুতি মিনতি আর ছোট্ট দু’টি শিশু দেখিয়ে ছাড়া পেয়ে ১৫ দিন জঙ্গলে কাটান আসমা। সাথে ১২ বছর বয়সী ছোট ভাই আর দুই সন্তান।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশের চার দিন আগে অসুস্থ হয়ে পথেই মারা গেছে তার চার বছর বয়সী বড় ছেলেটি। এক সন্তান আর ভাইকে নিয়ে বহু কষ্টে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন বলে জানান তিনি।
হাঁটতে হাঁটতে পা ফুলে গেছে। এ দেশে এসে যে সাহায্য পেয়েছি, নিজের দেশে তা পাইনি। বার্মার অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বলে, সে দেশ শুধু তাদের, মুসলমানের নয়।

মংডুর আরেক অধিবাসী রফেকা বলছিলেন, তার স্বামীর গলা কেটে ফেলেছে সেখানকার অমুসলিম সম্প্রদায়ের অস্ত্রধারীরা। আর তার ভাইয়ের স্ত্রীকে ধর্ষণের পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। রাখাইন থেকে তরুণী মেয়েরা অনেকেই আসতে পারেনি বলেও জানায় রফেকা।
প্রতিদিনই ধরপাকড় চলে, সুন্দরী মেয়েদের তুলে নিয়ে জুলুম করে মিলিটারিরা। তারপর হাত-পা, বুক কেটে ফেলে দেয়। অত্যাচারের কারণে বছরখানেক আগে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল রফেকার পরিবার।
রফেকা জানান, আসার আগে কয়েক দিন তারা দিনের বেলায় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতেন আর রাতে বাড়িতে যেতেন।
রফেকার বিবরণে অত্যাচার ও সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ পর্যায় গিয়েছিল যে গ্রামের সবাই যে যেদিকে পেরেছেন পালিয়েছেন।
মগরা আমাদের প্রতিনিয়ত জ্বালায়। বাড়িতে হানা দেয়। পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় অত্যাচার, জুলুম করে। আমার ভাবীকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। মেরে ফেলার আগে তাকে জুলুম করে (ধর্ষণ) মগ মিলিটারিরা। হাত-পা কেটে ফেলে।
স্বামী হারানোর পর দুই সন্তান নিয়ে আট দিন হেঁটে বাংলাদেশে ঢুকেছেন রফেকা।
বেশির ভাগ রোহিঙ্গার বক্তব্যে নির্যাতনের চিত্র একই রকম।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253841