১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৯:৫০

রোহিঙ্গারা আমাদের এক কাতারে এনেছে

দেখাঅদেখা

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে গোটা জাতি এখন এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ। রোহিঙ্গাদের যে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে দেশের মানুষ মর্মাহত। বাংলাদেশের সামর্থ্য সীমাবদ্ধ। নিজেদের হাজারো সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। এরপর একান্ত মানবিক কারণে এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। শুধু এই সহানুভূতি জানানোর মধ্যে তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ থাকলে তো চলবে না। রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে গিয়ে যাতে নিরাপদে নিজভূমে বসবাস করতে পারে, তার ব্যবস্থা বিশ্বসমাজকে করতে হবে। এ জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল করার যে জঘন্য প্রয়াস মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী চালাচ্ছে, তা বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা বংশানুক্রমে মিয়ানমারবাসী হলেও তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারে না। তাদের চলাফেরার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। আর এখন তাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক কাতারে শামিল। এই ঐক্য বজায় এবং সুদূঢ় করতে হবে। কেননা ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যাটির স্বরূপ কী দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল। এর ডালপালা কোন দিকে ছড়ায় তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগেও দেশের মানুষ অকাট্য ঐক্য গড়ে তুলেছিল উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে। ফলে গোটা জাতি এখনো উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের আরো একটু এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছে। রোহিঙ্গারা ২২টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। এসব পয়েন্টে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের থাকা উচিত, যাতে দুস্থ মানুষ এখানে এসে নতুন বিড়ম্বনায় না পড়ে। এসব পয়েন্টে এবং যেখানে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য টিম থাকা জরুরি। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্করা যাতে চিকিৎসা পায়। অনেক প্রসূতি নারীও রোহিঙ্গা মিছিলে রয়েছেন। তাদের প্রতিও নজর দেয়া উচিত, যাতে তাদের নিরাপদ প্রসব হয়। দেশে বহু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। ওষুধ ও চিকিৎসক দিয়ে সরকারকে সাহায্য করা এসব প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব। এত বড় সমস্যা সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত এবং তাদের কাজ করার সুযোগ করে দেয়া সরকারের কর্তব্য। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। কেননা এই বিপুল জনগোষ্ঠী যদি আশ্রয় নিতে এসে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে এবং রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তবে বড় ধরনের যে বিপর্যয় দেখা দেবে, তা সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

দঃখ হয় ত্রাণ বিতরণ নিয়েও সরকার এখন রাজনীতি করছে। বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাকবহর আটকে দিয়েছে পুলিশ। নিশ্চয়ই সরকারি মহলের নির্দেশনায় পুলিশ এই অমানবিক আচরণ করেছে। দুস্থদের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ত্রাণের। সেটাকে সেখানে পৌঁছতে না দেয়া মর্মান্তিক ব্যাপার। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অথচ একটি রাজনৈতিক দল যখন তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়ে দুস্থদের কাছে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, তখন এটা বিএনপির প্রতি বৈষম্য নয়, বরং দুস্থ রোহিঙ্গাদের সাথে অমানবিক আচরণ।

সরকারের একার পক্ষে যখন পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব নয়, তখন তো তাদের সবার প্রতি জানানো উচিত, তারা সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়ে দুস্থদের পাশে দাঁড়াক। তা না করে, তার উল্টোটা করার মাধ্যমে সরকার খুবই অন্যায় করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের এমন আচরণে সে ঐক্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মহল এখন এই ইস্যুতে যে সাড়া দিচ্ছে, তাদের কাছেও সরকারের এমন ভূমিকা খটকার সৃষ্টি করতে পারে, যা সামগ্রিক বিবেচনায় সঠিক হবে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে এবং এর আগে উগ্রবাদ দমনের বিষয়ে যে জাতীয় ঐক্য রচিত হয়েছে। এমন জাতীয় ঐক্য অন্য কোনো বিষয়ে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাট্টা হয়ে লড়াই করেছে, তেমন ঐক্য অবশ্য কখনো দেখা যায়নি; আর তা হয়তো হওয়াও কঠিন। আর যে দুই ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হলো, তেমন ঐক্য হলে আমরা অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারতাম। তেমন ঐক্য রচনার ক্ষেত্রে জাতীয় নেতৃবৃন্দের যে ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল তা অবশ্য দেখা যায় না। দেশ এগিয়ে যাবে নেতাদের অনুসরণে তাদের নীতি-আদর্শ ধারণ করে। এ বিষয়ে নেতৃবৃন্দের পিছিয়ে থাকা সঙ্গত নয়।
অথচ ঐক্য এ জন্য খুব প্রয়োজন। কারণ, এতে সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি সমাধানে বাড়তি শক্তি পাওয়া যায়। যারা ক্ষমতায় তারা নিজেদের শক্তিশালী মনে করেন। এই ঐক্য যে খুবই জরুরি ও যুক্তিযুক্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমস্যা সমাধানে যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের সাহস দৃঢ়তা পায়। এখন সবার উচিত হবে, বিশেষ করে সমাজে যাদের গুরুত্ব রয়েছে এটা উপলব্ধি করা এবং উপায় বের করা, যাতে দেশ কতগুলো মৌলিক ইস্যুতে দ্রুত জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো দূর করতে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উদ্যোগী হতে হবে। ন্যূনতম মৌলিক জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্য না থাকায় দেশ এগোতে পারছে না। এই বিভেদ রেখে উন্নয়নের যত পরিকল্পনা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এর ফলে দেশ সামনে বাড়তে পারবে না, দেশে সাধারণ মানুষের সমৃদ্ধি আসবে না। কয়েক দশক আগে বাংলাদেশের সাথে যেসব দেশ এক কদমে চলেছে, লক্ষ করলে দেখা যাবে তারা এখন বহু ক্রোশ পথ এগিয়ে গেছে। আমরা ধীর কদমে হাঁটতে হাঁটতে কেবলই পিছিয়ে পড়ছি। এগোতে গেলেই আমরা নানা কলহে লিপ্ত হয়ে শুধু পিছিয়েই থাকছি।

বাংলাদেশের জন্ম ও এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে একজন প্রাণপুরুষ তো আছেনই। এখানে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু আরো জাতীয় নেতা রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাশ থেকে অবদান রেখেছেন। এসব জাতীয় নেতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভেদ-মতপার্থক্য বিস্তর। কখনো কখনো লক্ষ করা যায় কোনো কোনো নেতার অবদানকে অস্বীকার করা হয়, অকারণে বিতর্ক তৈরি করে তাদের অবদান খাটো করা হয়। অথচ জাতি যদি তাদের নেতাদের খাটো করে, অস্বীকার করে তবে সব অর্জন শূন্য হয়ে যাবে। গোটা সমাজে বিভেদ-বিভক্তি দেখা দেবে, যা এখন দেশে বিরাজ করছে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি যদি বিরাজ করে তবে দেশে নেতা তৈরি হবে না। আর নেতাশূন্য দেশ হালবিহীন নৌকার মতো সামনে যাবে না, শুধু এক স্থানে দাঁড়িয়ে ঘুরপাক খাবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বারি বিন্দু যেমন অতল হ্রদ তৈরি করে, তেমনি নেতাদের সামষ্টিক অবদানই মহান জাতি হওয়ার গৌরব আমাদের দেবে। আমরা একটা ভালো সংবিধান পেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর দেশ গণতান্ত্রিক শাসনের স্বাদ পেয়েছিল। পথে ব্যত্যয় ঘটার পর আবার আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র পেয়েছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা উচ্চকিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে যার যার অবদান স্বীকার করে নেয়া হলে এ ময়দানে যে বিতর্ক তা প্রশমিত হতে পারে। এই প্রশমন যত দ্রুত করা যায় ততই মঙ্গল। জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্য কমাবে। জাতীয় নেতৃবৃন্দ নিয়ে বিতর্কের অবসান হলে অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্ক কমে যাবে।

দেশের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর শাসনব্যবস্থা। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে এখন কোনো বিভেদ না থাকলেও এর শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকলেও এর শুদ্ধতা নিয়ে নানা মত রয়েছে। আর থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। কারণ সংসদীয় শাসনে যে শর্তগুলো রয়েছে, যেমনÑ সব মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, সংসদে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনা করা এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছা। সংসদের মাধ্যমে সরকারের সব বিষয়ে জবাবদিহি নেয়া, একটি কার্যকর বিরোধী দল থাকা।

সংসদ দেশের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করবে। কিন্তু এখন আর সংসদীয় ব্যবস্থায় এসবের চর্চা নেই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যদি কথা বলা হয়, তবে হাল আমলে যে নির্বাচন হচ্ছে তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন মানে জনসাধারণের স্বাধীনভাবে তা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অধিকার। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষমতাশালীরা ভোটব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে নিয়েছে। তাদের পেটোয়া বাহিনী ভোটকেন্দ্র দখল করে নিজেরাই ব্যালট নিয়ে তাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। এভাবে মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে। অথবা এমনও নির্বাচন সাজানো হয়, যেখানে কেউ প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকে না। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাধররা নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে জনগণের ভোট ছাড়াই। আর এভাবেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটছে। আগামী নির্বাচনের স্বরূপ কী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভোটব্যবস্থাকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক করার জন্য নির্বাচন যাতে একটি মাস্তান ঠেকানোর সহায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে, তার দাবি উঠছে। কিন্তু এতে ক্ষমতাসীনদের মত নেই। তাই নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে না পারলে এখনকার মতো এক দলের সংসদ হবে। সেখানে সরকারের কোনো জবাবদিহিও হবে না, সরকারের মর্জির বাইরে কোনো আলোচনাও হবে না। ফলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়বে। সরকার যেমন গণতন্ত্রের অংশ, তেমনি বিরোধী দলও গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। একটি গণতান্ত্রিক ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের জন্য দরকার আইনি সহায়তা, আর তা আসতে হবে সংসদ থেকে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার বদল হয়। কিন্তু পররাষ্ট্র বিষয়ে কতগুলো মৌলিক ব্যাপারে ঐকমত্যের কারণে সেসব মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। সব সরকারের আমলেই সেই মৌলিক নীতিগুলো অনুসৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কিছু মৌলিক দিকনির্দেশনা ছিল। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। তা নিয়ে পরবর্তীকালে মতপার্থক্য লক্ষ করা গেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারভেদে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার অনুশীলন হয় বটে, কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি ও দেশ রক্ষা সম্পর্কে সরকারভেদেও তারতম্য লক্ষ করা যায় না। যেমনÑ ভারতে সরকার পরিবর্তন ঘটলেও উল্লিখিত দুই নীতির তেমন হেরফের দেখা যায় না। এসব নীতি যেহেতু নির্ধারিত হয় দেশের স্বার্থে এবং জনগণের অভিব্যক্তির মাধ্যমে। তাই জনগণের মানস পরিবর্তন না ঘটলে তার কোনো ভিন্নতা হয় না। আমাদের দেশে এসব প্রশ্ন খুব একটা গুরুত্ব পায় না। পৃথিবীর সব দেশেই জনগণের অভিপ্রায় ও অভিব্যক্তিকে মূল্যবান গণ্য করা হয়। আমাদের এখানে তার গুরুত্ব খুব একটা নেই। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে এ দেশের মানুষ বাঙালি, কিন্তু নাগরিক হিসেবে তারা বাংলাদেশী। এ বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে তুমুল বির্তক ও মতপার্থক্য। বিষয়টি এমন কিছু জটিল নয়। তারপরও এই বিষয়ে রয়েছে তর্ক। এ নিয়ে যেন একটা গো রয়েছে, যুক্তি মানতে একটি শ্রেণী মোটেই রাজি নয়। অথচ এই সামান্য বিষয়ে সুরাহা হলে দেশের মানুষকে বিভাজন থেকে মুক্ত করা যেত। ঐক্যবদ্ধ জাতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। আর বিভাজন মানুষকে আত্মকলহে লিপ্ত করে দুর্বল করে ফেলে। দুর্বল মানুষ কোনো বড় কাজে বিজয়ী হতে পারে না। পরাজয় তাকে বারবার ছুঁয়ে যায়। আত্মিক শক্তির অভাবে হীনম্মন্য হয়ে ওঠে মানুষ। জাতীয় পরিচয় নিয়ে যদি সঙ্কট থাকে তাহলে এই সঙ্কট অন্যত্র ছড়িয়ে বহুমুখী সমস্যার জন্ম দেবে। শুধু যদি বাঙালি বলে জাতীয় পরিচয় নির্বাচিত হয়, তবে অন্যান্য যে উপজাতি দেশে রয়েছে তাদের জাতিসত্তাকে অস্বীকার করা হবে, যা উপজাতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ-বেদনা সৃষ্টি করবে। বঞ্চিত হওয়ার কারণে হিংসাবিদ্বেষের জন্ম নিতে পারে।
এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ বিষয়ে একমত হতে পারি, জনগণের ঐক্য জাতির প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তিকে সচল ও সজীব করে তোলা কর্তব্য। এই ঐক্য নির্মাণে আমাদের সব মত ও পথের নেতাদের অবদান রাখা সমীচীন। বৃহত্তর সংহতির জন্য ছোটখাটো মতপার্তক্য ভুলে যেতে হবে। দেশ ও জাতি খুব কম সময় অতিক্রম করে আসেনি। এ সময়ে আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান গড়তে পারিনি। সেজন্য হতাশায় ভোগা নয়, আশায় বুক বেঁধে অগ্রসর হতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252610