১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৩

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের

সু চির পুরস্কার প্রত্যাহারের চিন্তা

রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য মিয়ানমার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট সদস্যরা একই সাথে মানবাধিকার রক্ষা, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া শাখারভ পুরস্কার বাতিল করার চিন্তাভাবনা করছে।

গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে এমন মনোভাব প্রদর্শন করে বলা হয়, কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া সব বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রয়েছে। পার্লামেন্ট বস্তুচ্যুত মানুষদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে মানবিক সংস্থাগুলোকে সঙ্ঘাতপূর্ণ এলাকায় প্রবেশাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মিয়ানমার সরকার, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চিকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের জাতিগত ও ধর্মীয় ঘৃণা উসকে দেয়া এবং সামাজিক বৈষম্য ও নিপীড়ন বন্ধে দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। পার্লামেন্টের সদস্যরা মনে করিয়ে দেন, ১৯৯০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সু চিকে মানবাধিকার রক্ষা, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সম্মানজনক শাখারভ পুরস্কারে ভূষিত করেছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া যায় কি না তা চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলে মনে করেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসেল ম্যান্ডেলাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম শাখারভ পুরস্কারে ভূষিত করেছিল। ১৯৯০ সালে সু চিকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। তবে মিয়ানমার সামরিক জান্তার হাতে গৃহবন্দী থাকায় ২০১৩ সালের আগে তিনি পুরস্কারটি গ্রহণ করতে পারেননি।
১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা : জাতিসঙ্ঘের সংস্থা
কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংসতা চলতে থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে বলে মনে করছে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলো।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অপারেশন্স অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আবদিকার মোহামুদ এবং জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ-ওব্বো কক্সবাজার পরিদর্শন শেষে গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কার কথা জানান।
শরণার্থীদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে আবদিকার মোহামুদ বলেন, আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
গত ২৫ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা ঢলে নতুন করে প্রায় চার লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আসায় যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দিতে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাড়াকে এখনো যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সঙ্কটে বাংলাদেশ সরকার যে জরুরি সাড়া দিয়েছে তার প্রশংসা করে মোহামুদ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো অনেক কিছু করতে হবে।

ওকোথ-ওব্বো বলেন, আড়াই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় চার লাখ মানুষ আসায় বাংলাদেশ গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।
‘পরিস্থিতি বেশ জটিল’ মন্তব্য করে এর জন্য সমন্বিত পদেেপর আহ্বান জানান ওকোথ-ওব্বো। তিনি বলেন, সব ধরনের প্রয়োজনে নজর দিয়ে আমাদের কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এতে সহায়তার প্রস্তাব দেন তিনি। ওকোথ-ওব্বো বলেন, শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা বের করা এবং সঙ্কট মোকাবেলায় যথাযথ সাড়া দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য লিপিবদ্ধের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/251891