১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:০৩

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতে দুই রকম ব্যয়

প্রতি কি.মি. মেরামত সিলেটে ১৫ লাখ, কুমিল্লায় ২৭.৭০ লাখ টাকা ; প্রতি কি.মি. উন্নয়ন সিলেটে ৮০ লাখ, কুমিল্লায় ৯১.৩০ লাখ টাকা ;দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ ব্যয় ২.৫০ কোটি টাকা

একই রাষ্ট্রের ভিন্ন জেলায় একই ধরনের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে দুই রকমের ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কগুলো মেরামত ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। আবার প্রকল্পের কাজের জন্য বিদেশে ও দেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এই নির্মাণকাজ করছে। বিষয়গুলো নিয়ে খোদ পরিকল্পনা কমিশনে প্রশ্ন তোলা হয় বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রায় ২২ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের এই ধরনের দু’টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে।

প্র্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব জেলায় সড়ক উন্নয়নে ব্যয় প্রতি কিলোমিটার একই হওয়ার কথা। কিন্তু গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায়, এলাকাভেদে একই কাজের ব্যয় প্রতি কিলোমিটার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বেশি। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার এবং সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সিলেটের সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় ব্যয় হবে ৯৮৬ কোটি টাকা। উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে নতুন সড়ক উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার এবং ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে।

প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে দেখা যায়, সিলেটে উপজেলাপর্যায়ে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ৮০ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে ৬৫ লাখ টাকা করে। অথচ কুমিল্লায় উপজেলাপর্যায়ে এই ব্যয় ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইউনিয়নপর্যায়ে ৭০ লাখ ও গ্রামে ৬৭ লাখ টাকা। বিদ্যমান সড়কগুলো পুনর্বাসন ও মেরামতের জন্য সিলেটে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। আর একই খাতে কুমিল্লায় ব্যয় হবে ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তবে ব্রিজ নির্মাণে কুমিল্লার চেয়ে সিলেটে ব্যয় বেশি হবে প্রতি মিটারে। কুমিল্লাতে উপজেলায় ৮ লাখ টাকা, ইউনিয়নে ৭ লাখ টাকা এবং গ্রামে ৬ লাখ টাকা। আর এই খাতে সিলেটে ব্যয় হবে উপজেলায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ইউনিয়নে ৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং গ্রামে ৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সড়কগুলো নির্মাণের জন্য অর্থ ব্যয় হলেও মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য কোনো প্রকল্প নেই। সংস্কার ও মেরামতের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন প্রকল্পের মধ্যে থেকেই এসব কাজ করা হচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতাত্তোরকালে গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য উন্নয়নসহযোগী সংস্থা (ইউএসএইড) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বা কাবিখা’র মাধ্যমে ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ইজিপিপি নামে একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে। এই দু’টি কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার মাটির রাস্তা তৈরি করেছে। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৮৯টি উপজেলার মোট ৩ হাজার ১৪৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার মাটির রাস্তা করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/251346