২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৯

কাজ না করে পুরো টাকা উত্তোলন

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শৌলকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজের মাত্র ২০ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ টাকার চূড়ান্ত বিল তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঠিকাদারের নাম মো. আফজাল হোসেন। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) একটি মিলনায়তন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু না করেই আড়াই কোটি টাকা বিল উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় প্রথম আলোতে ১৩ সেপ্টেম্বর ‘গৌরনদীতে আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু না করেই আড়াই কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেন’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই তাঁর বিরুদ্ধে নতুন এই অভিযোগ উঠল।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শৌলকর গ্রামে ১৯৭৬ সালে শৌলকর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৯ সালে এলজিইডি টিনের ঘর ভেঙে সেখানে তিন কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করে। গত বছর বিদ্যালয়টির সরকারীকরণ হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় দেড় শ শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনটি কক্ষের একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকি দুটি কক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকেরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-থ্রি (পিইডিপি-৩) প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টির একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালের মার্চে দরপত্র আহ্বান করা হয়। মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক আফজাল হোসেনকে একই বছরের ২৩ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪৯ লাখ ১ হাজার টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছরের ২২ এপ্রিল শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ লাল হালদার বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদার যথা সময়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেন। ২০ শতাংশ কাজ করার পর চলতি বিল তোলেন এবং কাজ বন্ধ রাখেন। তা আর শুরু করা হয়নি। নির্মাণকাজ বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ তিনটি কক্ষের একটিতে ঠিকাদার নির্মাণসামগ্রী রেখেছেন। আর দুটি কক্ষ পাঠদান ও লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখার বিষয়টি বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। সর্বশেষ ৭ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমা রানী নাথ বলেন, ‘আমি বহুবার অফিসে ধরনা দিয়ে ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদার আফজাল হোসেন তিন মাস আগে প্রকল্পটির চূড়ান্ত বিল তুলে নিয়ে গেছেন। বাস্তবে শতকরা ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল বারেক বলেন, ঠিকাদার আফজাল হোসেনকে ৪৯ লাখ ১ হাজার টাকার চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে।
ঠিকাদার আফজাল হোসেন বলেন, ‘মালামাল পরিবহনে সমস্যা থাকায় কাজটি করতে বিলম্ব হয়। দুই-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করব। আমি এখনো এ কাজের চূড়ান্ত বিল নিইনি।’
প্রকল্প তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়েছে, এটিই সঠিক কথা। কীভাবে দেওয়া হয়েছে, এর উত্তর আমার কাছে নাই। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন।’
তবে উপজেলা প্রকৌশলী ফজল আহম্মেদ বলেন, ‘ঠিকাদারকে কোনো বিল প্রদান করা হয়নি। শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1327886