পানিমগ্ন আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবন
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:১৭

বর্বর মিয়ানমার সেনাদের নৃশংসতা চলছেই ॥ নানা সংকট শরণার্থীদের

কামাল হোসেন আজাদ ও শাহনেওয়াজ জিল্লু, কক্সবাজার : গত ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বর্মী সেনা বর্বরতা এখনো থাকেমি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও নিন্দাকে অনেকটাই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে সেদেশের সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর দমন পীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে। প্রতিদিন জ্বলছে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় রোহিঙ্গারা।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, গত রোববার ও সোমবার মংডুর নন্দাখালী গ্রামের রোহিঙ্গা বসতি জ্বালিয়ে দিয়েছে সৈন্যরা। এছাড়া বলিবাজারের রোহিঙ্গা দোকানীদের দোকান লুটপাট করার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে বলিগ্রামের রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ করা হলে তারা কয়েকদিন পূর্বে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের একজনের নিকট হতে একটি ছবি পাওয়া যায়। যা তিনি বর্ণনা করেন নন্দাখালী রোহিঙ্গা গ্রাম হিসেবে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গ্রামটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তা জ্বলছে। দূর থেকে সংবাদদাতা ছবিটি ধারণ করে।

বুথিদং থেকে একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, উপজেলার বুজরাংশংয়ে সামরিক বাহিনী দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে। তাদেরকে থানা হাজতে নৃশংস নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আকিয়াব থেকে একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, আরাকানের ঐতিহাসিক রাজধানীর আকিয়াবে রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে টহল জোরদার করেছে মগ বাহিনী। নিয়মিত অভিযান ও তল্লাসীর নামে রোহিঙ্গাদের হয়রানি করছে। সেনা প্রধানের প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী বক্তব্যে পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে রাখাইনরা। যেকোন মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের উপর হামলা করতে পারে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ব্রোকের চেয়ারম্যান মিস্টার থুন কিং আশ্রিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তদের শান্তনা দিতে বাংলাদেশ সফর করেছেন। নাফ নদীর তীরে দাড়িয়ে তিনি দেখতে পান বার্মার উপকূলীয় রোহিঙ্গা গ্রাম পেরামপুরু আগুনে জ্বলছে এবং সেসময় অনেক রোহিঙ্গা তাদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা জানান, সেনা ও রাখাইনরা সম্মিলিতভাবে গ্রামগুলোতে আগুন দিয়েছে। ধাওয়া করেছে রোহিঙ্গাদের এবং রোহিঙ্গা নারীদের সম্ভ্রম লুট করছে।

উল্লেখ্য, ২৪ আগস্টের পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে প্রায় ৫ লাখ। মগসেনারা অগণিত রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে। পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বসতবাড়ি এবং শতাধিক মসজিদে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে মগ দুর্বৃত্তরা।

এদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহায়তা করতে আসা আব্দুল্লাহ সাজিদ জানিয়েছেন, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা এখন যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন এবং হচ্ছেন এগুলো নিয়ে ভাবা উচিৎ। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির আশঙ্কা। স্যানিটারি সংকটের কারণে রোগ বালাই বেড়ে যাওয়া। ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়াসহ নানাবিধ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনীয় বস্ত্রের অভাবে মহিলাদের যাতায়াতের সমস্যা। খাদ্যাভাবে পারস্পরিক ঝগড়া ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। ক্যাম্পগুলো বন্যপ্রাণি বিচরণের ক্ষেত্র এবং চলাচলের রাস্তা হওয়ার কারণে হাতি শিয়ালের মত হিংস্র জন্তু জানোয়ারের আক্রমণের শিকার। মশার কামড়ে রোগাক্রান্ত হওয়া। নতুন রোহিঙ্গা পুরাতন রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় লম্পট কর্তৃক রোহিঙ্গা যুবতী এবং সুন্দরী নারীদের সম্ভ্রমহানির শিকার হতে পারেন। অলস এবং বেকার যুবক কর্তৃক চুরি ছিনতাই রাহাজানিসহ আরোও নানাবিধ অনিয়ম অপরাধ সংগঠনের আশঙ্কা। বিদেশী বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক অশিক্ষা কুশিক্ষায় প্রভাবিত হওয়া এবং মানসিকভাবে আক্রান্ত হওয়া। চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল হওয়ায় রোগাগ্রস্ত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা।

ইতিমধ্যে বন্যহাতির আক্রমণে উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে ৭ রোহিঙ্গা হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তৎমধ্যে দুজন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, শামশুল আলম (৫৫) ও তার দু’বছর বয়সী ছেলে ছৈয়দুল আমিন। নিহতরা সম্পর্কে পিতা-পুত্র। গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।

http://www.dailysangram.com/post/300345