১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:২৩

রোহিঙ্গা নির্যাতন বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর নিধনযজ্ঞ -ওয়াশিংটন পোস্ট

মাত্র তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাগোষ্ঠী পরিণত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরো বিশ্বে ঘটা সবচেয়ে বড় ও নিষ্ঠুর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায়। ২৫ আগস্ট চালানো রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পদ্ধতিগতভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে বহু গ্রাম। আতঙ্কিত হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার (বর্তমানে ৪ লাখ ৯ হাজার) ছাড়িয়েছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, এদের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ৪০ হাজারই হচ্ছে শিশু। শীর্ষ নিউজ।
মিয়ানমার সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, সেটিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস জাতিগত নিধনযজ্ঞের একটি স্পষ্ট উদাহরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করা সত্তে¦ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়। ২৫ আগস্টের পর স্কর্চড-আর্থ অভিযান হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর এমন এক অভিযানে যেটিতে শত্রুপক্ষের কাজে আসতে পারে এমন যেকোনো কিছুকে টার্গেট করা হয়। এই স্কর্চড-আর্থ অভিযানে এখন পর্যন্ত রাখাইনের ৪৭১টি রোহিঙ্গা গ্রামের মধ্যে ১৭৬টি গ্রাম পুরোপুরি শূণ্য হয়ে গেছে।

স্যাটেলাইট-ছবিসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সংগ্রহ করা প্রমাণে দেখা যায়, বহু গ্রাম একেবারে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটি ৬২টি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া আরও ৩৫টি গ্রাম এরকম হামলায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্তে কার্মরত সাংবাদিকরা মিয়ানমার অঞ্চল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখার খবর দিয়েছেন। রাখাইনে সাংবাদিক, ত্রাণকর্মী ও কূটনীতিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। এ কারণে আরও অঞ্চলটির ভেতরে কী ঘটছে তার বিস্তারিত বর্ণনা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে না।
রাখাইনে সংগঠিত এই অপরাধ, ২০০০ সালের শুরুর দিকে সুদানের দারফুর ও ১৯৯০ সালে ঘাটে কসোভোতে ঘটা নিধনযজ্ঞের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বিস্ময়করভাবে দুর্বল।
বুধবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। বৈঠক শেষে পরিষদের সর্বনিম্ন পর্যায়ের বিবৃতি প্রকাশ করে যেটিতে এই নির্যাতনের প্রতি নিন্দা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও একই রকম সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ওপর দেয়া হয়েছে ব্যাপক নজর। এই সহিংসতা নিয়ে এখনও মুখ খুলেননি তিনি। এর নিন্দাও জানাননি। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও তার হাতে নেই। যেটা এখন দরকার তা হচ্ছে- মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করা।
ওবামা প্রশাসন দেশটিতে গণতান্ত্রিক ধারা প্রবর্তনের চেষ্টায়, সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন অর্থমন্ত্রণালয়ের উচিৎ তা পুনরায় আরোপ করা। কোন কোন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে তারা অং সান সুচি ও তার বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
এমন উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে যে, সুচি চাইলে স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে করা আন্তর্জাতিক সমালচনাগুলোকে ব্যবহার করতেও পারেন।
জাতিসংঘে মিয়ানমারকে আগলে রেখেছ চীন। মিয়ানমারে চলা অত্যাচার নিয়ে চীনের মাথাব্যথা নেই। বরঞ্চ, এই সুযোগে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগতই জানাচ্ছে চীন।
তাই জাতিসংঘের কখনও উচিৎ হবে না জোর করে নিরাপত্তা পরিষদের কোনও সিদ্ধান্ত এই নিধনযজ্ঞ থামাতে চাপিয়ে দেয়া। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যত বেশি প্রমাণ মিলবে- নির্যাতনকারীদের তত বেশি মূল্য দিতে বাধ্য করা হোক (নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে)- তাহলে তত জ্বলদি এই নির্যাতন থামবে। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়।

http://www.dailysangram.com/post/300076