১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:৪৪

ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকানোর উদ্যোগ নেই

চালের বাজার প্রথম অস্থির হয় গত এপ্রিলে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর। তিন মাস না যেতেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ৩২ জেলায় বন্যার কারণে আউশ ও আমনের ওপর বড় ধরনের আঘাত আসে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার দুই দফায় আমদানি শুল্ক কমালেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওএমএস তথা খোলাবাজারে চাল বিতরণ করতে গিয়ে সরকারের খাদ্যগুদামে মজুদও কমে গেছে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে দেশের চালকল মালিক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চার মাসের ব্যবধানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২০ টাকারও বেশি। খুচরা, পাইকারি বাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানেই কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৯-১০ টাকা।
সরকার বলছে, দেশে চালের মজুদ রয়েছে এক কোটি টনের ওপরে। কিন্তু বাজারে চালের দাম কমছেই না, উল্টো লাফিয়ে বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চালের বাজারে যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কিংবা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠান চালের বাজারে কোনো অভিযান না চালানোয় চাল ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ভারত দেড় মাসের জন্য বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে—এমন গুজব ছড়িয়েও চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে আমদানিকারক-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। চালকল মালিকদের চাল মজুদ করে রাখার প্রমাণ মেলে কুষ্টিয়ার খাজানগরে একটি চালকলে।
চালের দাম খুব শিগগির কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আগামী বোরো মৌসুমের আগে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে আজ রবিবার থেকে আবার খোলাবাজারে চাল বিতরণ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর চালের দাম কমে কি না, সেদিকে নজর থাকছে সরকারের নীতিনির্ধাকদের।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চাল আমদানিসহ কিছু উদ্যোগ নিলেও তাতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। উল্টো চিকন চালের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। আর প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় ঠেকেছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণির ভোক্তাদেরই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চালকল মালিকদের ষড়যন্ত্র এবং সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম যেমন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রেও সরকারকে হোঁচট খেতে হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কোনো কথা বলব না। ’ তবে চালের বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, চালের মূল্য নির্ধারিত না থাকায় অধিদপ্তরের পক্ষে বাজারে অভিযান চালিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে চাল আমদানির কথা বলা হলেও ব্যবসায়ীরা বলছে, আমদানীকৃত চাল তেমন একটা আসেনি। গুদামে অভিযান চালানো হলেও সেখানে দেখা যায় চাল নেই। তারা আমদানীকৃত চাল কোথায় রাখছে, তা আমাদের জানা নেই। ’

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যে মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলেও চালের বাজারে সরকারি কোনো নজরদারি নেই। চালের বাজারে এখন মহাসংকট চলছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল কোনো সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো রকম উদ্যোগ নেই। এ কারণে বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও সরবরাহ লাইনে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে চাল ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, আমদানীকৃত চালের মজুদ মনিটর করা হলে দ্রুত সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চালের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে নিঃসন্দেহে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেটা অনেক দেরিতে নেওয়ায় বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। আবার সরকারের মজুদ কম থাকায় ব্যবসায়ীরা মনে করছে, এখন যদি দাম বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সরকার বাজারে কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না। এখন সরকার যদি দ্রুত মজুদ বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণটা আরো দীর্ঘায়িত হবে। মানুষের কষ্টও বাড়বে। তিনি আরো বলেন, ‘এখন হয়তো চার লাখ টনের মতো চাল মজুদ রয়েছে; কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এটাকে ১০-১২ লাখ টনে নিয়ে যেতে হবে এবং খোলাবাজারে প্রচুর পরিমাণে চাল বিক্রি করতে হবে। পাশাপাশি যারা মজুদ গড়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ’

রাজধানীর বেশ কিছু খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের (গুটি বা স্বর্ণা) দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি সাত টাকা। এই চাল বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা দরে, যা আগে বিক্রি হতো ৪২ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের চিকন চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা দরে। এর মধ্যে ভালো মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬৫-৭০ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬২-৬৫ টাকা, সাধারণ মানের পাইজাম ৫৫-৫৮ টাকা, ভালো মানের পাইজাম ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিআর ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। অথচ অন্যান্যবার এই সময়ে চালের দাম গড়ে ৪০ টাকার মধ্যেই ছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বেসরকারি পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে যে চাল এসেছে, তাতে এত সংকট হওয়ার কথা নয়। তাঁরা বলছেন, দেশে যথেষ্ট চাল আছে। কিন্তু সেই চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মজুদ করে রেখেছে। কৃষকদের কাছে এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধান নেই। পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকদের মতে, সরকার দুই দফায় চালের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আগেভাগে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না। তা ছাড়া সরকারের মজুদ কমে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে অসাধু একটি ব্যবসায়ীচক্র। ফলে চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। চালের বাজারে এই অস্থিরতার পেছনে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিলারদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ও ভোক্তারা।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রাইস ও হাস্কিং মিলের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সংগঠনের তরফ থেকে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলন করব। সেখানে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। ’
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে চালের চাহিদা বছরে তিন কোটি টনের মতো। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সরকার খাদ্যগুদামে চাল মজুদ করে রাখে। সরকারের খাদ্যগুদামে চালের মজুদ এখন তলানিতে। মাত্র চার লাখ টনের মতো চাল মজুদ আছে সরকারের হাতে। সরকারের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কাছে চালের মজুদ কেমন, তা সরকারের জানা নেই। খাদ্য মজুদ আইন নামের একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো সেটি আলোর মুখ দেখেনি। সেই কারণে ব্যবসায়ীদের হাতে চালের মজুদ কেমন আছে, সেটি সরকারের পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে চালের মজুদ নেই।

খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগ ওঠায় মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দাম কমাতে করণীয় ঠিক করতে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করতে যাচ্ছে সরকার।
অবশ্য চাল মজুদের বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিলাররা একে-অন্যকে দোষারোপ শুরু করেছে। মিলাররা বলছে, চালের বড় সংকট থাকায় সরবরাহ কম। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, চাল থাকার পরও চাহিদা অনুযায়ী মিল থেকে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড্ডার কামরুল রাইস এজেন্সির (পাইকারি বিক্রেতা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল হাসান মিন্টু এবং কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ট্রেডার্সের বিক্রেতা নাজির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা মিলগুলোতে যে পরিমাণ চালের অর্ডার দিচ্ছেন, তা পাচ্ছেন না। যদিও সপ্তাহ দুয়েক আগেই চালের কোনো সংকটের কথা তারা বলেনি। তবে সরেজমিনে গিয়ে এসব পাইকারি দোকানে প্রচুর পরিমাণ চাল দেখতে পাওয়া গেছে।

সরকারি হিসাব মতে, দুটি বন্যা ও ব্লাস্ট রোগে ২০ লাখ টনের মতো চালের ক্ষতি হয়েছে। যদিও সরকারের শুল্ক কমানোর (দুই ধাপে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নিয়ে আসা) সুবিধা কাজে লাগিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। আরো প্রায় ১৭ লাখ টনের এলসি খোলা হয়েছে, যেগুলো দেশে আসছে।
হাতিরপুলের ভাই ভাই স্টোরের মোখলেছুর মিয়াসহ কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন, কারণ বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। তবে চালের দাম বেশি হওয়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দায়ী বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমলে বলে, পুরনো চাল তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পুরনো চাল থাকার পরও যখন দাম বাড়ে, তখন তারা বর্ধিত দাম যোগ করেই তা বিক্রি করে। এটিও চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ। ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে রাসেল তরফদার গতকাল শনিবার অভিযোগ করে বলেন, ‘যে দোকান থেকে নিয়মিত চাল কিনি, সেখানে এখন বর্ধিত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। যদিও আমি দেখেছি, তিনি পুরনো বস্তা থেকেই আমাদের চাল দিচ্ছেন। কিন্তু দামটা বসিয়েছেন নতুন করে। ’ একই অভিযোগ ওই দোকানের ক্রেতা আলতাফ হোসেনেরও।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসা জরুরি। বিদেশ থেকে চাল আমদানির পেছনে না ছুটে দেশের অভ্যন্তরে যাদের হাতে চাল রয়েছে, সেই চাল বাজারে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি করতে পারলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। ’
মিল মালিকদের সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘সব দোষ আমাদের ঘাড়ে দেওয়া হচ্ছে। চালের সংকট রয়েছে—এটা সবাই জানে, যা সরকার স্বীকার করছে না। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা যেভাবে বলছে, তাদের গুদামগুলোও সরকারের তলিয়ে দেখা উচিত। কারণ তাদের কাছেও অনেক চাল থাকার কথা। ’

অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ : চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতি। এ নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি চালের গুদামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যেন আতঙ্ক না ছাড়ায় সে জন্য আগামী মঙ্গলবার চালকল মালিক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার।

গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সরকারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এর মূল্য বৃদ্ধিতে তৎপর রয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম রোধকরণসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, চালের মূল্য গ্রহণযোগ্যভাবে স্থিতিশীল রাখা ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ চিঠি পাওয়ার আগের দিন অর্থাৎ গত সোমবার কুষ্টিয়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি চাল ব্যবসায়ী রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আগে কেনা ধানের বর্তমান বাজারমূল্য দেখিয়ে চাল বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টের বিরুদ্ধে।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল ঢাকায় : বাংলাদেশে চাল বিক্রি করার জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল ঢাকায় এসেছে। প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে আজ বৈঠক করবেন খাদ্যসচিব কায়কোবাদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই বৈঠকে মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির পরিমাণ ও দাম নির্ধারণ করা হবে। চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে চাল আমদানির জন্য গত সপ্তাহে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মিয়ানমার গেলে সমালোচনা শুরু হয়।

বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি স্বাভাবিক : এদিকে আমাদের বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর ভুয়া চিঠি তৈরি গুজব রটানোর পরও বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্বাভাবিক রয়েছে চাল আমদানি। আলোচিত চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত। এ গুজবে বাজারে চালের মূল্য কেজিপ্রতি দু-তিন টাকা করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। চালের বাজারমূল্য অস্থিতিশীল করতে একটি মহল বন্দর এলাকায় এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন বলেন, ভারত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে—এমন ধরনের ভুয়া খবরের মধ্যেও বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। চাল বন্দর থেকে দ্রুত খালাসের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আমদানিকারক মিলন রহমান জানান, বাজারে ১২ সেপ্টেম্বর মূল্য বেড়ে স্বর্ণা চাল ৪৩ টাকা ও মিনিকেট চাল ৫১ টাকা দরে বিক্রি হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর স্বর্ণা চাল ৪৪.৫০ টাকা ও মিনিকেট চাল ৫২.৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর স্বর্ণা চাল ৪৫/৪৬ টাকা ও মিনিকেট ৫৩/৫৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর স্বর্ণা চাল ৪৮/৪৯ ও মিনিকেট চাল ৫৭/৫৮ টাকা দরে বিক্রি হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ২৪০ টন, ১৩ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ৭৫৯ টন, ১৪ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ৫৭০ টন, ১৫ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ২৭৭ টন এবং ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত এক হাজার ৫১৮ টন চাল আমদানি হয়েছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/09/17/543585