১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:৪২

চালের দাম বাড়া থামছে না

অস্থির চালের বাজার। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কমার কোনো লক্ষণই নেই। ভালমানের চালের কেজি ৭০ টাকায় ঠেকেছে। সাধারণ মোটা চালও ৫৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা পর্যন্ত। আর সরু চাল ৬৮ টাকায়। বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। গত কয়েক দিনে কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে দাম। সকালে যে দামে বিক্রি হচ্ছে বিকালে নেয়া হচ্ছে এর চেয়ে বেশি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের চালের বাজারেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। মোটা চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চাল কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত বাজার মনিটরিং, অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা, বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত চাল আমদানি করা, চাল আমদানি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সহজীকরণ, চাল নিয়ে কূটনীতি চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। একই সঙ্গে দেশের চালকল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
টিসিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। আর মাসিক মূল্যের ভিত্তিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৮.১৮ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে মোটা চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা। আর বর্তমানে এই মানের চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা দরে। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৯ টাকা। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরু চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা। গত বছর এই মানের চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। এখন উত্তম মানের নাজির ও মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর বর্তমানে সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই মানের চালের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। পাইজাম ও লতা উত্তম মানের ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর সাধারণ মানের ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই মানের চালের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এদিকে স্বর্ণা ও চায়না ইরি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়। সংস্থাটির তথ্য মতে, মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৬.০৭ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ১৭.৫৯, উত্তম মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ১৪.৬৬, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চাল ১৮.৫৬, উত্তম মানের পাইজাম ও লতা চাল ১৮.৯৫, স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দাম বেড়েছে ১৮.১৮ শতাংশ।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভারত ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে-এমন একটি খবরে চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালকের নাম সংবলিত ওই পত্রে কারোর স্বাক্ষর না থাকায় এ নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল তৈরির পাশাপাশি একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। যার সুযোগ নিচ্ছেন ভারতীয় চাল রপ্তানিকারক ও দেশীয় আমদানিকারকরা।

রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবচেয়ে কম দামি চাল ৫৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগেই বাজারে এই চাল বিক্রি হতো ৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ৫৫ টাকা কেজি দরে। এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার ওপরে। এ সময়ে কোনো কোনো দিন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা। আবার চালের দামের ক্ষেত্রে এক বাজারেই ভিন্ন ভিন্ন দাম পাওয়া গেছে।
চালের দাম কমার কোনো আশা দেখছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। উল্টো দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। বিক্রেতারা জানান, এখন যে দামে তারা চাল বিক্রি করছেন, দু-একদিন পরে তাদের আরো বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কেননা তাদের এখন কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিলারসহ সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন তারা।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, চালের বাজারে স্থিরতা আনতে এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ করতে হবে। কম দামের চাল বাজারে ছাড়তে হবে। আর যারা দাম বাড়াচ্ছে, তদন্ত করে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে বাস্তবিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
হাতিরপুল এলাকার এক রিকশাচালক বলেন, বাজারে তো ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাইলই নাই। আমরা গরিব মানুষ, মোটা চাইলই খাই। তাও এহন ৫০, ৫২ টাকা কেজি। আমার সংসারে মানুষ ৫ জন। দৈনিক ৩ কেজি চাইল কেনা লাগে আমার। রিকশা চালায়া যা আয় করি তা যদি চাইল কিনতেই শেষ হইয়্যা যায়, তাইলে সংসারের অন্য খরচ ক্যামনে চালামু?

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=83363