২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬

ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ চট্টগ্রামে চালের আড়ত

কোনো ঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রামে চালের আড়তগুলো প্রায়ই বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বুধবার সকালে চাল কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। এ নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে চট্টগ্রামের চালের বাজারে। চালের অতিরিক্ত মজুত ও বেশি দামে চাল বিক্রির দায়ে চট্টগ্রামের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাইয়ে বদিউর রহমান অ্যান্ড সন্সের চালের আড়তে মঙ্গলবার বিকালে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আড়তের ব্যবস্থাপক দিদারুল আলমকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদানের পর গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর চাক্তাইয়ের চালের আড়ত ও পাইকারি দোকান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালিয়ে ওই ব্যবস্থাপককে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এমনকি চাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ঠেলাগাড়ি ও ভ্যান ছড়িয়ে সড়ক অবরোধ করে। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত এ নিয়ে চাক্তাইয়ে অস্থিরতা বিরাজ করে। পরে অতিরিক্ত র্যা ব-পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ২০শে সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল থেকে নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলি বাজারের সবক’টি চালের আড়ত ও পাইকারি দোকান প্রায়ই বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকে চাল কিনতে গিয়ে ফেরত এসেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। নগরীর চকবাজারের চাল ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ বলেন, হাওরে বন্যার পর থেকে চাল সংকটের কথা বলে পর্যাপ্ত চাল সরবরাহ দিচ্ছে না মজুতদাররা। ফলে দিনের চাল দিনে নিয়ে ব্যবসা করছি। অথচ চাক্তাইয়ের প্রতিটি গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুদ আছে। তিনি বলেন, চাল সংকটের কথা বলে মজুতদাররা বেশি দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এ নিয়ে প্রশাসন নড়াচড়া করায় মজুতদারদের মাথা-ব্যথা শুরু হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চালের আড়ত বন্ধ রেখে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে মজুতদাররা। রিয়াজ উদ্দিন বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও হামলার ঘটনায় চালের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা গতকাল সকাল থেকে আড়ত ও দোকান বন্ধ রেখে চাক্তাইয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই চাল না পেয়ে ফেরত গেছে। এ কারণে চালের দাম আরোর বেড়ে যেতে পারে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল নিয়ে সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করায় এক রকম চাপা অস্থিরতা বিরাজ করছে। চালের দাম কমার কথা বললেও সেটা মোটেও ঠিক নয় বলে জানান তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, আড়তে চালের অবৈধ মজুদ গড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর প্রেক্ষিতে চাক্তাইয়ে মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি ও অতিরিক্ত চাল মজুদের অভিযোগে হাজী বদিউর রহমান অ্যান্ড সন্স নামের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দিদারুল আলমকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৩৮ ও ৪০ ধারায় তিন মাস কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তিনি জানান, এ সময় চালের অন্য আড়তগুলো বন্ধ করে দেয় আড়তদাররা। এমনকি চাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ঠেলাগাড়ি দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে অতিরিক্ত র্যা ব-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অন্য আড়তগুলোতে অভিযান না চালিয়ে আটক দিদারুল আলমকে নিয়ে ফিরে আসা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে বাধা দেয়ার দায়ে জাহিদুল ইসলাম শাওন নামের অপর একজনকে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৬ ধারায় ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চাক্তাইয়ে চালের সবক’টি আড়তের দরজা প্রায় বন্ধ। মঙ্গলবার বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় সড়কে ছড়িয়ে রাখা ঠেলা গাড়ি ও ভ্যানগুলোও সেভাবেই রয়েছে।
আড়ত বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অতি মুনাফার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযান পরিচালনা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকাল থেকে চাল ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে বৈঠক চলছে। চাল ব্যবসায়ী সমিতি ও মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত রয়েছে। এ কারণে চালের আড়ত ও পাইকারি দোকানগুলো হয়তো কেউ কেউ বন্ধ রেখেছেন। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালের আড়ত ও পাইকারি দোকান বন্ধ রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠন এখনো কোনো কর্মসূচি দেয়নি। প্রশাসনের ঢালাও অভিযান বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃতদের ছাড়া না হলে কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টিও সামনে চলে আসতে পারে। জানতে চাইলে চাক্তাইয়ে চালের অন্যতম আড়তদার ইদ্রিস অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. ইদ্রিস মুঠোফোনে বলেন, সরকারের ঘোষিত শুল্ক ছাড়াও অঘোষিত শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে হয় আমাদের। চালের বস্তাপ্রতি ১০-১৫ টাকার বেশি লাভ করা সম্ভব হয় না। কারণ ব্যবসায়ীদের মাঝেও তো প্রতিযোগিতা রয়েছে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারই সবচেয়ে বেশি দায়ী। সরকারের প্রশাসন ব্যবসায়ীদের পকেটের পয়সাও কেড়ে নেবে; আবার বিক্রয়মূল্যও বেঁধে দিবে তা তো হয় না। লোকসান দিয়ে তো কেউ ব্যবসা করবে না। ব্যবসার পরিবেশ না পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আড়তে তালা ঝুলিয়ে রাখার কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, অভিযান চালানোর আগে চালের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের আমরা সতর্ক করেছি। কিন্তু তাতে তারা কর্ণপাত করেনি। তাই অভিযান চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আবারো অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=83943