২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:৫২

ছেলের কাঁধে চড়ে এসেছেন গুলিবিদ্ধ আরবা খাতুন

আমি আরবা খাতুন, বয়স ৫০ বছর। এই সহিংসতার আগে আমাদের জীবন সুন্দর ছিল। গৃহপালিত পশু ছিল। ধান ও নারকেলসহ অনেক ফসল পেতাম আমরা। সব কিছু মিলে ভালোই চলত জীবন। ১৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। এর পর থেকে আমি ছেলের সংসারে থাকি। আগে আমি নিজেও খামারে কাজ করতাম, কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর পারি না। আমার ছেলেই সব কাজ করে।

সে দিনের সব ঘটনা মনে করতে পারছি না। শুধু এটুকু মনে পড়ে, যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতে গেলাম, সে সময় সেনাবাহিনী আমাদের খামারে এসে পশুগুলো নিয়ে যায়। আমাদের ওপর চালাতে থাকে গুলি। একটি গুলি এসে লাগে আমার পেটে। ভাগ্য ভালো যে, গুলিটি খুব বেশি গভীরে প্রবেশ করেনি। তবে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল ও রক্ত ঝরছিল। আমার ছেলে দ্রুত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় আমাকে।

বাড়ি ফিরে দেখি পুরো গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে সেনাবাহিনী। ছেলে আমাকে নিয়ে পাহাড়ে চলে গেল, সেখানে ওর স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজে পাই। ওই পাহাড়ে তিন দিন থাকার পর ছেলে আমাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ১২ দিনের যাত্রা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। ছেলে আমাকে কোলে নিয়ে আর তার স্ত্রী তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে পথ চলেছে। সীমান্তে নানা সমস্যার কথা শুনেছি, তবে আমরা নির্বিঘেœই পার হয়েছি। বাংলাদেশে আমরা নিরাপদ, তাই স্বস্তিতে আছি। আমার পেটের ক্ষত শুকাতে শুরু করেছে, হাঁটাচলা করতে পারছি। সাথে কিছুই আনতে পারিনি, তাই খাওয়ার মতো কিছু নেই আমাদের। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্যও পাইনি। ভীষণ ক্ষুধার্ত আমরা।
আমার ছেলে চায়, বিশ্ববাসী আমাদের দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করুক; কিন্তু আমি আর সেখানে ফিরে যেতে চাই না। সেখানে আর আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখানে আমরা যাতে ভালোভাবে থাকতে পারি, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।
ভাষান্তর : আহমেদ বায়েজীদ

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253143