১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১:০৭

ফুট ওভারব্র্রিজে কেন অনীহা

মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিমা আলম তিশাকে নিয়ে মা রীমা বেগম কাজীপাড়ার যে রাস্তা পার হচ্ছিলেন, এর অদূরেই রয়েছে একটি ফুট ওভারব্রিজ। তারা সেটি ব্যবহার না করে নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া ঘাতক বাস এসে কেড়ে নেয় তিশার প্রাণ। গত মঙ্গলবার দুপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গতকাল বুধবার সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুরের শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার ফুট ওভারব্রিজ দুটি ব্যবহার না করে পথচারীরা ব্যস্ত সড়ক দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন।

ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। তবে পথচারীরা বলছেন, তারা সময় বাঁচাতে ও কষ্ট কমাতে
উঁচু ফুট ওভারব্রিজে উঠছেন না। নগর পরিকল্পনাবিদরাও বলছেন, বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের অনুপযোগী। স্কুলের শিশুদের জন্য তো এগুলো আরও বিপজ্জনক।
রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় শুধু মিরপুরের স্কুলছাত্রী তিশাই নয়, রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্র শিশু হামিম শেখও মারা গেছে। একই বছর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ফুট ওভারব্রিজের পাশে রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রাণ হারায় যাত্রাবাড়ীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রিফাত ও তার মা।

গতকাল সারাদিন পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে শুরু করে মিরপুরের কাজীপাড়া পর্যন্ত অন্তত নয়টি ফুট ওভারব্রিজের পাশে অবস্থান করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী-পথচারীরা এগুলো ব্যবহারে উৎসাহী নয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ব্যস্ত সড়কে হেঁটে যাতায়াত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য ট্রাফিক বিভাগ সবসময় পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও পথচারীরা তা ব্যবহার না করে দুর্ঘটনায় পড়ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম সমকালকে বলেন, বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজই ব্যবহারের উপযোগী নয়। স্কুল শিশুদের জন্য এগুলো ব্যবহার করা আরও কঠিন। তবে তাদের এগুলো ব্যবহারে উৎসাহী করতে হবে। জেব্রাক্রসিং ও সড়কের ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা যাতে চলাচল করতে পারে, সে জন্য এগুলো রাখতে হবে। না হলে সড়ক পারাপার ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাবে। তবে তরুণদের অবশ্যই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে। এতে শহরের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বেইলি রোডের মোড়ে অফিসার্স ক্লাবের পাশের ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুলের নবম শ্রেণির দুই ছাত্র তামজিদুল ইসলাম হৃদয় ও সাবি্বর আহমেদ। এর কারণ সম্পর্কে তারা জানায়, শিক্ষকরা সাবধানে পথ চলতে বলেন। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের কথাও বলেন। কিন্তু এসব ব্রিজ অনেক উঁচু। বইয়ের ব্যাগ নিয়ে উঠতে কষ্ট হয়।
পুরান ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলের সামনেই একটি ফুট ওভারব্রিজ। এর উল্টোদিকে হিড ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়ালের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পারভীন ঝুমারার হাত ধরে তার মা লাকী জামান নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তিনি জানালেন, ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়িতে মাদকসেবীরা বসে থাকে। তাছাড়া বাচ্চা নিয়ে এত উঁচুতে ওঠাও কঠিন। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিচের সড়ক দিয়েই যেতে হয়।

'নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে'র চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনামুক্ত থাকতে পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তবে শুধু এতেই দুর্ঘটনা কমবে না। এ জন্য প্রশিক্ষিত চালক থাকতে হবে, চালকদের বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে। তিনি বলেন, আন্ডারপাস তৈরি করা হলে নারী-শিশু সব ধরনের পথচারী অনেক বেশি উপকৃত হবে।
ঢাকায় ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ জন। এ কারণে ৬৪ জন চালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ২৯ জন।

http://www.samakal.com/capital/article/1709755/