তমব্রু সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন তুলে হাতে নিয়েছে এক কিশোর
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১১:০২

এখনো আগুন জ্বলছে রোহিঙ্গা গ্রামে, চলছে গুলি-লুটপাট

কোনো কোনো এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি ; অপ্রতুল চিকিৎসা ও স্যানিটেশন

সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু আর ওপারে মিয়ানমারের মংডুর তমব্রু। দুই দেশের সীমান্তবর্তী দুই তমব্রুর বাসিন্দাদের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে। আত্মীয়তারও সম্পর্কও রয়েছে অনেকের। কিন্তু বর্মি বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে এ দেশে আসছেন। এখন ওপারের তমব্রুর সব মুসলিম রোহিঙ্গার স্থান হয়েছে এপারের তমব্রুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে। ওই তমব্রু সীমান্তে গিয়ে গতকাল দেখা যায় এখনো আগুন জ্বলছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামগুলোতে। লুটপাট চলছে বাড়িতে বাড়িতে। লুটপাটে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সেখানকার নাডালা বাহিনীও অংশ নিয়েছে।

গতকাল দুপুরের দিকে তমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গুলিবর্ষণের দৃশ্য। বর্মি সেনাবাহিনী ও নাডালা বাহিনীর সদস্যরা এক একটি মুসলিম বাড়িতে গুলি করতে করতে ঢুকছে। এরপর তারা লুটপাট করে মালামাল ট্রাকে তুলে নিচ্ছে। মালামাল ট্রাকে তোলা হলে ওই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এপারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানান, ওইসব বাড়িতে এখন কোনো মানুষ নেই। আগেই তারা নির্যাতনের কারণে সীমান্ত পার হয়ে এপারে চলে এসেছেন।
রোহিঙ্গারা জানান, যেসব মুসলিম পরিবার ধনী ছিল তাদের বাড়িঘর ও সম্পদ আগেই লুট হয়ে গেছে। গত ২৪ আগস্ট ওইসব বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় বর্মি বাহিনী ও সেখানকার উগ্র বৌদ্ধরা। অবশিষ্ট ছিল গরিব মুসলমানদের বাড়িঘরগুলো। সেগুলোতে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে।

মিয়ানমারের তমব্রুর নুরুল ইসলামের ছেলে মো: এনাম গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ধনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘর আগেই লুটপাট হয়ে গেছে। ২৪ আগস্ট তাদেরকে প্রথম টার্গেট করে বর্মি বাহিনী ও মগরা। এখন তারা গরিব মুসলমানদের বাড়িঘরে লুটপাট শুরু করেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে এভাবে ৫ শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে বলে এনাম জানান। তিনি বলেন, গত বুধবার ৯৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গতকাল দুপুরের দিকে তমব্রু সীমান্তে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বাড়ির পর বাড়ি জ্বলছিল। এ সময় অসহায় রোহিঙ্গারা এপারে দাঁড়িয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন। গতকাল দেখা যায় বর্মি সেনারা তাদের গাড়িতে করে লুটপাটের মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। এপার থেকে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট এ দৃশ্য দেখা যায়।
কমছে না শরণার্থীর স্রোত : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ¯্রােত অব্যাহত রয়েছে। গতকালও নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, চাকঢালা, উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছেন। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় ও জঙ্গল পেরিয়ে তারা এপারে আসছেন। ওই পথে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিপুলসংখ্যক মাইন পুঁতে রেখেছে বর্মি বাহিনী। এসব মাইন টপকে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। জাভেদ নামে তমব্রুর এক রোহিঙ্গা মুসলমান বলেন, সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শুরুর দিকেই তারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। তখন থেকেই রোহিঙ্গাদের ¯্রােত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে তমব্রু সীমান্তে দেখা যায় দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তবে আগের চেয়ে ¯্রােত অনেকটাই কম। জাভেদ বলেন, বুচিডংসহ অনেক এলাকার মানুষ এক শ’ মাইলের ওপর হেঁটে আসছেন। আবার অনেক পরিবার রওনা দেয়ার পর পরিবারের লোকজন অথবা সঙ্গীদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা হয়তো বনে জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন। সুযোগ বুঝে তারা হেঁটে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। এ কারণে তাদের আসতে সময় লাগছে। এই ¯্রােত কবে শেষ হবে তার নিশ্চয়তা নেই বলে জাভেদ জানান।

ত্রাণ সরবরাহে শৃঙ্খলা ফিরেছে : গতকাল সকাল থেকে কুতুপালং, বালুখালী, ঘুমধুম, তমব্রুসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরেছে। গতকাল কুতুপালং থেকে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য চোখে পড়ে। ত্রাণ বিতরণের সময় তারা খেয়াল রাখছেন। রাস্তাঘাটে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে জন্য রাস্তায় রাস্তায় আর্মড পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দীর্ঘ লাইন ধরে ত্রাণ নেয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে গতকাল। যে কারণে ত্রাণ সরবরাহকারীরাও কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। গতকাল দেখা গেছে শত শত যানবাহন ত্রাণ নিয়ে কুতুপালং দিয়ে প্রবেশ করছে।

কোনো কোনো এলাকায় ত্রাণ পৌঁছছে না : প্রধান সড়ক ও আশপাশের এলাকায় যেসব শরণার্থী রয়েছেন তারা ত্রাণ পেলেও বিভিন্ন দুর্গম এলাকা ও সীমান্তবর্তী স্থানগুলোয় যারা অবস্থান করছেন তারা তেমন ত্রাণ পাচ্ছেন না। গতকাল তমব্রু সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়, সেখানে একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে একটি বিশাল অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। সেখানকার অনেক রোহিঙ্গা নো ম্যান্স ল্যান্ডের ওপর তাঁবু গেড়েছেন। ওই স্থানে দুই হাজারের বেশি পরিবার অবস্থান করছে বলে সেখানকার রোহিঙ্গা আবু কালাম জানান। তিনি বলেন, ওখানে তেমন কোনো ত্রাণ পৌঁছছে না। স্থানীয় বাসিন্দারাও ততটা ধনী নয় যে তারা শরণার্থীদের সহায়তা করবেন।

ফুলি নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, এখানে আশ্রয় নেয়া কিছু ধনী রোহিঙ্গা রয়েছেন। তাদের দুই-চার শ’ মণ ধান হতো। গবাদি পশু, হাস-মুরগি ইত্যাদি অনেক কিছুই ছিল। একেবারে সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় তারা কিছু সম্পদ নিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ একেবারে নিঃস্ব হয়ে এসেছেন। এমনও দিন যায় যে দিন কোনোই ত্রাণই এখানে পৌঁছায় না। সে দিন এখানকার শরণার্থীদের না খেয়ে থাকতে হয়। পালংখালী আঞ্জুমান পাড়ার বাবুল মিয়ার মাছের ঘেরের বেঁড়িবাধে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। তাদের কাছেও তেমন ত্রাণ পৌঁছছে না। নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা বরশন পাড়া ক্যাম্পেও একই অবস্থা। দুর্গম এলাকায় এ আশ্রয়কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে ত্রাণদাতারা তেমন যাচ্ছেন না।

স্যানিটেশন ও চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল : রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। যে কারণে এখনো শরণার্থীরা রাস্তার পাশে এবং ঝোপজঙ্গলে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। যেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন সেখানে বসেই তাদের খাবার গ্রহণের দৃশ্য চোখে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মলমূত্র যেখানে মিশছে সেই পানি দিয়েই শরণার্থীরা হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার ও রান্নার কাজ করছেন। দুর্গন্ধে ওই সব ক্যাম্পে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অথচ স্থানাভাবে শরণার্থীরা সেখানেই দিন কাটাচ্ছেন।
শরণার্থীদের চিকিৎসাসেবারও তেমন সুবন্দোবস্ত নেই। গতকাল তমব্রু অস্থায়ী ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পাশের বিজিবির তাঁবুতে দুই নারী এসে বসে আছেন। তারা অসুস্থ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর তাঁবুতে দায়িত্বে থাকা এক বিজিবি সদস্য ওই দুই নারীকে জানান, চিকিৎসক আসতে দেরি হবে। পরে তারা চলে যান। কুতুপালং ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু ঘরে অসুস্থ মানুষ। যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

কুতুপালং ক্যাম্পের নাসু নামে এক নারী জানান, কয়েকটি স্থানে চিকিৎসা দেয়া হয় পালাক্রমে। কিন্তু সেখানে সিরিয়াল অনেক বড়। এ সিরিয়ালে চিকিৎসা পেতে হলে আবার না খেয়ে থাকতে হবে। চিকিৎসার জন্য বসে থাকতে হলে ত্রাণ পাবেন না। পরিবারের অন্য সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই তারা প্রথম খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত থাকছেন। সুলেখা নামে অপর এক নারী তার দুই সন্তান নিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন। দুই সন্তানের সারা শরীরে ফোস্কা পড়ে গেছে। কিন্তু কোথায় গেলে চিকিৎসা পাবেন, কিভাবে ওষুধ পাবেন তা জানেন না। কুতুপালং প্রধান সড়কের পাশে নুর আয়েশা নামে এক নারীকে নিয়ে তার স্বামী ও ছেলে দাঁড়িয়ে আছেন। নুর আয়েশা পেটের পীড়ায় ভুগছেন। তার স্বামী নবী হোসেন বলেন, কোথায় গেলে স্ত্রীর চিকিৎসা হবে তা জানা নেই তার।

বৃষ্টিতে বেড়েছে শরণার্থীদের কষ্ট : গতকাল বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশে কাদা আর কাদা। কোনো কোনো এলাকায় সেই কাদার মধ্যেই বসে থাকতে দেখা গেছে শরণার্থীদের। কুসুম নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ত্রাণের জন্য এভাবে বসে থাকতে হয়েছে। কুতুপালং ব্রিজের ঠিক পাশে এ নারী তার একটি সন্তান নিয়ে বসেছিলেন। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে ১২ দিন হেঁটে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সেখান থেকে গাড়িযোগে এসেছেন কুতুপালং। এখন আর শরীর চলে না। এক পা হেঁটে কোথাও যাবেন সেই শক্তিটুকু নেই। বৃষ্টির কারণে তাদের কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। বুধবার বিকেল থেকেই থেমে থেমে এই এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল।
বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট : নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির স্থায়ী-অস্থায়ী চেকপোস্ট ছাড়াও পুলিশি চেকপোস্ট নজরে পড়েছে গতকাল। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে দায়িত্বরত পুলিশের এএসআই শাহজাহান গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না পড়তে পারে সে জন্যই চেকপোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এর মধ্যেও অনেক শরাণার্থী সুযোগ খুঁজেন। এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

অনেক শরণার্থী মূল ক্যাম্পে যেতে পারছেন না : কোনো কোনো এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পের বাইরে যেতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল তমব্রু সীমান্তবর্তী ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, তাদের নদী পার হয়ে এপারেই আসতে দিচ্ছে না বিজিবি। এমনকি পানি নেয়ার জন্য এপারে এলেও ধমক খেতে হচ্ছে তাদের। ক্যাম্পে দায়িত্বরত এক বিজিবি সদস্য বলেন, তারা লোকালয়ে গিয়ে মিশে যেতে পারে এ আশঙ্কায় তাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ওই সদস্য বলেন, ওপারের রোহিঙ্গা এবং এপারের স্থানীয়দের ভাষায় অনেক মিল। একবার লোকালয়ে মিশে গেলে তাদের আর বের করা সম্ভব হবে না। ওপারের সাথে এপারের আত্মীয়তাও রয়েছে। ফলে তারা এপারের মানুষের সাথে মিশে যেতে পারেন। এতে পরে ঝামেলা হবে। এ দিকে, ওই সব ক্যাম্পের শরণার্থীরা বলেছেন, তারা মূল ক্যাম্পে যেতে পারলে জীবনধারণ সহজ হতো।

এক গাড়ি ত্রাণের সাথে ৫ গাড়ি মানুষ : ত্রাণদাতা অনেক সংগঠন ও ব্যক্তির ত্রাণদানের তুলনায় শোডাউন বেশি লক্ষ করা গেছে। এমনও দৃশ্য দেখা গেছে পাঁচ গাড়ি মানুষ এসেছেন এক গাড়ি ত্রাণ নিয়ে। এতে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জটলা ও কোনো কোনো এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কষ্ট হচ্ছে চলাফেরা করতে। কুতুপালং থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তায়ই বেশি সমস্যা হচ্ছে। প্রধান এই সড়কটিতে গত কয়েক দিনে তীব্র যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এই এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, ত্রাণবাহী নয়, এমন যানবাহন এই এলাকায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
জীবন বাঁচাতে স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন নবী হোসেন : দূর দেখে দেখে মনে হচ্ছিল কোনো পোঁটলা বহন করা হচ্ছে। কাছে গিয়ে বোঝা গেল পোঁটলার মধ্যে একজন মানুষ রয়েছেন। এক খণ্ড বাঁশের সাথে বেঁধে দু’জনে দু’মাথা কাঁধে নিয়ে পোঁটলাটি বহন করছিলেন। পোঁটলার মানুষটির জন্য হাসপাতাল খুঁজছিলেন তারা।

পোঁটলার মানুষটির নাম নুর আয়েশা। বয়স প্রায় ৪৫। আর তাকে যারা বহন করছিলেন তাদের একজন তার স্বামী নবী হোসেন এবং অপরজন ছেলে আব্দুল্লাহ। নুর আয়েশা কয়েক দিন ধরে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত। গত দু’দিন ধরে নুর আয়েশার কোনো হুঁশ নেই। দিনরাত চিৎকার করছেন। দু’দিন ধরে তার চিকিৎসার চেষ্টা চলছে, কিন্তু হাসপাতাল খুঁজে পাননি। মিয়ানমারের বুচিডংয়ের কোয়াঞ্চিবং তাদের বাড়ি। তারা কুতুপালং এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে অসুখের কারণে। নবী হোসেন বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে ঘুরছেন কিন্তু হাসপাতাল খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্যাম্পে যে অস্থায়ী চিকিৎসা সেবা আছে সেখানে নুর আয়েশার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পের লোকজন। বড় হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু বড় হাসপাতাল কোথায় আছে, কিভাবে সেখানে যাবেন তা জানেন না তিনি।
মানিকছড়িতে ২৪ রোহিঙ্গা উদ্ধার

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা আবদুল মান্নান জানান, উপজেলার পাঞ্জারাম পাড়া ও গুচ্ছগ্রামে এসে আশ্রয় নেওয়া ২৪ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুকে বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে মর্মে তথ্য পেয়ে মানিকছড়ি থানা পুলিশ চার দিকে নজরদারি শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পাঞ্জারাম ও গুচ্ছগ্রাম এলাকায় লুকিয়ে থাকা ২৪ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুকে আটক করেছে। এদের মধ্যে চারজন মহিলা, একজন পুরুষ ও ১৯টি শিশু রয়েছে। এসব শিশু ৬-১২ বছর বয়সী।
গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাহত তিন রোহিঙ্গা চমেকে ভর্তি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গুলি ও ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে আরো তিন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বুধবার রাতে টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। আহতরা হলেনÑ মোছাম্মৎ তসলিমা আক্তার (৩০) ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (২২) এবং মো: আবুল কাশেম (৮০)। এদের মধ্যে তসলিমা বাম পা ও বাম হাতে এবং আব্দুল্লাহ বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ। কাশেম ছুরিকাহত হয়েছেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/251867