১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১:১১

এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে দুর্ভোগ

মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে গতকাল রাজধানীতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছিল। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্রই থৈথৈ পানি। বেশকিছু জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে শহরের একাধিক স্থানে শুরু হয় ভোগান্তি। কর্মব্যস্ত দিনে হঠাৎ বৃষ্টির হানায় নগরবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কর্ম সারতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। এমনিতেই নগরীর প্রধান পাঁচটি সড়কের মধ্যে চারটির অবস্থা বেহাল। খানাখন্দ- খোঁড়াখুঁড়িতে বছর জুড়েই চলে নগর ভোগান্তি। তার উপর সামান্য বৃষ্টি হলেই অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, গ্রিন রোড, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, গোড়ান, নন্দীপাড়া, আল মদিনার মোড়, রামপুরা, বনশ্রী, মতিঝিল, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মাদারটেক, নাজিমউদ্দিন রোড, ধানমন্ডি-২৭, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কালশি, বসুন্ধরা সিটির পেছনের গলি, পুরান ঢাকার একাধিক এলাকা থেকে শুরু করে নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর এই জলাবদ্ধতার কারণে পুরো নগর জুড়েই ছিল তীব্র যানজট। ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, খামারবাড়ি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁওসহ পুরো নগর জুড়েই ছিল যানজটের দাপট। সিগন্যালে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে বিরক্তি পোষণ করেন অনেক যাত্রী। সরজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল লক্ষণীয়। নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে বেহাল হয়ে পড়ে জীবনযাত্রা। মুগদার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন জানান, অল্প বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। ধীরে ধীরে সেই পানি নিচু ঘরে প্রবেশ করে। গত কয়েকদিন আগে ঘরে হাঁটু সমান পানি ছিল। সেই পানি শুকানোর আগেই আজ (গতকাল) আবার পানি প্রবেশ করেছে। বাসাবোর নূর আলী জানান, এই এলাকার সব ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। ময়লা আবর্জনা পড়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার রাস্তা বন্ধ। তাই অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা লেগে যায়। একই অবস্থা গোড়ান এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম জানান, নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষার সময়টা জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। আর যদি একটু বৃষ্টি হয় তবে আর দুর্ভোগের শেষ নাই। নোংরা পানিতে সয়লাব হয়ে থাকে এলাকার রাস্তাঘাট। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় থাকে না। মতিঝিলে বিকল্প বাসের চালক আনোয়ার জানান, আজ (গতকাল) সকাল থেকেই ঢাকায় তীব্র যানজট। গাড়ির চাকা যেন সামনে যাচ্ছে না। একই স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যানজটে আটকা পড়ে একদিকে যেমন আয় কম হয়। তেমনি নিজের কাছে ও যাত্রীদের কাছে অনেক সময় বিরক্তি চলে আসে। একই বাসের যাত্রী শাহনুর জানান, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তিনি মতিঝিলেই বাসে বসে আছেন। জরুরি কাজে মিরপুর যাবেন ঠিক কত সময়ে সেখানে পৌঁছাবেন তিনি জানেন না। বাংলামোটরে স্বাধীন বাসের যাত্রী সোহেল কাদির জানান, বনশ্রী থেকে দেড় ঘণ্টা আগে রওনা দিয়ে এখন মাত্র বাংলামোটর। তিনি বলেন, বনশ্রী থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এত সময় লাগে। বছরের পর বছর ধরে বেহাল এই রাস্তার সংস্কার করা হচ্ছে না। অথচ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। একই বাসের যাত্রী মৌচাকের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, ভাঙ্গা সড়কে যখন বৃষ্টির পানি জমে তখন চরম ভোগান্তি শুরু হয়। কাওরান বাজারের পান্থপথ সড়কে সিএনজি চালক রুবেল জানান, নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার প্রভাব সব সড়কে গিয়ে পড়ছে। তিনি জানান, বসুন্ধরার সামনের সড়কে প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও সিগন্যাল অতিক্রম করা যায় না। মিরপুরের বিহঙ্গ বাসের চালক জব্বার মিয়া জানান, মিরপুরের একাধিক এলাকায় পানি জমে আছে। ছোট অলিগলিতে জমে থাকা পানির প্রভাব বড় সড়কে এসে পড়ছে। যার কারণে যানজট লেগে আছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82906&cat=10/