২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:৫১

‘বাবার রক্তাক্ত লাশ রেখে চলে এসেছি’

বাড়ির পাশে হিং¯্র সেনাদের আঁচ পেয়ে আমার বাবা আমাকে কোলে তুলে নেয়। এমন সময় সেনারা বাইরে থেকে গুলী ছুড়ে। জানালা দিয়ে গুলী এসে বাবার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বাবা ঘরের মেঝেতে পড়ে যান। আমি ভয়ে কাঁদছিলাম। বাবা তখনো ছটফট করছেন। আমাদের সময়কম
তার মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তখন সেনারা আমাদের ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা দৌঁড়ে পালালাম। সেনারা আমাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল। আমার বাবা ঘরের ভেতরেই ছিলেন। বাবাকে আর দেখতে পারিনি। পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একজন নূর কাজল। তার বয়স ১০। শিশুটি এভাবে তার পরিবারের ওপর বিভৎস্য নির্যাতনের দৃশ্য বর্ণনা করছিল।
নূর কাজল বলেন, ‘আমি বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চাই। আমি আমার গ্রামে ফিরে যেতে চাই। আমার গ্রামটি অনেক সুন্দর। গ্রামের মাটিতে আমি আবার হাটতে চাই। আমি সেখানে একটি মাদ্রাসায় পড়তাম। মাদ্রাসায় আমি কুরআন শিখতাম। আমাদের ঘরটি বেশি বড় ছিল না। কিন্তু পরিবারের ৭ জন মিলে আমরা খুব সুখে ছিলাম।’

কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে নূর কাজলের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক কেটি আননল্ড। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নূর কাজল আবার ফিরে যেতে চায় তার গ্রামে। যেখানে বাবাকে বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ছটফট করা অবস্থায় রেখে এসেছিল নূর কাজল। আবার রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি চিহ্নে।
সেনাদের হামলার পর আমরা পালিয়ে আসি। আমরা জীবন বাঁচাতে দৌঁড়াতে থাকি। তিন দিন ধরে বন, বিল, খাল আর নদী পেরিয়ে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। পথে আমার ক্ষুধার যন্ত্রণায় প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু খাওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই ছিল না।

এখন আমার বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। বাবার শরীরে গুলী লাগার পর তিনি ছটফট করছিলেন। পানি পানি বলে হাহাকার করছিলেন। কিন্তু বাবার সন্তান হয়ে আমি অসহায়ের মতো জীবন বাঁচানোর জন্য ছুটে চলে আসি।
‘আমার বাবা একজন কাঠুরে ছিলেন। তিনি খুবই সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। গ্রামের সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসত। বাবাও তাদের খুব ভালোবাসতেন।’

‘আমি বাংলাদেশে এসেও খুব কষ্টে আছি। কারণ সবসময় আমার বাবাকে মনে পড়ে। বাবার কথা মনে পড়লে বুকটা আমার ভেঙ্গে আসে। চোখ বেয়ে এক নদী জল আসে। এখানকার পরিবেশও ভালো না। কোনঠাসা হয়ে আছি। বাথরুম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নেই।’
‘এখন আমি আমার গ্রামে ফিরে যেতে চাই। এজন্য বিশ্ববাসীর কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। আমাকে আমার গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

http://www.dailysangram.com/post/300351