দিনভর বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পের
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ২:৩৫

দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না রোহিঙ্গাদের

প্রবল বৃষ্টিতে অনেক অস্থায়ী ক্যাম্প ভেসে গেছে

কষ্টের সীমা নেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। দুর্ভোগ তাদের পিছু ছাড়ছে না। স্বজন ও সহায়-সম্বলহীন হয়ে আশ্রয় নিতে এসেছেন বাংলাদেশে। বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী আশ্রয়স্থল বানিয়ে সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে মাথা গুঁজে আছেন। গত শনিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে সেই আশ্রয়ও তাদের ভেসে গেছে। পাহাড়ি ঢলে কোনো কোনো এলাকায় রাতভর বুক পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাটাতে হয়েছে তাদের। এতে অনেকেই গতকাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ দিকে বিভিন্ন এলাকায় গতকালও বিশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। যারা ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন তারাও নানা ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি গতকাল কয়েকটি স্থানে ত্রাণ লুটপাটের চেষ্টাও হয়েছে। শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে বলা হয়েছে, পুরনো রোহিঙ্গারা এখন লুটপাটে নেমেছে। তারা ত্রাণবাহী গাড়ি আটকে ত্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এর সাথে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত হাত মিলিয়েছে। এ দিকে কিছু কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত লোকেরা রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো কোনো এলাকার শরণার্থীরা দিনে এক বেলা খাবারও পাচ্ছেন না। প্রধান সড়কের আশপাশে যারা তারাই কেবল ত্রাণ পাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো এলাকায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে দায়িত্বরত মাঝির (নেতা) বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না : সর্বস্বহারা রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল ও আত্মীয়স্বজন হারিয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায়। মাথা গোঁজার অস্থায়ী সেই ঠাঁইটুকুতেও আঘাত হেনেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গত শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হয়। এ বৃষ্টিতে অনেক এলাকার অস্থায়ী ক্যাম্প ভেসে গেছে। বিশেষ করে যারা পাহাড় ও পাহাড়ের নিচে ঘর তুলেছেন তাদের অবস্থা বেহাল। গতকাল উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের এ দুর্দশার চিত্র দেখা যায়।

উখিয়ার কুতুপালং কাস্টমস ছড়ার (পাহাড়ি খাল) দুই পাশে আশ্রয় নিয়েছে ৪৮০টি পরিবার। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে ওই পাহাড়ি ছড়া উপচে দুই পাশের ভূমিতে পানি উঠে যায়। এতে ওই ক্যাম্প দু’টির মধ্যে বুক সমান পানি জমে যায়। এই ক্যাম্পের নেতা তৈয়ব মাঝি বলেন, রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে বুক সমান পানি জমে যায়। পানির স্রোত তাদের ঝুপড়ি ঘরগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ কয়েক দিনে তারা যে ত্রাণ পেয়েছিলেন তা স্রোতে ভেসে গেছে। যে খাবার ছিল তার কিছু ভেসে গেছে আর কিছু নষ্ট হয়েছে। সন্তানদের নিয়ে তারা সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। পাশে পাহাড়ি ছড়া পার হয়ে এপারে সড়কে ওঠারও কোনো পথ ছিল না। সকাল হওয়ার পর তারা ওই ছড়ার ওপর একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে তার ওপর দিয়ে প্রধান সড়কে এসে আশ্রয় নেন।
গতকাল দুপুরে ওই ক্যাম্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় তখনো সেখানে হাঁটুপানি। মহিলারা অনেকেই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এপারে সড়কে আসতে না পেরে ওই পানির মধ্যে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ক্যাম্পের ইউসুফ মাঝি দুপুরে বলেন, সকাল থেকে তারা না খেয়ে আছেন। পানির কারণে কেউ ত্রাণ নিয়ে ওই ক্যাম্পে ঢুকতে পারেননি। ছোট্ট শিশুরাও সেখানে না খেয়ে আছে। যে খাবার সংগ্রহ করে রেখেছিলেন, তা রাতের বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা আঞ্জুমানপাড়ার বাবুলের মাছের ঘেরের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ভেঙে গেছে ও বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সেখানে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গারা : রাতে যে বৃষ্টি নামে তা থেমে থেমে গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত ছিল। সকাল থেকে এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার শরণার্থীকে দেখা যায় রাস্তার উখিয়া থেকে টেকনাফের প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। এই বৃষ্টির মধ্যে অনেক পরিবারকে দেখা যায় শিশুসন্তান নিয়ে অপেক্ষা করছেন ত্রাণের জন্য। কোনো গাড়ি দেখলেই সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। মায়ের কোলে ছোট্ট ছোট্ট শিশু ভিজছে। জোলেখা নামের এক শরণার্থী বলেন, রাস্তায় না এলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। তার কোলে দেখা গেছে ছয় মাসের সন্তান। ওড়নার আঁচল দিয়ে সন্তানটিকে কোনো রকম ঢেকে রাখলেও শিশুটির পুরো শরীর ভেজা। তিন মাসের ছোট্ট শিশু কায়াসকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন মা তসলিমারা। তিনি জানান, খাবার না পেলে কী খেয়ে বাঁচবেন। সন্তানকেই বা কী খাওয়াবেন। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। গতকাল উখিয়ার কেরণপাড়ার রাস্তায় এ দৃশ্য দেখা যায়। তসলিমারা ১২ দিন আগে এখানে এসে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।

বেপরোয়া পুরনো রোহিঙ্গারা : পুরনো রোহিঙ্গাদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। তারা ত্রাণের গাড়ির ওপর আক্রমণ এবং লুটপাটের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। গতকাল সেই দৃশ্য চোখে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। তারা নতুন রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই ঠাঁই দিতে চায় না। নতুন রোহিঙ্গা আসার পরে বিপুল ত্রাণ আসায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কুতুপালং এলাকার রাবার বাগান ক্যাম্পের সামনে নুর হোসেন ও কামাল জানান, তারা নতুন এসেছেন। পুরনো রোহিঙ্গাদের দাপটে নতুনরা ঠাঁই পাচ্ছেন না। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের লাইনের আগে থাকছেন পুরনো রোহিঙ্গারা। তাদের দিতে না চাইলে তারা আক্রমণ করছেন এবং ত্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন। এর একটু পরে ওই এলাকা থেকে মাইলখানেক দূরে চোখে পড়ে ত্রাণ কেড়ে নেয়ার দৃশ্য। ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর ত্রাণবাহী গাড়ির পেছনের ত্রিপল ছিঁড়ে চালের বস্তা লুট করতে দেখা যায় এক রোহিঙ্গাকে। পরে জানা গেল ওই রোহিঙ্গা অনেক আগে এসেছেন। টেকনাফের হ্নিলার লেদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নতুন রোহিঙ্গারা লাইনে দাঁড়াতে চাইলে এবং গাড়ির কাছে গেলে তাদের ধাক্কা মেরে গাড়ির নিচে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। উখিয়ার জামতলী এলাকায় গত শনিবার বিকেলে পুরনো রোহিঙ্গারা নতুনদের গাড়ির নিচে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এতে মংডুর লদং থেকে আসা আবুল কালামের মেয়ে গুনগুনিয়াসহ (৭) চারজন আহত হয়। বালুখালীতেও এভাবে গাড়ির নিচে ফেলে দিয়েছে নতুন রোহিঙ্গাদের। সেখানেও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরনো রোহিঙ্গারা জানেন কোথায় কখন ত্রাণ দেয়া হবে। সে অনুযায়ী তারা আগেভাগেই চলে যান। আর নতুনরা এখনো রাস্তাঘাট পুরোপুরি চিনে উঠতে না পারায় ত্রাণ দেয়ার স্থানে তাদের যেতে দেরী হয়। অনেকে আছেন যারা খুঁজেই বের করতে পারেন না কোথায় ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। পুরনোরা মানুষের যানবাহন আটকে রেখে অনেকটা দুর্বৃত্ত স্টাইলে ত্রাণ নিতে চান। ত্রাণ দেয়ার জন্য যে কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে তাতেও পুরনোরা ভাগ বসাচ্ছেন এবং তারাই বেশি কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাবুল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তার এলাকায় গত শনিবার একটি পরিবার আসে। যারা দিনভর কোনোই খাবার পাচ্ছিল না। কিভাবে খাবার সংগ্রহ করতে হবে তাও তারা বোঝেনি। তাদের সামনে দিয়ে পুরনো রোহিঙ্গারা খাবার কেড়ে নিয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন ২০ দিন হেঁটে কিছু না খেয়ে ওই পরিবারটি আশ্রয়ের জন্য আসে। পরে তিনি একজনের কাছ থেকে চারটি বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে ওই পরিবারকে দেন।

ক্যাম্পের ঘর ভেঙে দিয়েছে অজ্ঞাত লোকজন : কুতুপালং এলাকার রাবার বাগানে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার। এই এলাকারই বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বাবুল গতকাল জানান, রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এই রাবার বাগানের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালায়। তারা ঘরগুলোর ত্রিপল ও পলিথিনের বেড়া ছিঁড়ে ফেলে। এতে রাতের বৃষ্টিতে পুরো ক্যাম্পের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এই ক্যাম্পের মাঝি সুলতান আহম্মেদ বলেন, রাতে হঠাৎ করে ওই লোকগুলো এসে আক্রমণ করে। তারা ঘরের ছাউনির ত্রিপল এবং বেড়ার পলিথিন ছিঁড়ে ফেলে। মো: তোহা নামে অন্য এক মাঝি বলেন, কেন কী কারণে এভাবে আক্রমণ করেছে তা বলতে পারছেন না তারা। তাদের বলা হয়েছে ওখানে থাকা যাবে না। এই ক্যাম্পের মহিবুল্লাহ, শামসুল আলম, নুর হোসেন ও কামাল হোসেনসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা বলেছেন, রাতে তাদের ঘর ভেঙে ফেলায় তাদের খুবই কষ্ট হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চারা রাতভর বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে।
মাঝিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ : রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কয়েকটি পরিবার মিলে একটি গ্রুপ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এই গ্রুপ করে দিয়েছে। এসব গ্রুপের যারা মাঝি তাদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো এলাকায় অভিযোগ আছে। রাবার বাগান ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, মাঝিরা সম বণ্টন করছেন না। তারা মুখ চেয়ে ত্রাণ দিচ্ছেন। এই ঘটনা নিয়ে কোথাও কোথাও মাঝিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এখনো আসছে রোহিঙ্গারা : গতকালও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। নাফ নদী হয়ে শাহপরীর দ্বীপ এলাকা দিয়ে গতকালও হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফে ঢুকেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদী পার হয়ে এই পরিবারগুলোকে আসতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি তাদের সহায়তা করছে। তবে গতকালের প্রবল বৃষ্টির কারণে এই শরণার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের নিয়ে কাকভেজা হয়ে তারা শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সাবরাং এলাকায় আসেন।

অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোহিঙ্গারা : মিয়ানমার থেকে ১৫-২০ দিন হেঁটে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে আসছেন। খোলা আকাশের নিচে অনেকেই অবস্থান নিয়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে এবং পানি ও কাদা মাটির ওপর অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায় অসুস্থ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকে চিকিৎসার অভাবে রাস্তার পাশে পড়ে কাতরাচ্ছেন। গতকাল কাস্টমস ছড়া এলাকায় দেখা যায় কায়সার নামের এক কিশোর রাস্তার পাশে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। পুরনো জামা-কাপড়ের স্তূপের ওপর ওই কিশোর পড়ে আছে। কুতুপালং এলাকার রাস্তার পাশের ক্যাম্পের বাসিন্দা সাবের জানান, ওই ক্যাম্পের প্রায় প্রতি ঘরে অসুস্থ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের অনেকেই চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছেন না। সেখানে অস্থায়ী যে চিকিৎসা ক্যাম্প করা হয়েছে তাতে সবার চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। উখিয়া সরকারি হাসপাতালে যেতে দেয়া হয় না। এমনকি মৃত্যু হলেও তাদের চিকিৎসা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কোথাও কোথাও কোনোই সহায়তা পৌঁছছে না : কোনো কোনো এলাকার রোহিঙ্গারা কোনোই সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। বিশেষ করে যেসব ক্যাম্প রাস্তা থেকে দূরে এবং দুর্গম এলাকায় সেসব এলাকায় কেউ ত্রাণ দিতে যান না। যারা ত্রাণ নিয়ে আসেন তারা সহজে রাস্তার পাশের ক্যাম্পগুলোতে দিয়ে চলে যান। কষ্ট করে কেউ ভেতরের দিকে যেতে চান না।
‘আরে ওগ্যা বোরহা দে’ : উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে তাকালে এখন কেবল পুরনো কাপড়ের স্তূপই দেখা যায়। রাস্তার ওপরে এগুলো পড়ে আছে। প্যান্টশার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এই পোশাকগুলো রোহিঙ্গারা নেন না। একাধিক রোহিঙ্গা বলেন, ওই পোশাক পড়ে তারা অভ্যস্ত নন। রোহিঙ্গা পুরুষরা প্যান্ট পরে অভ্যস্ত নন। আর পাঞ্জাবিও তারা পরেন না। অথচ মানুষ এগুলো নিয়ে আসছেন তাদের দেয়ার জন্য। তার চেয়ে লুঙ্গি নিয়ে এলে তাদের উপকার হবে বলে একাধিক রোহিঙ্গা বলেন। আবার রোহিঙ্গা নারীরা কাপড় পরে অভ্যস্ত নন। অথচ মানুষ নিয়ে আসছেন শাড়ি কাপড়। এগুলো কিভাবে পরতে হয় তাই জানে না রোহিঙ্গা নারীরা। একাধিক নারীকে বলতে শোনা যায় ‘আরে ওগ্যা বোরহা দে’। রোহিঙ্গা নারীদের বেশির ভাগই বোরকা পরেন। তারা মুখ ঢেকে চলেন। শরণার্থী শিবিরে যারা আছেন বা আসছেন তাদের পেটে ভাত না থাকলেও একটি সুন্দর বোরকা পরে আছেন। তাদের পছন্দ সুন্দর বোরকা।

কুরিয়ার সার্ভিসে করে আসছে পুরনো কাপড় : গতকাল রোববার কক্সবাজার প্রধান সড়কের একটি কুরিয়ার সার্ভিসে গিয়ে দেখা যায় বস্তায় বস্তায় পুরনো কাপড় এসেছে। রোহিঙ্গাদের দিতে এগুলো কুরিয়ার সার্ভিসে করে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন অযথা টাকা খরচ করে এই পুরনো কাপড় না এনে যে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন সেই টাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ দেয়া হোক। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে টাকা দিলে সেই টাকা তাদের অনেক কাজে লাগবে।
কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে যান চলাচলে : কয়েক দিন ধরে উখিয়া থেকে টেকনাফের রাস্তাটির বেহাল দশা ছিল। যানজটে আটকে থাকত রাস্তাটি। ত্রাণদাতারা বড় বড় বাস ট্রাকে করে রাস্তায় থেমে থেমে ত্রাণ দিতেন। গতকাল রাস্তায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। রাস্তার দুই ধারে গতকাল দেখা গেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা কোনো গাড়ি রাস্তার পাশে থামতে দিচ্ছেন না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252684