১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:৫৩

এবারো পাচারের কবলে চামড়া

ট্যানারিগুলোতে মোকামরা পাবে ৭০ কোটি টাকা ; ভারতে প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৯০ টাকা দর

দেশীয় বাজারে ঈদ মওসুমে কাঁচা চামড়ার দর ভারতের চেয়ে কম নির্ধারণ করায় এবারো পাচার রোধ করা যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকেরা এবার যে দর নির্ধারণ করেছিলেন তাও পায়নি পশুকোরবানিকারক ও চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদারেরা। ফলে একশ্রেণীর মওসুমি ব্যবসায়ী এ চামড়া থেকে ফায়দা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের গত তিন বছরের ৭০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় তারাও সহজে চামড়া দিচ্ছেন না। আর্থিক সঙ্কটে অনেক মোকামের মালিকও এবার চামড়া কিনতে পারেনি। অন্য দিকে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এসব এলাকার চামড়া এবার মোকামে আসেনি। পাশের দেশে দাম বেশি থাকায় ওই সব সীমান্ত দিয়ে তা ভারতে চলে গেছে বলে আড়তদাররা বলছেন। এ দিকে গত শনিবার থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম আগামী দেড় মাস চলবে বলে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

বিটিএর তথ্য অনুযায়ী, এবার বৈঠকে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কেনার কথা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে এ দাম নির্ধারণ করা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকায় সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়া হয় ঈদের আগে। বর্তমানে দেশের চামড়ার বাজার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার। কোরবানির ঈদে মওসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে। আমাদের স্থানীয় বাজারে চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে। যার কারণে এখন দেশেই ২৫-৩০ শতাংশ স্থানীয় চামড়ার ব্যবহার হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প। দেশের চামড়া ব্যবসায় ঢাকার পোস্তার পরেই নাটোরের অবস্থান। দেশে সারা বছর যে চামড়া আসে তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় শুধু কোরবানির ঈদ থেকে। কোরবানির ঈদ থেকে প্রতি বছর ৬০ লাখ পিস চামড়া পাওয়া যায়। সারা দেশে ট্যানারির সংখ্যা ২১০টি। তবে চামড়াজাতপণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সারা বিশ্বে বছরে চামড়ার চাহিদা হলো ২ বিলিয়ন বর্গফুট। ২০ বিলিয়ন ডলারের বাজার। যার মধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করে থাকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। সারা বছরে দেশে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, কোরবানির ঈদে মোকামে কাঁচা চামড়ার বাজার থাকে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকার বেশি। সারা বছর যে চামড়া সংগ্রহ করা হয় তার বেশির ভাগ আসে এই মওসুম থেকে। এবার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হয়েছেন। কারণ তিন বছর ধরে ট্যানারিগুলোর কাছে যে বকেয়া টাকা রয়েছে তা পরিশোধ করছে না তারা। তাদের কাছে পাওনা ৭০ কোটি টাকা। ট্যানারি মালিকেরা তাদের কারখানা স্থানান্তর হচ্ছে এ অজুহাতে তিন বছর ধরে পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। ফলে মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন। যার কারণে এবার তারাও কম চামড়া কিনতে পেরেছেন। যারাই কিনেছেন তারা নগদে যেখানে বিক্রি করতে পারবেন সেখানে চামড়া ছাড়ছেন।

তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, এবার তারা খাসির তিন শ্রেণীর চামড়া কিনেছেন। প্রতি বর্গফুট যার গড় দর ১৭ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। গরুর চামড়া সর্বোচ্চ মানের কিনেছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া নি¤œমানের ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে। লবণ দেয়া এই চামড়া তারা বিক্রি করেন গরু ৭০ থেকে ৭২ টাকা দরে এবং নি¤œমানের ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে।
তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কারণে এবার কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এলাকা দিয়ে খোলা থাকায় রাতে চামড়া পাচার হয়েছে। কারণ ভারতে দর বাংলাদেশের চেয়েও অনেক বেশি। ওই সব এলাকার পশুর চামড়া এবার নাটোরে আসেনি। পাচার না হলে তাদের আড়তগুলোতে প্রতিবারের মতোই কিছু হলেও আসত।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত শনিবার থেকে আমরা লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করছি। নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি দেয়া হচ্ছে। যেসব কাঁচা চামড়ায় লবণ ভালোভাবে লাগানো হয়েছে এবং মান ভালো সেগুলোতে বেশি দাম দেয়া হবে। তিনি বলেন, এবার আমাদের লক্ষ্য ৮০ লাখ চামড়া কেনা।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252105