১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৮

বিশ্ববাসীর প্রতি এক রোহিঙ্গার আকুতি

‘স্বামীর লাশের কাছেও যেতে পারিনি’

আমি নাসিমা খাতুন, বয়স ৬০ বছর। চলমান সহিংসতার আগে শান্তিতেই বসবাস করতাম আমরা। আমার স্বামী ছিল জেলে। তিন মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমার। সব সময়ই আমাদের ওপর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চাপ ছিল। তারপরও খাদ্য ও আশ্রয়ের সঙ্কট কখনো হয়নি।

সেনাবাহিনী যেদিন আমাদের গ্রামে এসে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করল, তখন আমরা যে যেখানে পারি ছুটতে শুরু করি। আমি জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ি। সেখানেই একজন জানায়, আমার স্বামীকে গুলি করা হয়েছে। প্রচণ্ড ভয় ও অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে আমাকে। সেনাবাহিনী পুরো গ্রাম দখল করে রেখেছে, তাই স্বামীর লাশ আনতেও যেতে পারিনি। তাকে সেখানেই ফেলে রেখে আমরা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসি।

মেয়েদের নিয়ে কয়েকজন প্রতিবেশীর সাথে শুরু হয় আমার দুর্গম যাত্রা। সাথে কিছুই আনতে পারিনি, তাই পথে যা পেয়েছি তাই খেতে হয়েছে। পথের ধারে একটি পরিত্যক্ত দোকান পেয়ে সেখান থেকে কিছু খাবার নিয়েছি আমরা। ১০ দিনের ওই যাত্রায় শুধু সেগুলোই ছিল সত্যিকারের খাবার। সারা পথ আমি কেঁদেছি। প্রতিবেশীরা যথেষ্ট সহায়তা করেছে, নদী পার হওয়ার নৌকা ভাড়াও তারাই দিয়েছে। মিয়ানমার ছেড়ে আসা আমার জন্য ছিল খুবই কষ্টের। সেখানে আমি স্বামীকে হারিয়েছি। ঘর, জমিসহ সব কিছুই ফেলে এসেছি।

এখানে এসে আমরা একটা থাকার মতো জায়গা তৈরি করেছি। স্থানীয় বাংলাদেশীরা আমাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছেন, কিন্তু এখানে উপার্জনের কোনো পথ খোলা নেই, কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। আয় করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু আমার মনে হয় তা সম্ভব হবে না। রাখাইন আমাদের জন্য আর কখনোই নিরাপদ হবে না। ফিরে গেলে নির্যাতন কিংবা হত্যা করা হবে আমাদের। জানি বিশ্ব আমাদের পরিস্থিতি দেখছে। আশা করি, বিশ্ববাসী আমাদের দুর্দশা ও মৃত্যুর এই কাহিনী শুনে আমাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে।হ
ভাষান্তর : আহমেদ বায়েজীদ

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252918