২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৭

সুচির সম্মাননা কেড়ে নিল ব্রিটিশ সংগঠন

আরও বহু পুরস্কার বাতিলের উদ্যোগ * মিয়ানমার সেনাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাতিল

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দেশটির নেতা অং সান সুচিকে দেয়া পুরস্কার ও সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ দাবিতে সাড়া দিয়ে যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ একটি ট্রেড ইউনিয়ন তাকে দেয়া সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ সরকার মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে যে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল তাও বাতিল করেছে।

সুচির নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও জোরালো হয়েছে। কানাডায় তাকে দেয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্বও বাতিল করার দাবি উঠেছে।
যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন পুরস্কার বাতিলের পাশাপাশি এক ঘোষণায় বলেছে, সুচিকে দেয়া সম্মানসূচক সদস্যপদও বাতিল করছে তারা। এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশা লাঘবে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেয় সংগঠনটি।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সময় গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচারের পুরস্কার হিসেবে সুচিকে বেশ কিছু সম্মাননা দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন তারা একযোগে সেগুলো পর্যালোচনা বা বাতিলের কথা ভাবছে। ঠিক সে সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা এলো।

ট্রেড ইউনিসনের প্রেসিডেন্ট মার্গারেট ম্যাককি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ভয়াবহ অবস্থায় আছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো ভূমিকা না রাখায় সুচির সম্মানসূচক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। আমরা আশা করি, তিনি আন্তর্জাতিক চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাবেন।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও জাতিগত নিধনের কারণে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারে এক সময়কার বিরোধী দলে থাকা সুচিকে দেয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অব্যাহত উদ্বেগের সঙ্গে একাত্ম বিশ্ববিদ্যালয়টি।’ গত ৩০ বছর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, বাথ ও কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সম্মাননা পেয়েছেন অং সান সুচি। পাশাপাশি কয়েকটি শহর ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
সুচি গৃহবন্দি হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১২ সালে। অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে মিয়ানমারের এই নেত্রীকে যে ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল, তা এখন প্রত্যাহার করার কথা ভাবছেন কাউন্সিলররা। অক্সফোর্ড কাউন্সিলের সদস্য জন ট্যানার অক্সফোর্ড মেইলকে বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তাহলে কাউন্সিলররা ওই সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থগিত : ব্রিটিশ সরকার বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তারা স্থগিত করেছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর অব্যাহত সহিংসতার মধ্যে ব্রিটেনের কাছ থেকে এ ঘোষণা এলো। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রতি বছরই আয়োজন করা হতো। এজন্য ব্রিটেনের খরচ হয় বছরে তিন লাখ পাউন্ড।
এ কর্মসূচির আওতায় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিয়ানমার সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে। ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সহিংসতা এবং তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্রিটেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ সংকটের গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।
ব্রিটিশ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে বেসামরিক সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। সেখানে যাতে মানবিক ত্রাণ সাহায্য যেতে পারে তার জন্যও সেনাবাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
কানাডার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় কানাডার সরকারকে আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির নাগরিকরা। তারা গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার কানাডার রাজধানী অটোয়াতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

নোবেল পুরস্কার বাতিলের দাবি : সুচিকে দেয়া নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও উঠেছে বেশ জোরেশোরেই। মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল জিতেন অং সান সুচি। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ থামাতে ভূমিকা না রাখায় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কারটি ফিরিয়ে নিতে নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে আবেদন করেছেন চার লাখ লোক। তবে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি বলেছে, এ পুরস্কার বাতিলের কোনো নজির নেই।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/09/21/157208