১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৮

বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে -জাতিসংঘ

* আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে হামলা নিধন বন্ধ করা
* আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় উদ্বেগ
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থা দুটি বলেছে, বাংলাদেশ এতো পরিমাণ জনসংখ্যার পরও মানবিকতা দেখিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকা। সহসা মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা না গেলে এ সপ্তাহেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সোয়া ৪ টায় রাজধানীর গুলশান-২ এ একটি হোটেলে আয়োজিত যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন সংস্থা দুটির কর্তা ব্যক্তি। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা-আইওএম এর পরিচালক (অপারেশনস) মোহাম্মদ আবদিকার মাহমুদ বলেন, যে পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে সে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। তাদের মৌলিক চাহিদা লঙ্ঘিত হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় পাবার পর খাদ্য, চিকিৎসা, ও স্যানিটেশন সমস্যায় ভুগছে অসংখ্য রোহিঙ্গা, বিশেষ করে নারী ও শিশু। এজন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দরকার।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার। তবে এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত পর্যায়ের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, যা উদ্বেগ ও কষ্টের। বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে মোহাম্মদ আবদিকার বলেন, বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা অত্যন্ত মানবিক ও প্রশংসার। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের হিসেব ও তথ্য রাখার প্রশংসা করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী কমিশনার জর্জ ওকোথ-উবু বলেন, প্রতিদিন ১০/২০ হাজার করে রোহিঙ্গা আসছে। জাতিসংঘ কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা, বাংলাদেশের পাশে থাকা, মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে হামলা, নিধন বন্ধ করা। তিনি বলেন, কেউ আশা করেনি বাংলাদেশে ৪ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেবে, সেটাই হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা না গেলে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার যদি সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী হয় তবে পাশে থেকে সহায়তা করবে আইওএম ও ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম ও বরাদ্দ বাড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকথ ওবো জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত খুলে দেয়ার পর নিরাপত্তার জন্য চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়েছে, যা সত্যি প্রশংসার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক সমস্যা আছে। আর শরণার্থীর ঢল শুরু হওয়ায় দেশটি জটিল সময় পার করছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশন কার্যালয়ে ইউএনএইচসিআরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জর্জ ওকথ ওবো বলেন, রোহিঙ্গাদের এই ঢল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন, এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিষয়ে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা কক্সবাজার গিয়েছিলেন। আমরাও গিয়েছিলাম। সে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কী উদ্যোগ নেয়া যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/299710