২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:২০

তিন বছরের সেতু নির্মাণ ১১ বছরে দাঁড়াল

ছয়বার মেয়াদ বৃদ্ধি; ব্যয় বাড়ল ২২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা; সাত বছরে ব্যয় হয়েছে ২৯.৬৩ শতাংশ; অনুমোদনের ৬ বছর পর ঠিকাদারের সাথে চুক্তি

বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্পগুলো চলছে ধীরগতিতে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো শেষ হচ্ছে না। দাতাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিলম্বিত সিদ্ধান্তের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়, যার চাপ পড়ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নের ওপর। তিন বছর দুই মাসে শেষ করার কথা ছিল সৌদি ফান্ডে বাস্তবায়নাধীন নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণকাজ; এখন তা ১১ বছরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ শুরু করতে না পারায় ব্যয় বাড়ছে প্রায় ২২৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের ছয় বছর পর ঠিকাদারের সাথে চুক্তি হয়। সম্প্রতি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে এক পর্যালোচনায় এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পিইসি সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের সাথে বন্দর থানার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে ২২ মিটার প্রশস্ত দুই লেনবিশিষ্ট এ সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সৌদি ঋণসহায়তায় শীতল্যা নদীর ওপর ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি গত ২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু গত সাত বছরে সেতুর কাজ শুরুই করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা সওজ। ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও ঠিকাদার বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ছয় বছর পর। তারা সেতুর নির্মাণের জন্য পূর্ত কাজ শুরু করে।

পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে পূর্ত কাজে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ১৭৩ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাত বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হলো ১৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে সওজর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে ৩২.৮৭ শতাংশ বা প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা। এরপর ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আবার ডিসেম্বর ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে। এ মেয়াদে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পরে আবার জুন ২০১৭ মেয়াদে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। চতুর্থ ধাপে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এখন পঞ্চম ধাপে জুন ২০২১ সাল নাগাদ সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ৩৩৭ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

আইএমইডির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কনস্ট্রাকশন অব সাইট অফিস অ্যান্ড ল্যাব খাতে ৬৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা নির্ধারিত থাকলেও এখন সেটা ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। কনস্ট্রাকশন অব অ্যাপ্রোচ রোডের ব্যয় ছিল ২৫ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এটি এখন দাঁড়াচ্ছে ৮৩ কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার টাকায়। কনস্ট্রাকশন অব ব্রিজ অঙ্গে ব্যয় বলা হয়েছিল ২৪১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, কিন্তু এখন সেটা দাঁড়াচ্ছে ৩৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সব ক্ষেত্রে ব্যয় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয়ও দ্বিগুণ করে ১৭ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিদেশী পরামর্শক খাতে ব্যয় এখন আট কোটি ৮০ লাখ টাকা, দেশী পরামর্শক ব্যয় তিন কোটি ৩৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
আইএমইডি সূত্র বলছে, প্রকল্পটি সাত বছর ধরেই ধীরগতি চলছে। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এর আগে চারবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প সংশোধন না করে শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগেই আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব সিসিজিপিতে (সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি) পাঠানোর আগে ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। এটি না করে আবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক এম শামসুল হকের সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদনের সময় বেশি লেগে যাওয়ায় এ সমস্যা। যে ঠিকাদার সর্বনি¤œ দরদাতা হয়ে প্রিকোয়ালিফাই করল, দাতাগোষ্ঠী আপত্তি জানিয়ে বলল ওই প্রতিষ্ঠান তাদের কোনো এক প্রকল্পে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। ফলে তাকে নেয়া যাবে না। তখন দ্বিতীয় দরদাতাকে বলা হলো। আর এসব করতে গিয়ে ঠিকাদারের সাথে চুক্তিতে সময় লাগল ছয় বছরের বেশি। এখন চীনের সিনো হাইড্রো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, ঠিকমতো অর্থগুলো ছাড় করে তাহলে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253462