২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩

মাত্র ১ মি.মি. বৃষ্টিতেই পানির নিচে রাজধানীর অলিগলি!

লঘুচাপের প্রভাবে শরতের এই প্রকৃতিতেও চলছে পুরোদমে বর্ষার মেজাজ। আকাশে কালো মেঘের রাশি। মেঘগুলো জমাট বেঁধে ঘন হলেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে। গতকাল বুধবার আশ্বিনের পঞ্চম দিন সকালে আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীর অলিগলি তলিয়ে গেছে। অবশ্য তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

তথ্য-বিতর্কের সমাধান খুঁজতে আবহাওয়া অধিদফতরের শরনাপন্ন হলে দৈনিক সংগ্রামকে জানানো হয়, রাজধানীতে কেবল অধিদফতরের সদর দফতর আগারগাঁওয়ে স্থাপিত রেইনগেজ যন্ত্রের ওপর বর্ষিত বৃষ্টির হিসাবটাই তারা দিয়ে থাকে। এর বাইরে মহাপ্লাবন হলেও তা পরিমাপের ব্যবস্থা ও এখতিয়ার তাদের নেই। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানালেন, বাস্তবসঙ্গত কয়েকটি কারণেই বৃষ্টিপাতের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তবে সে কারণগুলো কি তা জানাননি। একই সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের জ্ঞানের স্বল্পতাহেতু মিসরিপোর্টিং হয় বলেও তিনি আক্ষেপের সাথে জানান।
এদিকে, এদিন সারাদেশেই কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় কয়েক দিন ধরে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। এ অবস্থা আরো দুই দিন থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান আরো জানান, লঘুচাপের কারণে আবহাওয়ার এ বৈরী অবস্থা। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১২ ঘন্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ছয় ঘন্টায় বিভাগীয় রেকর্ড অনুযায়ী বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর অলিগলি।
নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও দীর্ঘ পানিজটের সৃষ্টি হয়। পানিজটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে যানজটও। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে অন্যান্য দিনের বৃষ্টির মতো সকালের বৃষ্টিতেও ঢাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষকে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোণায়। এ সময় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৪২ মিলিমিটার। এছাড়া একই সময়ে মাদারীপুরে ৩৩ মিলিমিটার, চাঁদপুরে ২৬, মাইজদীকোর্টে ৫১, কক্সবাজারে ৫৩, কুতুবদিয়া ৪৩, টেকনাফ ৩৯, সিলেট ৪১, ঈশ্রদী ২৪, দিনাজপুর ৩১, তেতুলিয়া ৩২ ও সাতক্ষীরায় ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকডর্য করা হয়েছে।

এদিকে, গতকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর খিলক্ষেত, বনশ্রী, রামপুরা, রামপুরা, খিলগাঁও, বাসাবো, মতিঝিল, সদরঘাট, ইসলামপুর,নয়াবাজার, মিটফোর্ড এলাকা, নাজিরা বাজার, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বংশাল, ধোলাইখাল, ওয়ারী, যোগীনগর, বনগ্রাম লেন, গোপীবাগ, টিকাটুলী, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, জুরাইন, বাবু বাজার, তেজতুরী বাজার, গ্রিন রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে সকালে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। স্কুলগামী শিশু ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ছিল বেশি। যানজটও বাড়ে। অনেক বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।

অবশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বলছে বৃষ্টির পরপরই তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাসহ সংস্থার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম মাঠে নেমে পড়ে। যদিও তাদের কোনও কর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন,‘বৃষ্টি হবেই। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে গঠিত ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম মাঠে নেমে পড়েছে। আজও নেমে পড়েছে। আজ কোথাও মারাত্মক জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে পানি নেমে গেছে।
তবে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন খিলক্ষেত এলাকার রাস্তাঘাট গতকালও সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায়। গত কয়েকদিনের থেমে থেমে নামা বৃষ্টিতে রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোর পানি নেমে গেলেও খিলক্ষেত এলাকার রাস্তাঘাট থেকে মোটেও পানি সরেনি।

লেকসিটি এলাকার বাসিন্দা আরিফ আহমেদ অভিযোগ করেন, এই এলাকার খিলক্ষেত বাজার থেকে লেকসিটি পর্যন্ত সড়কটি ভেঙেচুরে এমনই দুর্দশাগ্রস্ত যে স্বাভাবিক সময়েই চলাচল কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আর একটু বৃষ্টি হলেই বটতলা জায়গাটি পানির নিচে ডুবে যায়। ওই জায়গাটি এমনই এবড়ো খেবড়ো যে সেখানে যখন তখন যাত্রীবাহী রিকশা ও অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও বাজার থেকে উত্তরপাড়াগামী সড়কের মেয়রের মোহাম্মদী গার্মেন্টের সামনেও সামান্য বৃষ্টিতে মারাত্মক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা এখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পানিবদ্ধতার কারণে সৃষ্টি হয় মারাত্মক যানজট।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী ডেমরা রোডে গিয়ে দেখা গেছে সড়কে কাদা পানির পাশাপাশি তীব্র যানজট। একদিকে সড়কের বেহাল দশা, অন্যদিকে বৃষ্টি। যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে বাসের মধ্যে অবস্থানরত সাধারণ যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও যানবাহনে গতি ফিরছে না।

এদিকে ঢাকা ওয়াসার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর প্রাকৃতিক পানি ধারণের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টির পানি ধারণের ক্ষমতা নগরীর নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে ভরসা না দিয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, পানিবদ্ধতা মোকাবিলায় ঢাকা ওয়াসা একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নগরীতে পানিবদ্ধতা আর থাকবে না। তবে এ জন্য ঢাকার অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকেও একযোগে কাজ করতে হবে।

এদিকে সিটি নির্বাচনের পর ঢাকার দুই মেয়র বলেছিলেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে তারা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। নগরীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও আর পানিবদ্ধতা দেখা দেবে না। তবে মেয়েদের সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছে না নগরবাসী।
অন্যদিকে, আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘমালা আসছে দেশের উপকূলের দিকে। উত্তাল ঢেউ উঠছে দেশের নদ-নদীগুলোয়। গত রোববার থেকে এই অবস্থা রয়েছে সাগর, নদী আর আকাশে। আর এ কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো ৩ নম্বর সতর্কতাসংকেত এবং নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতাসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতাসংকেত দেখিয়ে যেতে হবে।

http://www.dailysangram.com/post/300510