১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:৫৪

নির্দেশনা ছাড়াই প্রশ্নপত্রে ব্যতিক্রম সমন্বয়হীনতার অভিযোগ

এবারো সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘গ’ ইউনিটভুক্ত ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। গত বছর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রশ্নপত্রের এক সেটে একটি প্রশ্ন কম ছিল। ছিল ২০টিরও বেশি বানান ভুল। একটি প্রশ্নের অপশনে নেই সঠিক উত্তর। এ সমস্যার মধ্যেও অনুষ্ঠিত পরীক্ষা ঘটেছে এক দশক সময়ের রেকর্ড ফল বিপর্যয়। এ ছাড়া ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ঘটেছে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেয়ার মতো ঘটনা। সবশেষে এ বছর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় নির্দেশনা ছাড়াই প্রশ্নপত্রে ব্যতিক্রম করা হয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে প্রশ্নপত্রে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ওয়েবসাইটে অন্য চারটি ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকা দেয়া থাকলেও ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকা দেয়া হয়নি। অন্যান্য ইউনিট তাদের নির্দেশিকায় প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে কতটি অপশন থাকবে এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কত নম্বর কাটা যাবে তা স্পষ্ট করলেও ‘গ’ ইউনিট সেটি করেনি। তাই এটি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ভর্তি ইচ্ছুকদের। এ বিষয়ে সুদূর রাজশাহী থেকে আসা সহিদুল ইসলাম নামের শিক্ষার্থী বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য যেমন স্বচ্ছতা অপরিহার্য। এর অংশ হিসেবেই শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পরীক্ষা ও ভর্তি নির্দেশিকা প্রদান অপরিহার্য। একটি সুষ্ঠু নির্দেশনা থাকলে পরীক্ষার প্রস্তুতিও ভালো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশিকা না দিয়েই এবারে প্রশ্নপত্রে ব্যতিক্রম এনেছে, যা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, সাংবাদিকদের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পরে গতকাল বিকেলে ‘গ’ ইউনিটের ওয়েবসাইটে ভর্তি নির্দেশিকা সংযোজন করা হয় বলে সূত্রে জানা যায়।

এ দিকে বহু নির্বাচনী পদ্ধতির প্রশ্নপত্রে ব্যতিক্রম আনার পাশাপাশি মার্ক বণ্টনের পরিবর্তন না করায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন ভর্তি ইচ্ছুকরা। সঠিক উত্তরদাতা ও ভুল উত্তরদাতাদের পরীক্ষায় নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করা হয়নি বলে মনে করেন তারা। এ বছরের প্রশ্নপত্রে প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে চারটি অপশন রাখা হয়েছে। এর আগে প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে পাঁচটি করে অপশন রাখা হতো। আর প্রতিটি ভুল প্রশ্নের জন্য কাটা হতো ০.২৪ নম্বর। অথচ এবার অপশন কমিয়ে আনা হলেও মাইনাস মার্ক আগের মতোই রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ইউনিটের ভর্তি পরীার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ভুলের জন্য ০.৩০ নম্বর করে কাটা হয়। তারা প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে চারটি করে অপশন দিয়ে থাকে; যাতে ভুল ও সঠিক উত্তরদাতাদের মধ্যে ভালো সমন্বয় হয়নি বলে মন্তব্য শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে রাজধানীর সাভার মডেল কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, প্রশ্নপত্রে অপশন পাঁচটি থেকে কমিয়ে চারটি করার ক্ষেত্রে মাইনাস মার্কসও অন্যান্য ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে ০.৩০ করা উচিত ছিল। কারণ আমি একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলাম অথচ অন্য একজন ভুল উত্তর দিয়েও তার সাথে আমার পার্থক্য বেশি হচ্ছে না। বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

এ দিকে প্রশ্নপত্রের মধ্যেও ছিল কয়েক জায়গায় ব্যত্যয় ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েকজন ভর্তি ইচ্ছুকের দাবি পরীা কেন্দ্রে তাদের দেয়া প্রশ্নপত্রের মধ্যে ম্যানেজমেন্ট অংশ ছিল না। এ ছাড়া ফাইন্যান্সের অংশের সাথে মার্কেটিং অংশ জুড়ে দেয়ার অভিযোগ। পরে পরীক্ষার হলের দায়িত্বরত শিক্ষকেরা সে সমস্যার সমাধান করেন বলে জানায় রাজধানীর বারিধারা থেকে আসা শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ‘গ’ ইউনিট ভর্তি কমিটির সমন্বয়ক ও ব্যবসায় শিা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, কারো পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে কেউ এসব রটাচ্ছে। ভর্তি নির্দেশিকা তো ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। আমি এক মাস আগে সেটি দিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। নিজেও পরীক্ষা করে দেখেছি মাত্র। তবে এর আগে ওয়েবসাইটে নির্দেশনা না থাকার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

অপশন কমিয়ে আনার সাথে মাইনাস মার্কের সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো পরীার আগেই হয়েছে নতুন কিছু না। আর আমরা ০.৩০ কাটব না ০.২৪ কাটব তাতে কি আসে-যায়। আগের নিয়ম কিংবা অন্য ইউনিটের সাথে মিল রাখতে হবে কেন? এটা তো আমাদের পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে কেন? এটার তো কোনো রুলস নেই। আগে পাঁচটা ছিল এবার চারটা অপশন, এটা কোনো সমস্যা না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রশ্নপত্রের ব্যত্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আপনার সাথে একমত না। ভুল হয়নি। এমন দু-একটা কেইস থাকতে পারে। এটা ভাইরাল হওয়ার মতো কোনো বিষয় না। কারো পরীক্ষা খারাপ হলে এমন অভিযোগ তোলে। ৫০ হাজার কাগজের মধ্যে দু-একটায় এমন সমস্যা হতে পারে। এটা কোনো সমস্যা না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, কেউ এমন কিছু বলেনি। বলেছে অসাধারণ প্রশ্ন ও অসাধারণ পরীক্ষা হয়েছে। তবে এমন ঘটনা ঘটলে আমি জানব। কোথায় কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে আমি ডিনকে জিজ্ঞেস করব। তাও জানব যদি কোনো ব্যত্যয় হয়, তবে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ওভার অল পরীক্ষা সুন্দর হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে।
এ দিকে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথায়ও কোনো জালিয়াতির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভর্তি পরীা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ছাড়াই পরীা সম্পন্ন হয়েছে। সবার সতর্কতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আর প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করায় জালিয়াত চক্র ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য তার।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার স্বপ্নের জায়গা। পরীা সুষ্ঠুভাবে চলছে। কেউ জালিয়াতি করতে চাইলে ধরা পড়বে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় রয়েছে। উল্লেখ্য, ‘গ’ ইউনিটে এক হাজার ২৫০টি আসনের জন্য ২৯ হাজার ৯৫৪ জন ভর্তি ইচ্ছুক ভর্তি পরীায় অংশ নিয়েছে।
‘চ’ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীা আজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিাবর্ষে চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ বিএফএ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীা (সাধারণ জ্ঞান) অনুষ্ঠিত হবে আজ। এ পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠিত হবে। ‘চ’ ইউনিটে ১৩৫টি আসনের ভর্তি ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৭২ জন। ওই ভর্তি পরীক্ষা চারুকলা অনুষদসহ ক্যাম্পাসের মোট ১১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার ‘চ’ ইউনিটের অঙ্কন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ধফসরংংরড়হ.বরং.ফঁ.ধপ.নফ ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252075