২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৭:২৬

খাদ্য ঘাটতি খাদ্যমূল্য খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে আগাম ভাবনা

চালের বাজার প্রথম অস্থির হয় গত এপ্রিলে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর। তিন মাস না যেতেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ৩২ জেলায় বন্যার কারণে আউশ ও আমনের ওপর বড় ধরনের আঘাত আসে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার দুই দফায় আমদানি শুল্ক কমালেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওএমএস তথা খোলাবাজারে চাল বিতরণ করতে গিয়ে সরকারের খাদ্যগুদামে মজুদও কমে গেছে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে দেশের চালকল মালিক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সরকার চাল আমদানির শুল্ক ২৮% থেকে কমিয়ে ২% এনেছে। শুল্ক কমানোর পর চাল আমদানি বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাইয়ে চাল আমদানির জন্য ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। এই অংক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১২৫৩৭% বেশি। জুলাই মাসে চাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৭ কোটি ১২ লাখ ডলারের, যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৫৩১৬% বেশি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই মাসে মাত্র ১১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এছাড়া গম আমদানির এলসি বেড়েছে ৭৪%।

বেসরকারিভাবে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের এক লাখ ৫৪ হাজার টন চাল গোডাউনে ঢুকেছে। বাকি চাল খালাসের অপেক্ষায় আছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানিতে চুক্তি হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব চাল দেশে আসবে।
থাইল্যান্ড থেকে দুটি জাহাজে আমদানি করা ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিম্নমানের হওয়ায় তা গ্রহণ করেনি খাদ্য বিভাগ। এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটল, যখন সরকার আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
বন্দরে জাহাজ দুটি আসার পর আমদানি করা চালের নমুনা পরীক্ষা করে খাদ্য বিভাগ। এতে দেখা যায়, একটি জাহাজে থাকা চালের মধ্যে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ ১৩.৪৫%। অন্য জাহাজের চালের দানায় এর পরিমাণ পাওয়া যায় ১৭%। সরকারের আমদানির দরপত্র চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার গ্রহণযোগ্য সীমা ৩%।
ওই দুটি জাহাজের ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায়। এমভি থাই বিন বে নামের জাহাজটিতে ১২ হাজার ২৯০ টন সেদ্ধ চাল রয়েছে। এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর বহির্নোঙরে পৌঁছায় এমভি ডায়মন্ড-এ নামের আরেকটি চালবাহী জাহাজ। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন সেদ্ধ চাল রয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে খাদ্য বিভাগ এই চাল আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে মোট ৫০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুটি চালানে এসেছে ওই চাল। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একটি জাহাজে করে যত চাল আনা হবে, তার মধ্যে নমুনায় যদি ৪% পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তবে জরিমানা আদায় করে তা গ্রহণ করতে পারবে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি জাহাজে আনা চাল জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই বলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।

এমভি হারুকা নামের একটি জাহাজে করে ওই চাল ৩০ আগস্ট বন্দরে আসে। পরে জরিমানা আদায় করার শর্তে এই চাল গ্রহণ করে খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বেশষ প্রকাশিত দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারি খাদ্যগুদামে চালের মজুত ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টন। গত বছরের একই সময় মজুত ছিল ৭ লাখ ৯১ হাজার টন। বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা ১ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত পৌনে ৫ লাখ টন হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ জুলাই থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। আমদানি করা চাল দ্রুত খালাসের জন্য বন্দরের দুটি জেটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে সময় লাগছে বেশি। বন্দরের একাধিক প্রতিবেদনে চাল খালাসে বিলম্বের কারণ হিসেবে বৈরী আবহাওয়া ও ট্রাকের অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭)
বোরোতে শুধু হাওরের ফসল ডুবে নষ্ট হয়েছিল। পরে বন্যায় দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে মাঠের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের সঙ্গে ডুবেছে সবজিও। সরকারি হিসাবে ৪০ জেলায় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এবার প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করা হয়েছিল। সেই হিসাবে তলিয়ে যাওয়া জমিতে অন্তত ২৩ লাখ টন চাল হওয়ার কথা ছিল। এর অর্ধেক ধানও নষ্ট হলে এবার আমন ও আউশে কমপক্ষে ১০ লাখ টন চাল পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বোরো মৌসুমে হাওরে ১০ লাখ টন চাল কম হয়েছিল। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তা ২০ লাখ টন এবং চালকল মালিক সমিতির হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৪০ লাখ টন।
রংপুরে ৩৬ হাজার ২০০ হেক্টর রোপা আমন ও ১ হাজার ১১৫ হেক্টরের সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমন ও ১৬০ হেক্টর সবজিখেত পানিতে ডুবে গেছে। নওগাঁ জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩০৩ হেক্টর রোপা আমন, আউশ ও সবজিখেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো ১৬ আগস্ট ২০১৭)

অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, বোরো ও আমন-আউশ মিলিয়ে এবার দেশে ধানের বড় ধরনের ঘাটতি হবে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার চারটি দেশের সঙ্গে চাল আমদানির সমঝোতা স্মারক ও আমদানি চুক্তিও করেছিল।
২১ আগস্ট ২০১৭ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪৬ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৬২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। আর সরকারি চালের মজুত ঐ সময় পর্যন্ত ২ লাখ ৯৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে মজুত ছিল প্রায় ৭ লাখ টন। সরকারি গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ১৭ লাখ টন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো বা গবেষক এম আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, বোরো ও আমন মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদনের ১০% এবার কম উৎপাদন হতে পারে। ফলে চালের দাম আরও বেড়ে গরিব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত বেসরকারি খাতে আমদানি হওয়া চাল আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফা দিয়ে কিনে নেওয়া এবং জরুরি ভিত্তিতে মজুত বাড়ানো।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন ইউনিটের হিসাব বলেছিল, এবারের আমন ও আউশে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে আউশ ও আমনের চাষ
লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছিল। কিন্তু ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় প্রথমে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম এবং পর্যায়ক্রমে ৪০টি জেলার ফসল তলিয়ে গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলোক সংবেদনশীল নাবি জাতের আমন চারা রোপণ করা যাবে। ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষক যাতে পর্যাপ্ত বীজ পান, সে জন্য দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৭২০টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষক পর্যায়ে ১ হাজার বীজতলা তৈরিতেও তারা সহযোগিতা দিয়েছে। ফলে বন্যার পরও অনেক এলাকার কৃষকেরা চাইলে সেখানে ওই চারা রোপণ করে আমন ও আউশের চাষ করতে পারবেন।

১৯৯৮ সালে বন্যার সময় সরকারের কৃষিসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন এ এম এম শওকত আলী। বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, নাবি জাতের বীজ পাওয়া যায় কম এবং ফলনও কম হয়। তাই সরকারকে দ্রুত খাদ্য এনে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে। আর কৃষককে সহায়তা দিতে আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো ২২ আগস্ট ২০১৭)
তিনি দৈনিক প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে আরো যা আশংকা করেছিলেন তা তুলে ধরা হলো-
দৈনিক প্রথম আলো : এবারের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি কতটা ছিল?

এ এম এম শওকত আলী : বন্যার আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বন্যা আসবে, এটা তো আমরা জানি। আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে, তাও অজানা নয়। কিন্তু দেখার বিষয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি কী ছিল। ২০০৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তখন দুর্যোগ মোকাবিলায় যে তহবিল গঠন করা হয়েছিল, তা কোথায় ব্যয় হয়েছে, জনগণ কি সুফল পেয়েছে, সেটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

দৈনিক প্রথম আলো : এবারের বন্যার প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে গেল কেন?
এ এম এম শওকত আলী : প্রতিবছরই কমবেশি বন্যা হয়। এ বছর দেশের এক-তৃতীয়াংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যথা শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভারতে বন্যা হয়েছে। চীনে বন্যা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা বাদে বাকি তিনটি দেশ বাংলাদেশের উজানে। সেখানে বেশি বৃষ্টি হলে তার প্রভাব এখানে পড়বে। নিকট অতীতের কোনো বন্যায় শহরে পানি ঢোকেনি। এবার শহরেও ঢুকেছে। ২৫টি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। চুয়াত্তরের ভয়াবহ বন্যায় কিন্তু সিলেট, হবিগঞ্জের মতো শহরে পানি প্রবেশ করেনি। এখানেই সরকারের নীতি-পরিকল্পনার প্রশ্ন আসে। চুয়ান্নর বন্যার পর পাকিস্তান সরকার মার্কিন সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স দিয়ে একটি জরিপ করে বন্যা মোকাবিলায় কী করণীয়, সেটি ঠিক করেছিল। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই প্রকল্প তখন সুফল দিয়েছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হবে।
বন্যা বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। এরপর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূল এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র করা হলেও বন্যা মোকাবিলায় সে রকম কিছু নেই। এটি না হওয়ার অন্যতম কারণ বন্যাপ্রবণ এলাকায় উঁচু জায়গার অভাব। সেখানে বেশির ভাগই নিচু জমি। ফলে বন্যা এলে আমরা সতর্কবাণী দিয়ে দায়িত্ব শেষ করি।

দৈনিক প্রথম আলো : তাহলে কি আপনি বলতে চান, বন্যা মোকাবিলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না?
এ এম এম শওকত আলী : মাস্টার প্ল্যানের কথা বলা হয়। কিন্তু বড় ধরনের পরিকল্পনা তো দেখি না। ১৯৮৮ সালে ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান করা হয়েছিল। সে জন্য ইনস্টিটিউশনাল স্টাডি বা প্রাতিষ্ঠানিক জরিপও করা হলো। ইউএসএআইডির সহায়তায় ইস্টার্ন ওয়াটার স্টাডি হলো। তারা বলল বন্যা হবেই, বন্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। অন্যদিকে ফরাসি বিশেষজ্ঞরা বললেন, আগাম প্রস্তুতি নিলে বন্যার ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। ওই সময় বন্যা মোকাবিলায় যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলো কতটা সুফল দিয়েছে, তারও মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক প্রথম আলো : চলতি বছর খাদ্য মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছিল। সাম্প্রতিক বন্যা কি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে মনে করেন?

এ এম এম শওকত আলী : ২০০৭-০৮ সালে আমাদের খাদ্য মজুত ধারণক্ষমতা ছিল সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। গুদামে তখন কোনোমতে ১৪ লাখ টন মজুত করা যেত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী আরও গুদাম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। আমাদের সরকারি কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয় না। কিন্তু সেটি করলে কাজ আরও সহজ হতো। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, ২৫ লাখ টন খাদ্য মজুত করা যায় এমন ব্যবস্থা করা। বর্তমানে ১৭ লাখ টন মজুত করার অবকাঠামো আছে। এ ছাড়া চাল মজুত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে।

দৈনিক প্রথম আলো : খাদ্যে স্বাবলম্বী দেশ হঠাৎ ঘাটতির দেশে পরিণত হওয়ার কারণ কী?
এ এম এম শওকত আলী : খাদ্য মজুতের দুটি ধরন-একটি বসতবাড়িতে মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য মজুত করে, আরেকটি সরকার মজুত করে আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে। প্রতিবছর ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি পূরণ হয় না। খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি বলেই ধারণা করি। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ খাদ্য উৎপাদন। আর খাদ্য মন্ত্রণালয় সেটি সংগ্রহ ও সরবরাহ করে থাকে। খাদ্য মজুত তিন লাখ টনের নিচে যাওয়াটা বিপজ্জনক, যা এবার গিয়েছে। কেননা আমদানি তো সময়সাপেক্ষ। বিদেশ থেকে চাল কিনলেই হবে না, সেটি মানসম্পন্ন হতে হবে। আবার আমদানি করা চাল যাতে ভোক্তার কাছে স্বল্প সময়ে পৌঁছানো যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দৈনিক প্রথম আলো : এবার ঘাটতির পরিমাণ কেমন হতে পারে?
এ এম এম শওকত আলী : প্রথমে অকালবন্যায় হাওরের ফসল নষ্ট হয়েছে। সেখানে বোরোর আবাদ বেশি হয়। আমন সামান্য। এরপর উত্তরাঞ্চলে বন্যায়ও অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যদি না ত্রাণসামগ্রী দুর্গত মানুষের কাছে সময়মতো পৌঁছানো যায়। তাঁদের নগদ টাকা দিলে লাভ নেই। অনেক জায়গায় চুলা জ্বালানোর ব্যবস্থা নেই। অতীতে দেখেছি, বেসরকারি সংস্থাগুলো ত্রাণকাজে এগিয়ে আসছে। এবার সে রকম কিছু দেখছি না। শুধু প্রধানমন্ত্রী বিত্তবানদের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এর সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

http://www.dailysangram.com/post/300704