২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১২

আশ্রয় শিবির ও খোলা আকাশের নীচে শরণার্থীদের দুর্গতির শেষ নেই

কামাল হোসেন আজাদ, কক্সবাজার: মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও মগসেনাদের বর্বরতা নিত্য ঘটনা হয়ে উঠেছে। অব্যাহত রয়েছে মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতনসহ হত্যাজজ্ঞ। আরাকান রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় নতুন করে বাড়িঘরগুলোতে অগ্নিসংযোগ করছে এসব দুস্কৃতিককারীরা। প্রধান টার্গেট কিশোরীদের ধর্ষণ ও নারীদের হত্যা করে পুরুষ শূণ্য গ্রাম দখলে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করা। এসব দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সহিংসতা থেকে কোনভাবেই থামছে না তারা। রাখাইনদের অব্যাহত সহিংসতা হতে নিস্তার পেতে প্রতিদিন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান।
পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে বলে দাবি পরিসংখ্যান সংশ্লিষ্টদের। বৃষ্টির কারণে উখিয়া-টেকনাফে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বর্তমানে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শনিবার রাত থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আর খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে এসব নারী-পুরুষ ও শিশুসহ আরাকানের মুসলিম বাসিন্দারা। বৃষ্টির কারণে পানি হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে অভুক্তই থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে ভিজে বিশেষতঃ শিশুর বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টিপাতে রোহিঙ্গা ঝুপড়িগুলো সবকিছুই ভিজে এবং কাদামাটিতে লেপ্টে গিয়ে একাকার হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা প্রবেশ বন্ধ নেই। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সীমান্ত পথের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। দলে দলে ঢুকে পড়ছে শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে।
আগত রোহিঙ্গারা জানান সহায়-সম্বল ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৃত্যু, আতংক, গুলী, জবাই, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ বিভিষিকার মুখে মাইলের পর মাইল হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছতে পেরে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। কিন্তু দুর্গতি যেন আমাদের পিছু ছাড়ছেনা। এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। অর্ধাহারে অনাহারে সকলেরই কাহিল অবস্থা। তার উপর গত কয়েক দিন ধরে টেকনাফ ও উখিয়ায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিশেষ করে নারী শিশু ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। যারা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তারাও শান্তিতে নেই। বৃষ্টিতে ঝুপড়ি ঘরের সব কিছু ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। পাহাড়ের আঠালো কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায় সব কিছু। এমনকি ঘরে থাকা কাপড়-চোপড়, বিছানাসহ সব কিছু ভিজে কাদামাটিতে লেপ্টে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ বলেন ‘বহু মানুষ মিয়ানমার থেকে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত অবস্থায় সহায়সম্বল ছাড়াই এসে পৌঁছাচ্ছে। এত বেশি সংখ্যক আশ্রয় নিয়েছে সবার খাদ্য, আশ্রয়, খাবার পানি ও মৌলিক পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। পরিবারগুলো তাদের মৌলিক চাহিদাটুকু পূরণ করতে না পারলে দুর্ভোগ আরও অনেক বাড়বে এবং এতে প্রাণহানি ঘটারও আশংকা রয়েছে’।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সুমন বড়–য়া বলেন ‘অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মেডিকেল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করা হয়েছে। শিশুদের জন্য বিশেষ ইপিআই কর্মসূচির অধীনে ইপিআই এবং মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া একদিন থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় আনাসহ শিশুদের হাম-রুবেলা টিকা প্রদান এবং পোলিও টিকা দেওয়া হচ্ছে।

http://www.dailysangram.com/post/300518