২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৪

সব ইভিএম নষ্টের সিদ্ধান্ত ইসির

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে থাকা সব ইলেকট্রুনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইসির ১১শ’ ইভিএম নষ্ট করতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে এসব মেশিন কোন প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। মঙ্গলবার কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির কর্মকর্তারা জানান, এ সিদ্ধান্তের ফলে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে চালু হওয়া ইভিএম অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না হওয়ার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গেল। তবে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে কমিশন। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আরও জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্টকার্ড প্রকল্প বন্ধ হতে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১ হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে ওই বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় সব ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। চলমান স্মার্টকার্ড প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক নাকচ করে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এ সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। তবে কমিশন সভা শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং করেননি। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ইসির ইভিএমগুলো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ইভিএম অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। তাই কমিশন একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কী প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্মার্টকার্ড প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। তাই নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আমরা সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে চাই। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইভিএম নিয়ে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের আপত্তি রয়েছে। ইসির সঙ্গে চলমান সংলাপে বেশিরভাগ দল ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। যদিও আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রয়েছে। এছাড়া ড. হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়ে কেনা ইভিএম ছয় বছরের বেশি পুরনো হয়ে গেছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ায় বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন তা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিল।

বর্তমান সিইসি কেএম নুরুল হুদার কমিশনও ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে এ কমিশন নতুন প্রযুক্তির ডিভিএম ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে। ইতিমধ্যে নতুন ডিভিএম নিয়ে বৈঠকও করেছে কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম নষ্টের সিদ্ধান্ত নিল কমিশন।
কমিশন সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, ওই সব ইভিএম সামনের কোনো নির্বাচন ব্যবহার না করার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ওই সব যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইভিএম নষ্টের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান ইভিএমগুলো ফিনিশড প্রোডাক্ট নয় এবং এগুলো ছয় বছরের বেশি পুরনো হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা নেই। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সময় সৃষ্ট কারিগরি ত্রুটিগুলো সমাধান করা হয়নি। ভবিষ্যতে ইভিএম ব্যবহারে কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে তা সমাধান করা দুরূহ হতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বিধায় ইভিএমগুলো অকার্যকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, কমবেশি ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই দফায় ১ হাজার ১০০টি ইভিএম কিনেছিল ড. হুদার কমিশন। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। পরে নায়ায়ণগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ডে, নরসিংদী পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পুরো নির্বাচন ইভিএমে করা হয়। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন রাজশাহী ও রংপুরে ছোট পরিসরে ইভিএম ব?্যবহার করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ডিভিএম ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। কমিশনে এর প্রদর্শনীও হয়। পাশাপাশি একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করে দেয়।

সরকারি অর্থায়নে নতুন স্মার্টকার্ড প্রকল্প : চলমান স্মার্টকার্ড প্রকল্প ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্স একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়াতে ইসির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে ইসিকে। এ অবস্থায় ১ হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে কমিশন। মঙ্গলবার কমিশন সভায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম নতুন প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় আইডিইএ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ কোটির অধিক ভোটারের তথ্য সংবলিত তথ্যভাণ্ডার রক্ষণাবেক্ষণ, তথ্য হালনাগাদকরণ, পরিমার্জনসহ নির্ভুল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে ২৫ লাখ নতুন ভোটারের তথ্য হালনাগাদকরণ চলছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু আগামী ৩১ ডিসেম্বর আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এমতাবস্থায় আইডিইএ প্রকল্পের কর্মরত দক্ষ জনবলের অনুপস্থিতিতে এনআইডি’র স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হালনাগাদ শেষ করে ভোটার তালিকা প্রকাশ করাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হবে। এতে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠুভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন বাধাগ্রস্ত হবে বলে প্রতীয়মান হয়। সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আইডিইএ প্রকল্পের দক্ষ জনবলকে সম্পৃক্ত করে একটি খসড়া প্রকল্পের ডিপিসি প্রস্তুত করা হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় মোট ১ হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যোগ্য সব নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ, ডাটাবেজ হালনাগাদকরণ, নিবন্ধিত এবং নিবন্ধনযোগ্য নাগরিকদের দশ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ গ্রহণের মাধ্যমে ডাটাবেজ শক্তিশালীকরণসহ অনেক উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের জনবল দেখানো হয়েছে ২ হাজার ২৪ জন।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/09/20/156929