২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:২৬

এনসিটিবিতে তোলপাড় দফায় দফায় বৈঠক

বিনামূল্যের পাঠ্যবই সরবরাহকারীদের ধর্মঘট অব্যাহত

আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০১৮) জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই মুদ্রণ-বাঁধাই-সরবরাহ গতকাল বন্ধ ছিল। বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহকারীদের আহূত ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে দুই শতাধিক ছাপাখানায় আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন বইয়ের ছাপাসহ সব কাজ এ দিন বন্ধ থাকে। গতকাল সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। টেন্ডারের শর্তানুসারে কার্যাদেশ দেয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ডাকা ধর্মঘট আজও তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা।
আকস্মিক ধর্মঘটের কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এ গতকাল দিনভর কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। চেয়ারম্যানসহ এনসিটিবির সব সদস্য দফায় দফায় বৈঠক করেন। জানা গেছে, এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ (কারিকুলাম) মুদ্রণ শিল্প সমিতির শীর্ষ নেতাদের সাথে একাধিক দফায় কথা বলেছেন। তবে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিল্প সমিতির সভাপতি নয়া দিগন্তকে বলেন, কোনো ধরনের অনুরোধ নয়, আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্যথায় ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
ধর্মঘটের কারণে আগামী বছরের বিনামূল্যে পাঠ্যবই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে সংশয় আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দাবি আদায় এবং টেন্ডারের শর্তমত কাজ না দেয়া হলে বই ছাপার কাজ বন্ধ থাকবে। তারা বলেন, এনসিটিবি নিজের দেয়া শর্ত মানছে না। অথচ আমাদের ওপর একের পর এক শর্তারোপ করছে।

এ দিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবজানায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্সেস (ওইআর) সম্মেলনে যোগদান শেষে আগামীকাল ঢাকা ফিরছেন। তিনি দেশে ফেরার পরই দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার আদেশ কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-র কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ। তারাই দেশীয় মুদ্রণ শিল্প ও দেশীয় মুদ্রণকারীদের ব্যর্থ করে দিতেই ষড়যন্ত্র করছেন। তাই নানা শর্তারোপ করে দেশীয় মুদ্রণকারীরা যে সময়মতো বই সরবরাহ করতে না পারে, সে জন্য নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছেন।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তক সরবরাহকারীদের সাথে অসৎ আচরণ করছেন। তিনি দাবি করেন, তাদের ধর্মঘট ও আন্দোলন রাষ্ট্রের পক্ষে। বরং এনসিটিবির কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যক্তি স্বার্থে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছেন।

এ দিকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সমস্যা কোথায় তা বোঝার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বই সরবরাহকারীদের সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। বই সময়মতো না দিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে টেন্ডারের শর্ত মোতাবেক সময়মতোই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অযৌক্তিক দাবি তুলে মুদ্রণকারীরা ধর্মঘট করছেন। মুদ্রণকারীরা বেআইনি দাবি ও শর্ত দিচ্ছেন। সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) অনুযায়ী তা মানা যায় না। তারপরও তা বিবেচনার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার বিনামূল্যে বই বিতরণের জন্য সরকার পাঁচটি টেন্ডারে ভাগ করে ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ২০৭টি বই মুদ্রণ কাজ চলছে। মাধ্যমিকের পাঠ্যবই বিশেষ করে পরিমার্জিত বইগুলোর কোনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। এ বইগুলোই মূল পাঠ্যবই।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253238