১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০৯

চাল কিনতে নাভিশ্বাস নিম্ন ও মধ্যবিত্তের

খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহে চালের অস্থির বাজারে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠেছে। খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫০ টাকা ও চিকন চাল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ধান ও চালের কোনো সংকট না থাকলেও ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির কারণে হাঁপিয়ে উঠেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেক দিনমজুর সারাদিন কাজ করে দুই কেজি মোটা চালও তাদের ভাগ্যে জুটছে না। এমন কথাই জানালেন সাধুহাটি এলাকার ভ্যানচালক আবেদ আলী বেহারা। তিনি বলেছেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে চাল, ডাল, তেল ও তরিতরকারী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঝিনাইদহ শহরের কলাবাগান পাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, দোকানে সারাদিন দুই শ’ টাকাও ইনকাম নেই। বেচাকেনা কমে গেছে। তাই এখন তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা ভাত খাচ্ছি। মধ্য আয়ের চাকরিজীবীরাও জানালেন একই কথা। তাদের ভাষ্য চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ অবস্থায় ঝিনাইদহের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন ২/১ দিনের মধ্যে চালের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তাদের ভাষ্য ভারত থেকে চাল আসবে না- এমন গুজবে হঠাৎ করেই চাল ও ধানের বাজার চড়া হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ঝিনাইদহের চাল ব্যবসায়ী তপন কুমার অভিযোগ করেন, আমরা যেদিন টিভিতে ভারত থেকে চাল আসছে না বলে খবর শুনতে পারি, সেদিন থেকেই চাল ও ধানের বাজার চড়া হয়ে যায়। আরেক চাল ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে যে চাল আমদানি হচ্ছে সেগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ তারা জিরো মার্জিনে চাল আমদানি করে কেজিতে ৫/৭ টাকা দাম নিচ্ছে। তারা পাইকারি বাজারে যদি সহনশীল দামে চাল বিক্রি করতো তবে কেজিপ্রতি আরো ৩/৪ টাকা করে চালের দাম কমতে পারতো। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন জেলার বাইরে ট্রাক ট্রাক চাল বিক্রি করছি। বাজারে ধান বা চালের কোনো সংকট নেই। তবে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। মেছুয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন জানান, বাজারে ধানের কিছুটা সংকট রয়েছে। গ্রামের কিছু বড় কৃষক ও ব্যবসায়ী ধান মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে হয়তো চালের বাজার নরম হতে পারে। শৈলকুপার ভাটই বাজার এলাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার গোলাপ মেম্বার অভিযোগ করেন, সরকার সমর্থিত কিছু চাল ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ঝিনাইদহে চালের বাজার অস্থির হয়েছে। এদিকে রোববার ঝিনাইদহের চাল বাজার পরিদর্শন করে জানা গেছে, মিল থেকে মিনিকেট চাল ৫৩ টাকা কেজি কিনে পাইকারি বাজারে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর খুচরা বাজারে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। একই ভাবে মধ্যম চিকন চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর বাঁশমতি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। তবে ঝিনাইদহের বাজার থেকে মোটা চাল উধাও হয়ে গেছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত আবাদ মৌসুমে মোটা ধানের আবাদ হয়নি, তাই বাজারে মোটা চাল নেই। এদিকে ঝিনাইদহ  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, ঝিনাইদহ জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৬ টন ধান উদ্বৃত্ত থাকে। এখানে তো চালের সংকট হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি বছর ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৮ টন ধান উৎপাদন হয়। আর জেলার চাহিদা হচ্ছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৬২২ টন। বাকিটা উদ্বৃত্ত থাকে। চলতি আমন মৌসুমে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৪১ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে শংকর কুমার মজুমদার জানান।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=83469