১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১২

রাখাইনের দু’টি গ্রামে খাবার সরবরাহ বন্ধ করেছে মগসেনারা

* রোহিঙ্গাদের তাড়াতে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে -রয়টার্স ফটো সাংবাদিক
* ২৬টি পোড়া গ্রামের দৃশ্য প্রকাশ করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
মুসলমান জনগোষ্ঠীকে তাড়িয়ে দিতে মগসেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ চরমপন্থীরা তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে বলে রয়টার্সের এক ফটো সাংবাদিক ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে। এদিকে রাখাইনে দু’টি গ্রাম অবরুদ্ধ করে সেখানে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে মগ সেনারা। ফলে গ্রামবাসীরা অনাহারে মারা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাখাইনে এর আগেও গ্রাম ও রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করেছে মিয়ানমার সেনা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা। এমনি ২৬টি রোহিঙ্গা গ্রাম পোড়ানোর দৃশ্য প্রকাশ করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

পুড়িয়ে মারার হুমকি
মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় আটকে পড়েছে দুই গ্রামের বাসিন্দা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ দুই রোহিঙ্গা গ্রাম ঘিরে রেখেছে এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় মগরা। সেখান থেকে তাদেরকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এসব রোহিঙ্গা। রয়টার্সের সংবাদ। রয়টার্সকে টেলিফোনে আহ নায়ুক পাইন গ্রামের একজন রোহিঙ্গা কর্মকর্তা মং মং জানান, 'আমরা আতংকিত। শীঘ্রই আমরা অনাহারে মারা যাব। তারা আমাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোহিঙ্গা রয়টার্সকে জানান, রাখাইন বৌদ্ধরা একই গ্রামে এসে তাদেরকে চলে যেতে বলেছে নইলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
এ দিকে রয়টার্সের এক ফটো সাংবাদিক এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ চরমপন্থীরা সেখানকার মুসলমান জনগোষ্ঠীকে তাড়িয়ে দিতে তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে।
সংবাদ সংস্থাটির ফটোসাংবাদিক জানান, এখনো হাজার হাজার লোক নৌকা করে কক্সবাজারে প্রবেশ করতে সীমান্তে অপেক্ষা করছে।

‘পালাও, নইলে সবাইকে মেরে ফেলব’
মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত উক্ত দুটি গ্রামে রয়েছে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ভাষ্য, গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সবাইকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা খাবার পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত চলছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার। রয়টার্সের বিশেষ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আহ নাউক পিন নামের ওই গ্রামের রোহিঙ্গাদের কথা। গ্রামের বাসিন্দা মং মং রয়টার্সকে টেলিফোনে বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত। শিগগিরই আমরা খাদ্যাভাবে মারা যাব। তারা আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’ওই গ্রামের আরও এক রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ হয় রয়টার্সের। নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি। বলেন, ‘আমাদের গ্রামে রোহিঙ্গাবিরোধী স্থানীয় লোকজন বারবার আসছে। চিৎকার করে বলছে, পালাও, নইলে তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলব।’ গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন অভিযান শুরু করে। নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর তাদের নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতা পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। তাদের বেশির ভাগের ওপরই বিভিন্ন বিষয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব নেই। স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দাবি, তারা অবৈধ অভিবাসী। রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব টিম মং সোয়ে রয়টার্সকে বলেন, তিনি রাথিডং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাছে থেকে কাজ করেছেন। তবে রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। উদ্বেগের কিছু নেই। রাথিডংয়ের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিরাপদ। পুলিশের মুখপাত্র মিয়ো থু সোয়ে বলেন, তার কাছেও রোহিঙ্গা গ্রামের সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন।জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া বিভাগের মুখপাত্র ক্যাটিনা অ্যাডামস ওইগ্রামগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং আইন অনুসারে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।ক্যাটিনা অ্যাডামস আরও বলেন, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের অভাবে রয়েছে। অবিলম্বে সরকারের উচিত তাদের সাহায্য করা।অ্যাডামস বলেন, এ সপ্তাহে মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া বিভাগের উপসহকারী সচিব প্যাট্রিক মারফি সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তিনি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্য রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেছে।
নৌকা নেই
রাখাইন রাজ্যের আহ নাউক পিন গ্রামটি রাথিডংয়ের ম্যানগ্রোভ এলাকা। এর চারদিকে পানি। গ্রামবাসী বলছে, তাদের কাছে কোনো নৌকা নেই।তিন সপ্তাহ আগে রাথিডংয়ে মুসলিম-অধ্যুষিত ২১টি গ্রাম ছিল। সেখানে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের তিনটি আশ্রয়শিবিরও ছিল। এর আগে চলা ধর্মীয় সহিংসতায় গৃহহারা মুসলিমরা ওই শিবিরগুলোয় ছিল। এসব গ্রামের মধ্যে ১৬টি এবং তিনটি শরণার্থী শিবিরই এখন জনশূন্য। এর মধ্যে অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সহিংসতার কারণে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা।

মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, রাথিডংয়ের টিকে থাকা পাঁচটি রোহিঙ্গা গ্রাম এবং সেখানকার আট হাজার বাসিন্দা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে।আহ নাউক পিং এবং পার্শ্ববর্তী নং পিন গি গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথ দীর্ঘ, কষ্টকর। রাখাইনের সশস্ত্র রোহিঙ্গাবিরোধী প্রতিবেশীরা প্রায়ই তাদের বাধা দেয়। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের হুমকির মধ্যে থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাথিডংয়ের কর্মকর্তা থিয়েন অং বলেন, তাদের জন্য কোথাও চলে যাওয়াই ভালো।গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলাকারী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুজন রাথিডংয়ের ছিল। এখন পুরো রাথিডং ধর্মীয় উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে।
পুলিশকে ফোন করেছি ৩০ বার
রোহিঙ্গা মং মং বলেন, গ্রামবাসীর বিপদের কথা জানিয়ে তিনি কমপক্ষে ৩০ বার পুলিশকে অভিযোগ নিতে বলেছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি রাখাইনের পরিচিত এক গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফোন পান। তিনি মং মংকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কাল পালাও। না হলে আমরা এসে তোমার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেব।’ মং মং রয়টার্সকে ওই কথোপকথনের রেকর্ডও দেন। মং মং এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পালানোর কোনো উপায় নেই। তখন ওই প্রতিবেশী বলেন, ‘এটা আমাদের ভাবার বিষয় না।’ গত ৩১ আগস্টের একটি ঘটনারও বর্ণনা দেন মং মং। তিনি বলেন, রাখাইনের ১৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহ নাউক পিং গ্রাম থেকে সাতজন রোহিঙ্গা নিয়ে রাস্তার ধারে একটি সভা করেন। কিন্তু ওই সভায় রোহিঙ্গাদের কোনো অভিযোগ শোনা হয়নি। বরং মং মং ও আরও দুই রোহিঙ্গা, যারা ওই সভায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। আহ নাউক পিন গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা বাসিন্দা বলেন, সভায় তাঁদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই এলাকায় কোনো মুসলিম থাকতে পারবে না। মুসলিমদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে হবে। রোহিঙ্গারা তাতে রাজি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পালানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রোহিঙ্গা রয়টার্সকে একটি চিঠি দেখান। সেখানে ৭ সেপ্টেম্বর রাথিডং কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এক চিঠিতে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের যেন আলাদা জায়গা খুঁজে নিতে বলা হয়। রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা বলছে, তারা রাখাইনের বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাবার কিনতে পারছে না। তাদের খাবার ও ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেয়ে আমাদের হত্যা করাই ভালো
ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কিছুতেই মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ৩৮০০ রোহিঙ্গা বাস করছেন। গত ৫ বছর ধরে ভারতে বাস করা রোহিঙ্গারা প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় স্বদেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না। ভারত সরকারের কাছে তারা মানবতার খাতিরে তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি আবেদন জানিয়েছেন।আব্দুর রহিম নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘আমাদের এখানে বাস করতে দেয়ার জন্য আমরা ভারত সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সরকার যদি আমাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে তা করতে পারে কিন্তু আমাদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে বরং হত্যা করাই ভালো।’২০১২ সাল থেকে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করা আব্দুর রহিম বলেন, দেশে তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তবেই সেখানে ফেরার কথা ভাবতে পারি।মুহাম্মদ ইউনুস (৬৩) নামে এক ব্যক্তি বলেন, বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমার সবসময় তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে তিন বার শরণার্থী হয়েছি। ওরা কখনোই তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। মিয়ানমারে মুহাম্মদ ইউনুস ব্যবসায়ী ছিলেন। মিয়ানমার সরকার তার সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেয়ার পরও তাদের সমস্যা দূর হয়নি। অন্যদের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তিনি জম্মু থেকে হায়দ্রাবাদে বাস করছেন। এখানে এখন দৈনিক ৫০০ টাকার মজুরিতে কাজ করছেন। যদিও মাসের মধ্যে মাত্র ১৫ দিন কাজ পাওয়া যায়। দিল্লিতে আশ্রয় নেয়া সাবিকুন নাহার নামে এক তরুণী তার চরম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘নিজের গ্রামে ফেরার কথা ভাবলেই সেনাবাহিনীর হামলার ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে। আমাদেরদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্ম মানতে বাধ্য করেছিল। স্থানীয় মসজিদে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। এত ভয় পেতাম যে রাতে ঘুম আসত না।’

রাখাইনে ২৬ রোহিঙ্গা গ্রামের পোড়া দৃশ্য প্রকাশ করল এ্যামনেস্টি
মিয়ানমারের রাখাইনে একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা। তারই একাধিক স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশ করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব ছবিতে শত শত ঘরবাড়ি, ভবন ও স্থাপনা পুড়ে ভস্মীভূত হতে দেখা গেছে। পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে।নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও গণধর্ষণের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে এবং তাদের মুখে সেই সব ভয়াবহ নির্যাতনের কথা ছবিতে প্রমাণ পাচ্ছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সুচি এধরনের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও এবং রোহিঙ্গা নিধন ও বিতাড়নে দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল অং মিন হেই বৌদ্ধদের ঐক্যের ডাক দিলেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিন্দা জানাচ্ছে, দেশে দেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ উঠছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে অন্তত ২৬টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বিচারে গুলি করে নিরস্ত্র ও নিরীহ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইট থেকে তোলা এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও উঁচু ভবন, গাছপালা সব কিছু পুড়ে ছাড়খাড় হচ্ছে।এসব ছবিতে অন্তত ৮০টি বড় ধরনের আগুনের কু-লীর অস্তিত্ব চিহ্নিত করা গেছে। গত ২৫ আগস্টেরাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তখন দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযান চলছিল। এ্যামনেস্টির গবেষক ওলফ ব্লমকভিস্ট এসব স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে বলেছেন,রাখাইন অঞ্চল জ্বলছে এবং জাতিগত নিধনের বিষয়টি এসব ছবিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের অনেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলেছেন, বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার জন্যে পেট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সেনারা কাঁধে বহনকারী রকেট ছুড়েছে ঘর বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠার জন্যে। ওলফ ব্লমকভিস্ট বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের এভাবে দেশ ছাড়া করতে দেশটির সরকার কিভাবে অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছে, সেনা নামিয়েছে, অভিযান চালিয়েছে যা চিন্তারও বাইরে।এ পর্যন্ত গত ৩ সপ্তাহে অন্তত ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান এধরনের নির্যাতন ও সহিংসতাকে জাতিগত নিধনের সমতুল্য বলে মন্তব্য করেছেন। স্ট্রেইট টাইমস/এশিয়া নিউজ।

সীমান্ত খুলে দিতে আমি বাংলাদেশকে উৎসাহিত করছি: কমনওয়েলথ মহাসচিব
মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে মানবতার জন্য একটি গভীর সঙ্কট হিসেবে উল্লেখ করে কমনওয়েলথ মহাসচিব পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে আমি বাংলাদেশকে উৎসাহিত করছি। কেননা রোহিঙ্গারা নিরুপায় হয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে আসছে।

১৭ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দেয়া এক বিবৃতিতে কমনওয়েলথ মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সঙ্কটের সময়ে লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ কমনওয়েলথের মূল্যবোধ সমুন্নত রেখেছে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মায়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতায় গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশ ঠাঁই নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট রাখাইনে বেশ কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে কোনো এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ নিহত হন ৭০ জনের বেশি মানুষ। ওই হামলার জন্য দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে দায়ী করে তাদের ওপর নির্বিচারে নির্যাতন ও হত্যা শুরু করে। এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্য থেকে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।

http://www.dailysangram.com/post/300224