১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১:১৩

ইসি’র সংলাপে যা হচ্ছে

ঢাকঢোল পিটিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপের বড় একটি অংশ ছিল অংশীজন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপ। উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো আইনি কাঠামো ও প্রক্রিয়া প্রণয়নে এবং তা সংস্কারের প্রয়োজনে সকলের পরামর্শ গ্রহণ করা। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা ও সমন্বয়ের অভাবে সংলাপ শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি যা করছে সেটা যেন লোক দেখানো না হয়। তারা যা করছে সেটা আন্তরিকভাবে করতে হবে। তাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে হলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা অনেক কিছু সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারে। যেমন নির্বাচনকালীন সংসদ বিলুপ্তের বিষয়টি তারা সরকারের কাছে উত্থাপন করতে পারে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করার পরিকল্পনা রেখে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ সাজিয়েছিল ইসি। আর সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করার টার্গেট ছিল অক্টোবরে। কিন্তু সেই রোডম্যাপ অনুসারে এগোতে পারছে না তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করতে আরো একমাস বাড়তি সময় লাগতে পারে। এছাড়া আগামী ২৩ থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আফগানিস্তান সফরে থাকবেন। ওই সময়ে কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের সূচি রাখা হয়নি। এবিষয়ে জানতে চাইলে ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে সংলাপ শেষ করা হবে। সংলাপে ইসি’র এখতিয়ারের বাইরে থাকা যেসব বিষয় সেগুলো লিখিত আকারে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এদিকে সংলাপের দীর্ঘসূত্রতায় অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন রয়েছে। সামনে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ আরো বেশকিছু সিটিতে নির্বাচন রয়েছে। সংলাপে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারণে নির্বাচনের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংলাপ আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ এবং জনসংযোগ অধিশাখা। এই দুই শাখা থেকে সংলাপ বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল কাজ করছেন। সংলাপের ভেতরে ও বাইরের কাজও করছেন তারা। কিন্তু সংলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন কর্মকর্তারাও সংলাপে থাকছেন। চারজন উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও নিয়মিত সংলাপে অংশ নিচ্ছেন। ফলে তাদের নিজ নিজ দপ্তরের কাজের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবহন শাখা, নির্বাচন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধানরাও সংলাপে অংশ নিচ্ছেন। অথচ এই কাজের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংলাপে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কথা বলছে কম। নির্বাচন কমিশনাররা কথা বলছেন বেশি। একেকজন কমিশনার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত কথা বলছেন। ফলে সংলাপের মূল যে উদ্দেশ্য ছিল পরামর্শ গ্রহণ তা ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ক্ষেত্রে একদিনে তিনটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো যেত। অথবা একই সঙ্গে দুটি দলের সঙ্গে সংলাপ করা যেত। ফলে সময় নষ্ট হতো কম এবং সংলাপের পরিবেশ ঠিক থাকতো। ইসি সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপ অনুসারে গত ২৪শে আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। সংলাপের পাশাপাশি আইন সংস্কার, সীমানা পুনঃনির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও রয়েছে ইসি’র। কিন্তু সংলাপে আসা পরামর্শ নিয়ে সীমানা নির্ধারণ আইনের কথা থাকলেও তাড়াহুড়োর কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ইসি। পরবর্তীতে সমালোচনার কারণে সংলাপের পর সীমানা নির্ধারণ আইন ভেটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত আটটি দলের সঙ্গে সংলাপ করতে পেরেছে ইসি। এই সময়ের মধ্যে আরো দুইটি দলের সঙ্গে সংলাপের কথা থাকলেও দল দুটি সময় চেয়ে আবেদন করে। আগামী ১৭ই অক্টোবর জাতীয় পার্টি-জেপি ও এলডিপি’র সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করার পরিকল্পনা ইসি’র। ফলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ অনেকটা তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে হবে ইসিকে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82822&cat=6/