১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৩

বিভিন্ন স্থানে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু

বাজারে প্রভাব পড়েনি, দাম ঊর্ধ্বমুখী

বরিশালে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই, রংপুরে দীর্ঘ লাইন

নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্য সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০ টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। কুড়িগ্রামে এর প্রভাব পড়েনি খোলাবাজারে। বরিশালে ওএমসের চাল ক্রয়ে আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। আর রংপুরে দেখা গেছে চাল নিতে দীর্ঘ লাইন। ওএমএসের আতপ চালের ভাত খেতে অনেকে অভ্যস্ত নন আর আগের চেয়ে চালের দাম দ্বিগুণ। এতে এ চালের প্রতি তারা আগ্রহী হচ্ছেন না। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : জেলায় চালের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে উঠছে কয়েক দফা চালের মূল্য। কেজিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে চাল ব্যবসায়ীরা দুষছেন মহাজনকে। আবার মহাজনরা বলছেন উল্টো কথা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। সরকারিভাবে কঠোর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় লাগাম টানা যাচ্ছে না এ চালের ঊর্ধ্বগতির। ফলে সাম্প্রতিক বন্যায় সব হারানো পরিবারগুলোর মাথায় এখন আকাশ ভেঙে পড়েছে। সরকার রোববার থেকে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করলেও তা বাজারে প্রভাব ফেলতে পারছে না। কারণ শুধু জেলা শহরে ৫ জন ডিলার এক টন করে চাল বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। এতে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার মানুষ সুযোগ পান। জেলার ১৮ লাখ মানুষের মাঝে এটি একেবারেই নগণ্য।

কুড়িগ্রাম পৌর চাল বাজারে দিনমজুর হাসেন আলী জানান, ‘বাহে, গত সপ্তাত চাল কিনলং ৩৭ টেকাত। আজকে দেখি চাবার নাগছে ৪৫ টেকা। এমরা তো হামাক মারি ফেলবে। দেশোত গরিব মানুষ বাঁচবে ক্যামনে! এদন করি চাইলের দাম বাড়লে বউ-ছওয়া নিয়া না খায়া থাকা নাগবে।’

কুড়িগ্রামের চাল ব্যবসায়ী আহমদ আলী জানান, কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে ধান এবং চালের মজুদ একেবারে শূন্যের কোঠায়। তিনি আরও বলেন, চালের বাজার দ্রত স্থিতিশীল করতে হলে বাজারে চালের সরবরাহের পাশাপাশি এ মূহূর্তে টিআর, জিআর ও কাবিখার বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা না দিয়ে চাল সরবরাহ করলে বাজার এমনিতেই স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
বরিশাল : নগরীতে খাদ্য অধিদফতরের খোলাবাজারে বিক্রির চাল নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে আগ্রহ নেই। সোমবার থেকে নগরীতে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২২০ কেজি চাল বিক্রি করতে পেরেছেন ডিলাররা। খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহকৃত আতপ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত নন নগরবাসী। তাই এ চাল নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে আগ্রহ ছিল না। এমন তথ্য জানিয়ে ডিলাররা বলেন, ডিলারশিপ টিকিয়ে রাখার জন্য বাধ্য হয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু চালের বেশিরভাগ অবিক্রীত থেকে গেছে।

রংপুর : চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রম সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। নগরীর ৭১টি কেন্দ্রে চাল বিতরণ করা হবে বলে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়। প্রথম দিন ১৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘলাইন দেখা গেছে মানুষের। রংপুর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ কার্যক্রম চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এজন্য প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, চালের বাজার ঊর্ধ্বগতি রোধে ওএসএমএস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক মাস ধরে এ কার্যক্রম চলবে।
ময়মনসিংহ : সোমবার থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকালে শহরের সানকিপাড়ায় খোলাবাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ আহমেদ খান। এ সময় জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামসহ কর্মকর্তা ও ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁ : জেলায় ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রম সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন পাঁচজন ডিলারের মাধ্যমে সদর উপজেলার পাঁচটি পয়েন্টে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিজন ডিলার ১ টন চাল বিক্রি করতে পারবেন। যে পরিমাণ চাল গুদামে মজুদ আছে আগামী কয়েক মাস ভালোভাবে নওগাঁয় ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা যাবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, জেলার ১১টি উপজেলার ১৯টি গুদামে সাত হাজার ৩৬০ টন চাল মজুদ আছে। এছাড়া গম আছে ৩ হাজার ২২২ টন।

টাঙ্গাইল : জেলা শহরে ৬টি কেন্দ্রে ওএমএসের খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবার প্রথম দিন খোলাবাজারে ন্যায্য মূল্যে চাল বিক্রি হলেও জনগণের মধ্যে তেমন একটা সাড়া পড়েনি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন শহরের বিশ্বাস বেতকা ও নতুন বাস স্ট্যান্ডে ওএমএসের চাল বিক্রি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি. এম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশের মতো চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চাল বিক্রি হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মান্নান আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সিদ্ধ চাল দেয়া হয়েছে। মানুষ সুষ্ঠুভাবে চাল নিয়েছেন। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।

https://www.jugantor.com/first-page/2017/09/19/156672