১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২২

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনের নামে পুকুরচুরির উৎসব

বন্যায় ক্ষতি প্রতি কিমি. ২৭.১৮ লাখ টাকা ; রোয়ানুতে ক্ষতি প্রতি কিমি. ৪২.১৪ লাখ টাকা ; প্রতি কিমি. অ্যাপ্রোচ সড়ক উন্নয়নে ২ কোটি টাকা ; পরামর্শক খাতে ব্যয় ১০ কোটি টাকা

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন খাতের নামে এই অর্থ ব্যবহার দেখানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও পুনর্বাসনের নামে পুকুরচুরির উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের জন্য কিলোমিটার প্রতি ব্যয়ে আকাশপাতাল ব্যবধান। আবার ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার দুই কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে আপত্তি তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। তাদের মতে, যে কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ব্যয় একই হওয়া যুক্তিযুক্ত। আর লোহার ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন ব্যয় অস্বাভাবিক। এটাকে যৌক্তিক করা উচিত।

এলজিইডি বলছে, ২০১৬ সালের বন্যা, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এবং বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ ও সড়কে উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে। ২০১৬ সালের বন্যায় ১২টি জেলা কবলিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই সব জেলার সড়ক ও ব্রিজ বা কালভার্ট। জেলাগুলো হলো চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুষ্টিয়া। আর ২০১৬ সালের রোয়ানু বাংলাদেশের উপকূলীয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে যায়। ফলে জেলার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্য দিকে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আশির দশকে নির্মিত লোহার ব্রিজগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। বেশির ভাগই তখন হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন এগুলোকে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রকল্পের জন্য এলজিইডি থেকে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যার ৯০ শতাংশ অর্থই যাবে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায়। বাকি ১০ শতাংশ যাবে অন্যান্য জেলার রোয়ানু ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সড়ক এবং ব্রিজ সংস্কারে।

প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসন করতে হবে ৮২৮.৮৩ কিলোমিটার। আর রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রন্ত সড়ক পুনর্বাসন করতে হবে ৪৭৯.১৬ কিলোমিটার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আর রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এখানে ব্যয় ব্যবধান হলো ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই কাজের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। আর পরামর্শক খাতে (কাঠামোগত নকশা এবং সুপারভিশনে) ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। ভ্রমণ ভাতা ধরা হয়েছে আট কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় অন্যান্য প্রকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এই প্রকল্পটি যেহেতু রিপ্লেসমেন্ট ধর্মী, তাই বিদেশ প্রশিক্ষণ ব্যয় বাদ দিতে হবে। কিন্তু এলজিইডি এই খাতে ব্যয় রাখতে এখন বিদেশে শিক্ষা সফর নামে দেড় কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি পিইসি কনসালট্যান্সি খাতে ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সুপারিশ করেছে। প্রকল্পে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পিইসি বলছে, যেহেতু এখানে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে, তাই জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই এবং প্রকল্পের ব্যয়ের খাত থেকে এই ১০ কোটি টাকা বাদ দেয়া উচিত।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252998