১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৯

সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ৬ শ’৬১ কোটি টাকা

* প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন আইএমইডিতে পাঠানো হয় দেড় বছর পর
অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়েছে সিলেটে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে। ২০০১ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকালেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এজন্য সময় নিয়েছে এক যুগেরও বেশি। সময়ের পাশাপাশি বেড়েছে বাস্তবায়ন ব্যয়ও। ৩৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পন্নে তারা ব্যয় করেছে ১ হাজার ৪ কোটি টাকা। আর্থিকভাবে লোকসান এবং ঋণে জর্জরিত পিডিবির এ ধরনের প্রকল্পকে বিলাসিতা হিসেবে দেখছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র জানায়, আর্থিক খাত বহির্ভূত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসানে রয়েছে পিডিবি। গত আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের কাছ থেকে গত সাত বছরে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
তবে পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেছেন, প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। আর ব্যয়ের বিষয়টিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অনুমোদন নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিলেটে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয়কে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগও (আইএমইডি)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিষয়ে আইএমইডির মূল্যায়ন বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়েছে ১৯৩ শতাংশ। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণও হয়েছে অস্বাভাবিক। বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩৩৩ শতাংশ সময় বেশি ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় একাধিকবার সংশোধন করতে হয়েছে বিশদ প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)।

তবে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি থেকেও প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আইএমইডিতে প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা পাঠানো হয় দেড় বছর পর। তাতে দরপত্র আহ্বানের তারিখ, ক্রয় চুক্তিমূল্য, কাজ সম্পাদনের তারিখসহ প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যই দেয়নি পিডিবি।
জানা গেছে, ‘সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও সংশি¬ষ্ট সঞ্চালন গড়ে তোলা’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন দেয়া হয় ২০০১ সালের এপ্রিলে। বাস্তবায়নে মেয়াদ ধরা হয় ২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত। আর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৩৪২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দুই দফায় ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৭৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এতে বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০০১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের জুলাই পর্যন্ত। যদিও প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে।

বৈদেশিক অর্থায়ন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা ও টার্নকি অংশের দরপত্র আহ্বানে জটিলতার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়েছে বলে দাবি পিডিবির। পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে বিলম্ব ও মামলাকেও এজন্য দায়ী করছে প্রতিষ্ঠানটি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম বলেন, শুধু বিপিডিবি কেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাম্য নয়। অনেক দেশেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা দেখা দিলে তা বাতিল করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাঝপথেও প্রকল্প বাতিলের নজির আছে। কারণ এতে লোকসানের যে ঝুঁকি থাকে, তা বহন করার চেয়ে প্রকল্প বাতিল করা শ্রেয়।
বিপিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে মোট বিদ্যুতের ৬২ শতাংশ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ২১ শতাংশ। এছাড়া ডিজেল থেকে ৮ দশমিক ৭৮ ও কয়লা থেকে ২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ভারত থেকে আমদানি করা হয় বাকি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাসভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২ টাকারও কম। এর পরই রয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ। জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ে ৬ টাকা। আর সবচেয়ে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ। কিন্তু বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। ফলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, বাড়ছে পিডিবির লোকসানও।

http://www.dailysangram.com/post/299715