২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৭

চালের দাম কমেনি

ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির পরও কমেনি চালের দাম। খুচরা বাজারে পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা কমানোর যে প্রতিশ্রিুতি দিয়েছেন তার প্রভাব বাজারে এখনো পড়েনি। রাজধানীর পাইকারি চালের আড়তগুলোতে কিছু ব্যবসায়ী প্রতি কেজি চাল ১ থেকে ২ টাকা কমে বিক্রি করলেও বেশির ভাগ পাইকারি আড়তে আগের দামেই চাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন তাদের অনেকের কাছে আগের দামের চাল রয়েছে। তাই তারা লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে নারাজ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, চালের দাম কমার কথা বলা হলেও তারা আগের দামেই চাল কিনছেন। তবে, পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দু’-একদিনের মধ্যে চালের দাম কমতে পারে। গতকাল রাজধানীর পাইকারি চালের বাজার বাবু বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। মোহাম্মদপুর কৃষিবাজারে পাইকারি আড়তে চালের দাম কিছুটা কমলেও বাবু বাজার পাইকারি আড়তে দাম এখনও কমেনি। আর কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে আগের দামেই চাল বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কাওরানবাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলম জানান, প্রতিকেজি নাজিরশাইল ৭০ টাকা, মিনিকেট ৬৪ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ টাকা, বিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৫৬ টাকা দামে বিক্রি করছেন তিনি। খোরশেদ আলম বলেন, মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা কমার প্রতিশ্রুতি দিলেও এর প্রভাব বাজারে পড়েনি। আমরা আগের দামেই চাল বিক্রি করছি। তবে, দু’-একদিনের মধ্যে দাম কমতে পারে। একই বাজারের আল্লাহ্র দান রাইস এজেন্সির নাজির আহমেদ তালুকদার বিভিন্ন মানের প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৭০ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকা, গুডি ৪৮ টাকা, বিআর ২৮ ৫৫ টাকা, বিআর ২৯ ৫৮ টাকা করে বিক্রি করছেন। নাজির আহমেদ তালুকদার বলেন, মিল মালিক ও আড়তদাররা দাম কমালে আমরাও দাম কমাবো।

বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আলেক চাঁন রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন বলেন, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) নাজিরশাইল ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০ টাকা, মিনিকেট ২ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা, বিআর ২৮ ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং মোটা চাল স্বর্ণা ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি। বলেন, মিলগুলোতে দাম এখনও কমতে শুরু করেনি। আর আমরাও নতুন কোনো চাল আমদানি করিনি। তাই আগের দামে বিক্রি করছি। দু’-একদিনের মধ্যে হয়তো দাম কমতে পারে। বাবুবাজারের একাধিক পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আলাপকালে জানান, মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা চালের দাম কমানোর কথা বললেও অনেক মিলারদের কাছে আগের চাল রয়ে গেছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী আরো দাম কমার আশায় এখন কোন চাল কিনছেন না। তাছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকের কাছে আগের দামের চাল থাকায় তারা লোকসান দিতে রাজি নন। একই সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়টিও আছে। তাই চালের দাম কমতে আরো দু’-একদিন সময় লাগবে। বাবুবাজারের বসুন্ধরা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সারওয়ার বলেন, চালের বাজার আগের মতোই রয়েছে। এখনও অনেক মিলারদের গোডাউনে পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও লাভ-লোকসানের হিসাবও তাদের আছে। তাই দাম কমতে একটু সময় লাগছে। তবে, দু’-একদিনের মধ্যে দাম কমবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, নাজিরশাইল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, পারি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এখানকার পাইকারি চাল বিক্রেতা মেসার্স মিনার রাইস এজেন্সির স্বত্ব্বাধিকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানে চাল আগেই ছিল কিন্তু বেশি দাম পেয়েও বিক্রি করিনি। তাহলে দোকান খালি রেখে বসে থাকতে হবে। দাম বাড়ার পর থেকে মিল থেকে চাল দেয়নি। বুধবার মিল থেকে আটাশ চাল আসার কথা। দাম বাড়তি দিতে হচ্ছে। একই বাজারের আনিস রাইস এজেন্সির মো. আনিস বলেন, বেশির ভাগ দোকানে চাল আগের দামে কেনা। তাই ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন না। মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা লাবনী এন্টাপ্রাইজের মো. ইয়াসিন বলেন, আমাদের চাল আগের দামে কেনা। তাই পাইকারি বাজারে কমলো কি বাড়লো তা দেখছি না। এ চাল বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমরা দাম কমাতে পারবো না। মোহাম্মদপুর কৃষিবাজারে চাল কিনতে আসা গৃহিণী আমিনা বেগম মানবজমিনকে বলেন, নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৭০ টাকা করে কিনেছি। আর এই চাল কিনতে দোকানদারের সঙ্গে অনেক দর কষাকষি করতে হয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=83944