১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৬

চাল নিয়ে কারসাজি চলছেই

বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা * খুচরা বাজারে কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে

চাল নিয়ে মিলমালিকদের কারসাজি থামছে না। সিন্ডিকেট করে দফায় দফায় বাড়াচ্ছে সব ধরনের চালের দাম। তাই সরকারের নানা উদ্যোগের পরও চালের দাম মোটেই কমছে না। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। চালের দাম বাড়া অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষ।

রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিলমালিকদের কাছে চালের কোনো সংকট নেই। তারা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে চাল বাজারে ছাড়ছেন। সরাসরি যার প্রভাব পড়ছে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারা জানান, হঠাৎ করে গুজব আসে ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধ করে দেবে। এ সুযোগে কিছু মিলমালিক বেশি মুনাফার লোভে চাল মজুদ করে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। তারা এক হয়ে সিন্ডিকেট করে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এই বাড়তি দামেই বর্তমানে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চাল বিক্রি হচ্ছে। এতে করে সিন্ডিকেটের কাছে চলে যাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে মিলমালিকরা এসবের জন্য দায়ী করছেন সরকারের অব্যবস্থাপনাকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। মিলমালিকরা চাল নিয়ে চালবাজি করছে। সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে মোটাসহ সব ধরনের চালের দাম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সোমবারের বাজার দরের তালিকায় চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। সেখানে মোটা চালে মূল্য দেয়া আছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। যা সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর এক বছর আগে একই সময় মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা। সে ক্ষেত্রে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

তবে এদিন রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দামের চিত্রে ভিন্নতা দেখা গেছে। মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক মো. দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কেজিপ্রতি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। বিআর আটাশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। মানভেদে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি চালের দোকানে মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট ৬৭ থেকে ৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা ও আটাইশ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

মালিবাগ বাজারে চাল কিনতে আসা চাকরিজীবী সিকান্দার আলী যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম কোনো মতেই কমছে না। তাই চাল কিনতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ভিন্ন চিত্র পাইকারি বাজারেও। সোমবার রাজধানীর বাদামতলী ও কারওরানবাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। মিনিকেট ৩ হাজার ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। নাজিরশাইল ৩ হাজার ২৫০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং আটাইশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকা।

জানতে চাইলে দেশের চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার বাদামতলি ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা চালকল মালিকদের দিকেই তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করে আমরা সে দামেই কিনে বিক্রি করি। যদি দাম বাড়ে বা কমে মিলমালিকরাও বাড়ায় বা কমায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা সে দামে কিনে বিক্রি করে। চালের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়।

https://www.jugantor.com/industry-trade/2017/09/19/156793