১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১:১৫

বাংলাদেশে ভারতের চাল রপ্তানি স্থগিত

আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতীয় কাস্টমস একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশকে। বেনাপোল শুল্ক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক আলোক চতুর্বেদীর স্বাক্ষর রয়েছে চিঠিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত সরকার বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ রাখলে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাস ভারত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করতে পারবে না। কারণ, তাদের দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যকেন্দ্রিক জনবান্ধব কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের খাদ্য বিতরণ করতে হচ্ছে। তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দফা বন্যা ও সরকারি মজুত কমার খবরে প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। বাজারের এই অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে তারা চালের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছেন টনপ্রতি ৬০-৭০ ডলার। এর মধ্যে ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে বিশাল প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এজন্য সরকারকে চাল আমদানি আরো বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গারা চলে এসেছে। ফলে সামনে চাল নিয়ে বাংলাদেশ বিশাল চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চাল মজুতের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সরকারি অভিযান শুরু হয়েছে। যাদের গোডাউনে চাল মজুতের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি চাল আমদানি হয় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। এ বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, দুদিন আগেও ভারত থেকে তারা চাল আমদানি করেছিলেন প্রতি টন ৪৮০-৫০০ ডলারে। এখন সেখানে চাওয়া হচ্ছে ৫৬০-৫৭০ ডলার।
বাংলাদেশের বাড়তি চাহিদার কারণেই রপ্তানি মূল্য বেড়েছে, তা স্বীকার করে ভারতের ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দ্রুত চাল সরবরাহ চাইছেন। এটা সম্ভব কেবল ভারতের পক্ষেই। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রপ্তানি আদেশ পাচ্ছেন। বাড়তি চাহিদার সুযোগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চালের দাম টনপ্রতি ১০ ডলার বাড়িয়েছিলেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আর গত তিন মাসের হিসাবে বেড়েছে ১০০-১২০ ডলার।
দেশের ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছেন। দেশের আমদানিকারকরা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। যে দামে চাল আমদানির জন্য ঈদের আগে এলসি খোলা হয়েছিল, সে দামে আর রপ্তানি করতে চাইছেন না তারা। বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে এলসি সংশোধন করতে হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা ও রত্না চাল পাইকারিতে (ট্রাক সেল) বিক্রি হয় ৪৫-৪৬ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও এসব চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪১-৪২ টাকা। একই চাল ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে।
পাইকারি ব্যবসায়ী ও ঢাকা বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন সরকার বলেন, ভারত আড়াই মাস চাল রপ্তানি বন্ধ করায় বাজারে বিশাল প্রভাব পড়বে। ভারত যাতে চাল রপ্তানি অব্যাহত রাখে এজন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এর পাশাপাশি সরকারকে চাল আমদানি আরো বাড়াতে পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী।
এদিকে যশোর প্রতিনিধি জানান, দেশের চালের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে চাহিদানুসারে মোটা ও চিকন চাল আমদানির জন্য কোটি কোটি টাকার এলসি ওপেন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের কথা ছিল বলে জানান চাল আমদানিকারকদের অন্যতম নেতা এ আর ট্রেডিং-এর স্বত্বাধিকারী আইনুল হক। তিনি বলেন, ভারতীয় এই সিদ্ধান্ত যদি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হয় তবে দেশের চালের সংকট দূর করা সম্ভব হবে না।
তবে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত চাল বন্ধ; ভাইরাল হওয়া চিঠির সত্যতা সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয় বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, এই ধরনের একটি চিঠির খবর আমরা পেয়েছি। কিন্তু চিঠিটি যিনি ইস্যু করেছেন তার কোনো স্বাক্ষর নেই। তাছাড়া, চিঠিটি সরকারি কোনো চ্যানেল থেকে এসেছে কিনা তাও নিশ্চিত নই। তবে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুই দেশের আমদানি- রপ্তানিকারকরা দৌড়ঝাঁপ করে আসল সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে অফিসিয়ালি যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তবে ওই চিঠির খবরে বেনাপোল, পেট্রাপোল, ভোমরা, দর্শনা, মংলাসহ সব পয়েন্টে চালের বাজার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকত হোসেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
চাল আমদানিকারক এসএম চঞ্চল ও ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ এবং প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, দেশের স্থানীয় বাজারে চালের চাহিদা মিটাতে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করছে। এসময়ে ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিলে প্রভাব পড়বে বাজারে। তবে ভারত চাল রপ্তানি অব্যাহত রাখবে বলে আশা করেন তারা। অচিরেই চালের দাম কমে আসবে বলে জানান তারা।
বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, চালের ওপর শুল্ক ১০% থেকে কমিয়ে সরকার ২% করায় বেনাপোল দিয়ে ১লা আগস্ট থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৯০৯ টন চাল ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। প্রতিদিন আসছে চাল। গতকাল এসেছে ২৩১৯ টন চাল।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82915&cat=2/