২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮

পুরোনো ইভিএম ধ্বংস করবে ইসি

পুরোনো ও অকার্যকর ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো (ইভিএম) ধ্বংস করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) অনুবিভাগ বলছে, এই ইভিএমগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। তারপরও এই ইভিএমগুলোর মধ্য থেকে যেগুলো ভালো, সেগুলো দিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ইসির কাছে এখন ১ হাজার ১০০টি ইভিএম আছে। সম্প্রতি পুরোনো ইভিএমগুলো নষ্ট করার সুপারিশ করে ইসির আইসিটি অনুবিভাগ। তারা বলেছে, বর্তমান ইভিএমগুলো ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন মেমোরি আলাদা করে সংরক্ষণের সুযোগ নেই, দেশি ব্যাটারি ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয়, নির্বাচনের সময় ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়, ব্যালট ইউনিট সুরক্ষিতভাবে সিল করার ব্যবস্থা না থাকায় ব্যালট পেপার পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।
আইসিটি অনুবিভাগের সুপারিশে বলা হয়, ‘বর্তমান ইভিএমগুলো ফিনিশড প্রোডাক্ট নয় এবং এগুলো ছয় বছরের বেশি পুরোনো হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সময় সৃষ্ট কারিগরি ত্রুটিগুলোর সমাধান করা হয়নি। ভবিষ্যতে এসব ইভিএম ব্যবহারে কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে তার সমাধান করা কঠিন হতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বিধায় ইভিএমগুলো অকার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
গত মঙ্গলবার ইসির বৈঠকে এই সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ইসির যে ইভিএমগুলো আছে, সেগুলো বেশ পুরোনো। এগুলো নষ্ট করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে আলাদা কমিটি করা হবে। কমিটি যে যন্ত্রগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মত দেবে, সেগুলো ‘ডিসপোজাল’ করা হবে। আর যেগুলো ভালো থাকবে, সেগুলোর মধ্য থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।

* ইসির আইসিটি অনুবিভাগ বলছে, এই ইভিএমগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। তারপরও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে
* ২০১০ ও ২০১১ সালে বুয়েটের কাছ থেকে ১১০০ ইভিএম সেট কেনা হয়। এতে ইসির খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা
ইসির একটি সূত্র জানায়, পুরোনো ইভিএমগুলো নষ্ট করা হলেও নতুন করে এ ধরনের আরও কার্যকর যন্ত্র ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) তৈরি করছে ইসি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরোদমে ইভিএম বা এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার করার চিন্তা এখনো করছে না ইসি।
নির্বাচনে এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধী। তাদের দাবি, এই যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপি ও ফল পাল্টানো সহজ। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে একটি চুক্তির আওতায় ৪০০ ইভিএম সেট কিনেছিল ইসি। পরের বছর আরেকটি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ৭০০ ইভিএম সেট নিয়েছিল ইসি। এসব ইভিএমের পেছনে ইসির প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।

২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি ওয়ার্ডে এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নয়টি ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচন, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি করে ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল।

এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে একটি ইভিএমে ৪৭টি ভোট নেওয়ার পর কন্ট্রোল ইউনিট অকার্যকর হয়ে যায়। নরসিংদী পৌর নির্বাচনে একটি ইভিএমের ফলাফল বের করা যায়নি। ২০১৩ সালে এলেঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে একটি ইভিএমে ৯০টি ভোট নেওয়ার পর কন্ট্রোল ইউনিট অকার্যকর হয়ে যায়। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ইউনিটের ডিসপ্লে সমস্যা দেখা দেয় এবং আরেকটি ইউনিটে ৩১০ ভোট নেওয়ার পর তা অকার্যকর হয়ে যায়। তাই ভোট গণনা করা যায়নি। আর সিলেটে একটি কন্ট্রোল ইউনিটে একটি ভোট কম দেখিয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুয়েট বলেছিল, দেশি ব্যাটারি ব্যবহারের কারণেই ইভিএমগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। বুয়েট থেকে নেওয়া ইভিএমে দেশি ব্যাটারি ব্যবহার করা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে বুয়েট ও কমিশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ কারণে তারা ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম মেরামতে আগ্রহ দেখায়নি।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1328466