১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:০৯

ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পোশাক শিল্প মালিকরা ছুটছেন দেশের বাইরে

নিরাপত্তা শঙ্কা কেটে গেলেও অনেক দেশের ক্রেতা তৈরি পোশাকের অর্ডার দিতে বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়েই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য উদ্যোক্তারা ছুটছেন এক দেশ থেকে আরেক দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। সেই পোশাক রপ্তানি এখন বিপর্যয়ের মুখে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্যটি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.২০ শতাংশ। গত ১৫ বছরের মধ্যে পোশাক রপ্তানি আয়ে এটি সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। তাদের মতে, বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় আনতে পোশাক মালিকসহ সব ধরনের স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার এক বছর পরও বিদেশি ক্রেতাদের অনেকে বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। এখনো অনেক ক্রেতা ভয় পাচ্ছেন। তবে ঘটনার পর সরকারের যথাযথ উদ্যোগের ফলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের চেষ্টার ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ক্রেতাদের মধ্যে ভয় কাটেনি। সম্প্রতি ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক ও পোশাক ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল ব্যবসায়িক কাজে ইউরোপ সফরে গেছেন। বিষয়টি তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম, বিজনেস মিটিং-এ ইউরোপে যাচ্ছি। স্পেন-এর মাদ্রিদে ও বার্সেলোনায়, ফ্রান্স-এর প্যারিস এবং ইতালির মিলানে মিটিং শেষ করে দেশে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি ক্রেতা ও পর্যটকরা আসা কমিয়ে দেয়া শুরু করে মূলত ইতালি নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যার পর থেকেই। এরপর আরো কয়েকজন বিদেশির ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে? বিশেষ করে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে সফরে আসার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে পড়ে বিদেশিরা।
প্রসঙ্গত, গুলশান হামলার পর থেকে অর্ডার আনতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করতে হয়েছে। বিদেশি পর্যটকরা তাদের সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি সফর বাতিল করেছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি সম্মেলনও স্থগিত করা হয়েছে।

বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, দেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমেই যাচ্ছে। এ কমার পেছনে শুধু বিদেশি ক্রেতা দেশে না আসাই একমাত্র কারণ নয়। এর মধ্যে জঙ্গিবাদসহ ব্রেক্সিট, মুদ্রার দরপতন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ না করা। এগুলোই বড় ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গুলশান হামলার পর তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা কমেছে। বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে প্রচুর নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে। তখন বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা, ভয় ও শঙ্কার কারণে ব্যবসা কিছুদিন খারাপও গেছে। অনেক দিন আমাদের বাইরের দেশে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিটিংও করতে হয়েছে। তবে সবার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82738