১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১১:০৪

উখিয়া (কক্সবাজার) পালংখালী সীমান্ত থেকে বিশেষ প্রতিবেদক

বর্মি বাহিনীর প্রথম টার্গেট আলেম ও হাফেজ

মিয়ানমারের বুচিডংয়ের মনুপাড়ার খবির উদ্দিনের বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে ছেলেসন্তান সব হারিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে একজন শেখ আহম্মেদ আলী ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেজ। আর নুরুল হাকিম ছিলেন আরবি শিক্ষিত মৌলভী। এই দুই সন্তানের কী অবস্থা জানেন না খবির উদ্দিন। শুধু দেখেছেন বর্মি বাহিনী ও মগরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে। খবির উদ্দিন বলেন, বর্মি বাহিনী ও মগদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে সেখানকার হাফেজ এবং আলেমদের হত্যা করা। খবির উদ্দিন নিজের চোখে অন্তত পাঁচজন আলেমকে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন।

১৩ দিন হেঁটে গতকাল বুধবার খবির উদ্দিন পরিবারের অবশিষ্ট আট সদস্যকে নিয়ে পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে পৌঁছেন। গতকাল সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় খবির উদ্দিনকে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই ছেলেকে তার চোখের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গেছে। পরিবারের নারী ও শিশু ছাড়া কেউ আর বেঁচে নেই। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালেও মগদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিছু দিন পরে বাপদাদার ভিটেমাটিতে চলে গেছেন। কিন্তু এবারের মতো করুণ পরিস্থিতি আর কোনো দিন দেখেননি। তিনি বলেন, এই বয়সে এসে ছেলেসন্তান হারিয়ে তাকে নিঃস্ব হতে হবে কোনো দিন চিন্তাও করেননি। চোখের সামনে দেখেছেন কিভাবে শত শত মানুষকে বর্মি বাহিনী ও মগরা হত্যা করেছে। পথে আসার সময় এক বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে ভেতরে তাকিয়ে দেখেন মাস ছয়েকের একটি শিশু রক্তের মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। পাশে পড়ে আছে নারী-পুরুষ এবং আরো কয়েকটি শিশুর লাশ। ওই শিশুটিকে খবির উদ্দিন নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। এ দিকে সেখানকার আলেমদের হত্যার ব্যাপারে আরো অনেক রোহিঙ্গার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। মৌলভী ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, তার ওস্তাত (শিক্ষক) তম্রু কোয়াইংচিবং মাদরাসার মাওলানা নুর আহম্মেদকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে বর্মি বাহিনী ও মগরা। মৌলভী ইউসুফ বলেন, কোনো আলেম ওলামাকে তারা আর বাঁচিয়ে রাখেনি। কোনো কোনো আলেমকে হাত-পা কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/251862