২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৯

৯ লাখ টনের চুক্তি হলেও চাল এসেছে ২ লাখ টন

নভেম্বরে আসবে বাকিটা

দেশের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় দেশের বাইরে থেকে আরো চাল কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকার চাচ্ছে আগামী নভেম্বরের মধ্যে ৯ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এ জন্য জি-টু-জি (সরকার-টু-সরকার) ভিত্তিতে চুক্তিও করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাল এসেছে দুই লাখ টন। দেড় লাখ টন চাল রফতানিকারক দেশ থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বাকি সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল নভেম্বর নাগাদ আমদানি করা হবে। এই আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন, খাদ্য সচিব মোহাম্মদ কায়কোবাদ হোসাইন।

গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
জি-টু-জি পদ্ধতিতে আমদানি হলে দাম বেশি হয় কিন্তু আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে চাল এলে দাম কম হয় কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি চাল আমদানি করে দেয়ার চুক্তি করেও পরে আমদানি করে না। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু জি-টু-জি-তে চুক্তি হলে আমদানি কনফার্ম এবং অবশ্যই চালের মান ভালো হয়।

গতকাল ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে আরো ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ব্যয় হবে ১৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
জানা গেছে, চলতি বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে ফসলি জমি ব্যাপক তির মুখে পড়েছে। উৎপাদন ল্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ায় সরকারের ধান, চাল ও গম সংগ্রহ ব্যর্থ হয়।

এই বাস্তবতায় খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন চাল ও পাঁচ লাখ টন গম।
অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্যাকেজ-৪ এর আওতায় ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির একটি ক্রয়প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে এ চাল আমদানি করা হবে। থাইল্যান্ডভিত্তিক মেসার্স সিয়াম ট্রেডিং এ চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টনের দাম ৪৩৮ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এলসি খোলার ৪০ দিনের মধ্যে এ চাল দেশে আসবে।

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার জেলার বাঁকখালি নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, বাঁধ সুরক্ষা, খাল পুনঃখননসহ বিভিন্ন কাজ সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের একটি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বৈঠকে ময়মনসিংহে বেসরকারি খাতে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একটি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, হাইস্পিড ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ দশমিক ৪১৬৬ টাকা। এ হিসাবে ১৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি।
তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৩ হাজার ২১১টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৭০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253448