১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:১০

নিম্নমানের চাল বোঝাই ২ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে

দুটি জাহাজে করে প্রায় ৩২ হাজার টন নিম্নমানের চাল চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছে। এসব চাল আনা হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর এসব চাল গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আমদানিকারকরা এসব চাল বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
খাদ্যসচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব চাল সরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়নি। তবে খাদ্য অধিদপ্তর টেন্ডার দেওয়ার পর যাঁরা টেন্ডার পেয়েছেন তাঁরা সেসব চাল নিয়ে এসেছেন। এসব চাল না নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিভিন্ন শর্ত থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের দরপত্রে ৩ শতাংশ মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ চাল নেওয়া হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু দরদাতা প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ চাল নিয়ে এসেছে। এমভি ডায়মন্ড নামের জাহাজটি গত ১ সেপ্টেম্বর এবং থাই ভিম নামের জাহাজটি ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
আন্তর্জাতিক চাল ব্যবসায়ী ওরাম ইন্টারন্যাশনাল এসব চাল বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে নিম্নমানের চাল আসতেই পারে। সেগুলো গ্রহণ না করলেই হলো। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর যে চাল বা গম নষ্ট বলে ফেরত দেয় সেই চাল বা গমই কিনে নেয় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে ব্রাজিল থেকে পচা গম এনেছিল টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী দরদাতা। সেই পচা গম খাদ্য অধিদপ্তর ফেরত দিলেও সেই গম ফেরত যায়নি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এসব গম কম দামে কিনে নিয়েছিল। এবার চালের ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত এপ্রিলে হাওরে বন্যার পর সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। সেই টেন্ডারে ৫০ হাজার টন চাল সরবরাহের কার্যাদেশ পায় ওরাম ইন্টারন্যাশনাল। সেই সময় মোট দুই লাখ টন চালের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই বাংলাদেশ একের পর এক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যায়। হাওরের বন্যা শেষ হতে না হতেই ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। এরপর আসে পাহাড়ধস। আগাম বন্যার পর আসে বড় আকারের বন্যা। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছিল ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ। এসব কারণে দেশের প্রধান ফসল বোরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয় আউশ। মাঠে থাকা আমনও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রবিবার কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন বন্যা ও নানা কারণে ১০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়েছে।
এদিকে একের পর এক দুর্যোগের কারণে ত্রাণ দিতে গিয়ে সরকারের ত্রাণভাণ্ডার প্রায় শূন্য হয়ে যায়। যেখানে নিরাপদ খাদ্য মজুদ কমপক্ষে ১০ লাখ টন হওয়ার কথা সেখানে সরকারের মজুদ এক লাখ টনের নিচে নেমে আসে। এখনো এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকার। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত রবিবারের তথ্য অনুযায়ী সরকারের গুদামে চার লাখ ৫৪ হাজার টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। অথচ গত বছর এই সময় সরকারের মজুদ ছিল ১০ লাখ ৮৭ হাজার টন। মজুদের নাজুক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সরকার বেসরকারি আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করে। চালের আমদানি নিরুৎসাহ করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ হয় রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি)। ফলে ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুনতে হতো। এতে দেড় বছর ধরে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২০ জুন ২৮ শতাংশ থেকে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। ১৮ আগস্ট সেই শুল্ক ২ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শুল্ক হার কমানোর পর দেশে বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি বাড়তে থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেসরকারি পর্যায়ে দেশে চাল এসেছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টন। আরো ১৭ লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আর গত পুরো অর্থবছরে মাত্র এক লাখ ৩৩ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/09/13/542049