১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১৫

খুলনায় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার ভাড়া আদায়ের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট!

প্রি-পেইড মিটার বসানোর সময় মিটার বাবদ কোন ভাড়া গ্রহণ করা হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমানে প্রি-পেইড কার্ড কেনার সময় মিটার ভাড়া কাটা হচ্ছে। এর বাইরে সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জসহ বিভিন্ন খাতে টাকা কাটা হচ্ছে। এছাড়াও সমপরিমাণ টাকার একটি কার্ডের সাথে অন্য কার্ডের সঙ্গতি নেই। প্রি-পেইড কার্ড ক্রয় করতে গিয়ে গ্রাহকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট কোন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় না। ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটারে বিভিন্ন খাতে অযৌক্তিক চার্জ বৃদ্ধির প্রতিবাদে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
রোববার বিকেলে খুলনা আর্ট একাডেমি মিলনায়তনে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ ফ ম মহসীনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন শেখ ইলিয়াস, নাগরিক নেতা ডা. মো. নাসির উদ্দিন, মাহাবুবুর রহমান খোকন, শেখ মো. নাসির উদ্দিন, আফজাল হোসেন রাজু, রকিব উদ্দিন ফারাজি, যুব ইউনিয়ন নেতা এডভোকেট নিত্যানন্দ ঢালী, এম মোস্তফা কামাল, মো. কামরান হাচান মন্টু, মিলন বিশ্বাস প্রমুখ। নগরীতে গ্রাহকের সাথে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার নিয়ে হয়রানি, প্রতারণা ও জালিয়াতি বন্ধের জোর দাবি।

বক্তারা আরো বলেন, ওজোপাডিকোর কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে গ্রাহকদের সেবার পরিবর্তে কতিপয় ব্যক্তির আখের গোছানোর কর্মসূচিতে নেমেছেন। কার্ড বিক্রির বুথের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় গ্রাহকদের পরিবহন খরচ ও সময় অপচয় হচ্ছে। চাকরিজীবী, কর্মব্যস্ত মানুষ, নারীদের পক্ষে এতবেশি সময় অপচয় করে কার্ড ক্রয় করা দুঃসাধ্য ব্যপার। সেবার নামে বিভিন্ন প্রকার অযৌক্তিক চার্জ গ্রহণ এটি সরকারের সাফল্যকে ম্লান করার ষড়যন্ত্র কি না সেটি খতিয়ে দেখার আহবান জানান বক্তারা।
প্রতিবাদ সভায় অনতিবিলম্বে প্রি-পেইড মিটারের অনিয়ম, ভুতুড়ে কান্ড, অসঙ্গতি পূর্ণ চার্জ কাটা বন্ধ, পর্যাপ্ত বুথ স্থাপনসহ গ্রহকদের সামনে স্বচ্ছতা উপস্থাপন করা অন্যথায় প্রি-পেইড মিটার বাতিলের আহ্বান জানান বক্তারা। তা নাহলে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে গ্রাহকদের পকেট কাটার তেলেসমতি বন্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে গত রোববার দুপুর ১২টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপি’র সম্পাদকমন্ডলী ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের যৌথ সভায় নগরীতে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের সীমাহীন হয়রানি, প্রতারণা, জালিয়াতি বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া আদায়ের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, টাকা রিচার্জের সাথে সাথে নানা রকম চার্জের নামে অর্থ লোপাটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সকল ধরনের কারসাজি বন্ধের জন্য ওজোপাডিকোর প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, শেখ খায়রুজ্জামান খোকা, স ম আব্দুর রহমান, রেহানা আক্তার, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, মাহবুব কায়সার, আসাদুজ্জামান মুরাদ, মেহেদী হাসান দপিু, শাহিনুল ইসলাম পাখী, ইকবাল হোসেন খোকন, জালু মিয়া, শেখ সাদী, ইউসুফ হারুন মজনু, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, মুর্শিদ কামাল, কে এম হুমায়ুন কবির, একরামুল হক হেলাল, হাসানুর রশিদ মিরাজ, নিয়াজ আহমেদ তুহিন, শামসুজ্জামান চঞ্চল, মাহবুব হাসান পিয়ারু, নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর, হেলাল আহমেদ সুমন, নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু, শেখ ইমাম হোসেন, মাহবুব হোসেন, আবু সাঈদ শেখ, সাইমুন ইসলাম রাজ্জাক, মাওলানা আব্দুল গফ্ফার, ময়েজউদ্দিন চুন্নু, মোহাম্মদ আলী, জি এম রফিকুল হাসান প্রমুখ।

খুবিতে মানববন্ধন
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরতম নির্যাতন, গণহত্যা ও অং সান সু চি’র নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে এ কমৃসূচি পালিত হয়।
পরিষদের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে যে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যার ঘটনা ঘটছে তা এ সভ্য পৃথিবীতে কল্পনাও করা যায় না। এটা মানবতার বিপর্যয়। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা একাত্তরের মতো আরেকটা গণহত্যা ও নির্যাতনের চিত্র প্রত্যক্ষ করছি। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মিয়ানমার সরকারের জঘণ্যতম এ আচরণে ঘৃণা প্রকাশ করি, ধিক্কার জানাই।
তিনি আরো বলেন, ১৯১৯ সালের পর থেকে আমরা রাশিয়াকে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পাশে দেখেছি। একাত্তরেও আমরা তাদেরকে বাংলাদেশের পাশে পেয়েছি। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, তাদের ভুমিকায় আমরা বিস্মিত। তাদের এ অবস্থানের জন্য আমরা নিন্দা জানাই। এই মানবতার সংকটে আমরা বিশ্ববিবেককে সোচ্ছার হওয়ার আহবান জানাই।
তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে উৎকন্ঠিত আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ে। কারণ, তারা দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে আইন-শৃঙ্খলার উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আমরা মিয়ানমার সরকারের প্রতি অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা বন্ধ করে তাদেরকে তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে ফিরিয়ে নিয়ে মর্যাদার সাথে বসবাসের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। তিনি মিয়ানমারের উপর বাণিজ্যিক ও আর্থিক অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) শেখ শারাফাত আলী, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতি তারিকুজ্জামান লিপন, সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম মোহাম্মদ আলী, কর্মচারিদের পক্ষে মোস্তফা আল মামুন প্রবাল। মানববন্ধনটি পরিচালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র মন্ডল। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। অফিসার কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান, খাদ্য. চিকিৎসাসহ মানবিক সহযোগিতা প্রদান ও এ সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চিত্ত ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার প্রচেষ্টার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।

http://www.dailysangram.com/post/300270