১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৪৭

সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানবিক বিপর্যয়

এইচ এম জোবায়ের : মানবিক বিপর্যয় নিয়ে অনেক সংলাপ, বক্তব্য ও নীতিমালা জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অনেকেই দিয়েছেন। সেখানে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জনপদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এলাকা, বৈরী অবরোধে নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠী এবং মৌলিক অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষকে ও তাদের দুর্ভোগকে মানবিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং সেসব এলাকা বা স্থানে দ্রুত ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তার কথা বলা আছে। কিন্তু আলোচ্য নিবন্ধে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিজ্ঞজনের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে এক ভিন্ন চিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করা হবে।

‘মানবিক বিপর্যয়’ শব্দ দুটির মধ্য থেকেই আলোচনা শুরু করা যাক। মানব থেকেই মানবিক এসেছে। মানব বলতে- মানুষ, ব্যক্তি, মনুষ্য, মানবজাতি,মনুষ্যজাতি, মানবসমাজ ইত্যাদিকে বোঝায়। মানুষের আরো পরিচয় হচ্ছে- মানুষ দু পায়ে চলাফেরা করা এক স্তন্যপায়ী জীব। নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার মাধ্যমে ভাব বিনিময়ে এবং সমস্যা ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম মানুষ। মানুষের আছে নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও ভাল-মন্দ বিবেচনা করার শক্তি। আর এ শক্তিই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে। তবে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, কথা-বার্তা ইত্যাদির কারণেই শুধু মানুষকে মানুষ বলা হয় না। আরো কিছু বিষয় মানুষের মাঝে থাকা একান্ত জরুরী। আসলে মানুষ শব্দটির সাথে মানুষ নাই। আসল মানুষটি আছে মানুষের মনুষ্যত্বের সাথে। পশুর পরিচয় যেমন তার পশুত্বের সাথে। রক্ত-গোশত, হাত-পা-চোখ-কান-নাক ইত্যাদি থাকার পরও যদি কারো ভেতর আসল মানুষ অর্থাৎ তার মনুষ্যত্ব বর্তমান না থাকে তবে তাকে কী করে মানুষ বলা যায়? পবিত্র কুরআনে এ ধরনের নাম পরিচয়ধারী মানুষকে পশু বা তার থেকে নিকৃষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (৭ ঃ ১৭৯)। আমাদের বর্তমান সমাজের কতিপয় নামধারী মানুষ আজ পশু বা ততোধিক পশুত্বের পর্যায়ে চলে গিয়েছে বলে ধারণা করছেন সমাজবিজ্ঞানীগণ। কয়েকটি ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ২৮ মে ২০১৭ রবিবার জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়- ফুলবাড়ীয়ায় গোয়াল ঘরে বৃদ্ধা মা : ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় এক বৃদ্ধা মা’কে গোয়াল ঘরে রাত্রিযাপনের জন্য রেখে যাওয়ার পর ৩/৪টি শিয়াল কামড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। ১৫ আগস্ট ২০১৭- ভাত খেতে চাওয়ায় ৯৮ বছরের বৃদ্ধা মাকে ছেলের নির্মম নির্যাতন, হাসপাতালে নিলো গ্রামবাসী। ১৩ আগস্ট ২০১৭- ১০১ বছর বয়সী বাবাকে মারধর করল ৪ ছেলে। ৩০ জুলাই ২০১৭, ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে ছাত্রী ধর্ষণ। বগুড়ায় নির্যাতনের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করা হয়। ১২ জুলাই ২০১৭, সৎ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেফতার। আট বছর ধরে ধর্ষণ করা হয় সৎ মেয়েকে। ০৩ আগস্ট ২০১৭- চলন্ত ট্রাকে কিশোরী ধর্ষণ, চালক গ্রেপ্তার। ১ আগস্ট ২০১৭- সখীপুরে চাচা কর্তৃক ভাতিজি ধর্ষণের অভিযোগ।

এই কয়েকটি ঘটনা যা পত্রিকায় আসা ঘটনাগুলোর হয়তো দশ ভাগের এক ভাগ হবে। আর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এমন ঘটনাও প্রকৃত ঘটনার দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। যাহোক, এগুলো উল্লেখ করার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় প্রকৃত ঘটনা ও তার পরিমাণ কত ব্যাপক ও ভয়াবহ। সন্তান কর্তৃক বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নির্মম নির্যাতন, বাবা কর্তৃক সৎ মেয়েকে ধর্ষণ, চাচা কর্তৃক ভাতিজিকে ধর্ষণ এগুলো কোন মামুলী ব্যাপার নয়। এগুলো অস্বাভাবিক, অমানবিক, অকল্পনীয়, অকথ্য, অলেখ্য। পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখ আটকে গিয়ে মন আঁতকে উঠে ‘ধর্ষণ’ এর খবরগুলোর উপর। আজ মানবতা-মনুষ্যত্ব, বিবেক ও রুচি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা কল্পনা করলেও শিহরিয়ে উঠে গোটা শরীর। এককথায় এটা মানবতা ও মনুষ্যত্বের চরম বিপর্যয় ছাড়া কিছুই নয়। পৃথিবীতে এর থেকে মানবিক বিপর্যয় আর কী হতে পারে যে মানুষগুলো আর মানুষ নাই, সব পশুতে পরিণত হয়েছে? এখন প্রশ্ন আসে ত্রাণসহ আনুষাঙ্গিক সহায়তার। কোথায় জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন, সরকার ও সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী? আপনারা এগিয়ে আসুন, উদ্ধার করুন ধর্ষককে। পশুটিকে আবার মানুষ বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ না করে আপনারা উদ্ধার করছেন ধর্ষিতাকে! কি আজব! কি নির্মম উপহাসই না করছেন আপনারা মানবতার সাথে! ধিক আপনাদের। ধর্ষিতার ফরেনসিক টেস্ট এর পাশাপাশি যদি ধর্ষকদের মানসিক বিকৃতি নিয়েও ব্যাপক রিসার্চ করা হতো এবং তার আলোকে যথাযথ প্রতিষেধক প্রদান করা হতো তবে হয়তো বা এ ধর্ষক ও ধর্ষণের ঘটনা আস্তে আস্তে কমে যেতো।

আমাদের দেশে সবসময় গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা হয়। নারী নির্যাতন, খুন-খারাবিসহ সব অপরাধ করার পরিবেশ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। প্রথমেই আসি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে। ধর্ম মাত্রই মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয়। সেখানে আমাদের দেশের সিলেবাস ও পাঠ্য-পুস্তকে ধর্মকে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হিসেবে রাখা হয়েছে। পড়লে পড়, মানলে মান, না মানতে চাইলে কারো দায় নেই তোমাকে বোঝানোর। ছাত্ররা ঐচ্ছিক বিষয়কে কখনোই আবশ্যিক বিষয়ের মত গুরুত্ব দিবে না এটাই বাস্তব কথা। তাই ধর্ম-কর্ম শিক্ষার্থীরা না পড়ে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে তা শিক্ষা না দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই মূলত অমানুষ তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। ধর্ম হচ্ছে প্রায়োগিক জ্ঞান, তা বুদ্ধিমানকে বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগ শিখায়, শক্তিমানকে শক্তির সঠিক ব্যবহার শিখায়। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন- “বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অন্যায় কাজ করতে পারে না”। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাদী বুদ্ধিমান তৈরি করছে, যারা নিজের ভাল বৈ অন্যের মঙ্গল চিন্তা করতে শিখছে না। সরকারকে সকল পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) ধারা ৯-এর ১-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে : যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ছাড়া ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে। ধর্ষণকারীর জরিমানা ও শাস্তি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ধারা ৯-তে বলা হয়েছে- ১. যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ২. যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ-পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ৩. যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ৪. যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া যদি কেউ ধর্ষণের চেষ্টা করেন তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। ৫. যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নারী ধর্ষিত হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন ওইরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ধর্ষিত নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক ১০ বছরের কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।” আইনে শাস্তির যে বিধান দেখা যাচ্ছে তা নি:সন্দেহে যথাযথ ও সর্বোচ্চ। এখন দরকার এর সঠিক প্রয়োগের। ধর্ষণ যেহেতু নিকৃষ্টতম কু-রুচির কাজ সেহেতু এর শাস্তির প্রয়োগটাও হওয়া দরকার দৃষ্টান্তমূলক। এক ধর্ষকের শাস্তি দেখে যাতে হাজারো ধর্ষণ চিন্তকের কলিজা কেঁপে উঠে। পৃথিবীর কোন কোন দেশে ধর্ষণ এবং তৎপরবর্তী হত্যা সংক্রান্ত মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ফাঁসি প্রকাশ্যে কার্যকর করা হয়। এতে করে সকল মহলে সচেতনতা বাড়ে। তৃতীয়ত, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো। সামাজিক সচেতনতা সামাজিক অপরাধ দমনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাধারণের চেয়ে সরকারি উদ্যোগ বেশী প্রয়োজন। সরকার কয়েকটি পন্থা ও পর্যায়ে এ অভিযান চালাতে পারে। প্রথমেই মিডিয়া প্রসঙ্গ। মিডিয়াতে সামাজিক অবক্ষয়-অনৈতিকতাসহ সকল অপরাধকে গুরুত্ব দিয়ে এর প্রতিকারের রাস্তাগুলো বারবার উপস্থাপনা করতে হবে। অপরাধীর শাস্তি এবং তা দ্রুততম সময়ে কার্যকরের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে মিডিয়া। উত্তম চরিত্র গঠন, মানবিক মূল্যবোধ তৈরি এবং নৈতিকতা সমৃদ্ধ আদর্শ মানুষ গঠনে বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মান ও প্রচার করবে মিডিয়া। অপরাধকে উস্কে দেয়ার মত কোন কর্মতৎপরতায় জড়ালে মিডিয়াকেও বিচারের আওতায় আনা হবে। এরপর আসে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকার কথা। সমাজের বিশাল একটি অংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। মসজিদ, মাদরাসা, খানকাহ, গীর্জা, মন্দিরসহ সকল প্রতিষ্ঠান সামাজিক অবক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে পারে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শুধু নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের জন্য দোয়া-দরুদ পাঠের আয়োজন না করে সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর ব্যাপারে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরকে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অত:পর তারা নিজ নিজ এলাকা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেই ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। এরপর আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রসঙ্গ। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আবার মেরুদণ্ড ভাঙ্গার জন্য দায়ী হল কু-শিক্ষা। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই ধর্মকে উপেক্ষা করার মত সংকীর্ণতা থেকে আমাদের আইন প্রণেতাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যা-বুদ্ধি, মেধা-মনন, বিজ্ঞান-গবেষণা সবকিছুকেই ধর্মের কষ্ঠি পাথরে উত্তীর্ণ করে তবেই কর্মজীবনে পাঠানো জরুরী। তবেই এরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাঙ্খিত ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে। অন্যথায় তাদের কাছে পরিবার, সমাজ, দেশ কিছুই নিরাপদ থাকবে না। এছাড়া শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত নৈতিকতা শিক্ষা, আদর্শ নাগরিক হওয়া এবং সমাজের-দেশের ও পরিবারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনার মত কিছু করতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চতুর্থত, সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন। পরিবার হচ্ছে সভ্যতা বিনির্মাণের প্রাথমিক ও প্রধান সূতিকাগার। নেপেলিয়ানের সেই বিখ্যাত উক্তি- “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো”। অর্থাৎ পরিবার এবং মা’ই পারেন সন্তানকে সঠিক মতে ও পথে গড়ে তুলতে। পরিবারের প্রতিজন সদস্য যদি একে অন্যের দিকে সহানুভূতি, সহমর্মিতা, প্রেম-ভালবাসা সহকারে বিপথগামী কোন সদস্যকে পরম মমতা দিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করেন তবে সেই পরিবার আদর্শ পরিবার হতে বাধ্য। পরিবারের একজন সদস্য যদি ছোটকাল থেকেই অন্যায় না করা, মিথ্যা না বলা, লোভ-হিংসা না করা, অন্যের সম্পদ নষ্ট ও দখল না করার শিক্ষা যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাভ করে তবে সেই শিশুটি বড় হয়ে জেনে-শুনে অন্যায় করতে পারে না। তাই ধর্ষণ-নির্যাতনসহ অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে প্রতিটি পরিবারকে সময়োপযোগী ও কাঙ্খিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

পরিশেষে আমেরিকান অনলাইন সংবাদ সংযোগকারী ব্লগ হাফিংটন পোস্টের একটি জরিপের উল্লেখ করতে চাই। তারা তাদের অনলাইন পাঠকের কাছে ‘সত্যিকারের ভাল মানুষ কারা’ এ ব্যাপারে প্রশ্ন রাখে। এর জবাবে হর্যালস উলড্রিজ বলেন, ‘আমার কাছে ভালো মানুষ হচ্ছে সে যে মানুষকে ভেঙ্গে ফেলে না বরং তৈরি করে।’ আরেকজন বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে মূল্য দেয় এবং অন্যকেও সমান মূল্য দেয় সেই ভালো মানুষ।’ কারো মতে, ‘অন্যের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারার ক্ষমতাই আপনাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।’ কনি ড্রাউনস নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই যাকে বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করতে পারে সেই ভালো মানুষ।’ এম্বার লাডলো নামে একজন বলেন, ‘আমি মনে করি ভালো মানুষ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি সবসময়ই সঠিক কাজ করেন, সেটা কেউ দেখুক বা না দেখুক।’ টুইটারে একজন উত্তরে বলেন, ‘নিজেকে দিয়েই শুরু করুন, আপনি যদি আপনার কাজে সন্তুষ্ট থাকেন তবে বাকিরাও আপনার কাজের প্রশংসা করবে।’

তবে যে যাই বলুন- ভাল মানুষের সংজ্ঞা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অঙ্কিত আছে। কারণ জন্মগতভাবেই মানুষের মাঝে ভাল-মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ভাল সবার কাছেই ভাল, খারাপ সবার কাছেই খারাপ। স্বয়ং ধর্ষকও বুঝতে পারে সে কী পাশবিক কাজই না করে ফেলেছে! তবে শাস্তি তাকে এজন্যই পেতে হবে যে, এটি যে জঘন্য খারাপ কাজ এ ব্যাপারে পূর্বেই তাকে সতর্ক করা হয়েছে বা সেটি খারাপ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ছিল। অবক্ষয়ের এই ক্রমবর্ধমান অবনতির দিকে সকলের সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এই আশাই ব্যাক্ত করছি। অন্যথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে ভয়াবহ কোন মানবিক বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
লেখক : চীফ রিসার্চার, লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ লি.

http://www.dailysangram.com/post/299548