১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:১৮

নামেই শুধু সড়ক

সরজেমনি: গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ

গাবতলী থেকে সদরঘাট বেড়িবাঁধ পর্যন্ত নামেই রয়েছে সড়ক। আদতে ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরপুর। রাজধানীতে এমন বেহাল সড়ক থাকতে পারে, ভাবনাতে ছিল না লাজিম রহমানের। ঢাকা উদ্যানের ঘাটে বুড়িগঙ্গায় বেড়াতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।

ঢাকা উদ্যানের ঘাট এলাকায় নদী বর্তমানে বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। দূষিত নদীতে কিছুটা প্রাণ ফিরেছে। প্রতিদিন এখানে শত শত মানুষ নৌকায় নদী ভ্রমণ করতে আসেন। তেমন ক'জন জানালেন ঘাটে পেঁৗছার আগের অভিজ্ঞতা।
নদীর ঘাটে গত শুক্রবার কথা হয় লাজিম রহমানের সঙ্গে। কাঁঠাল বাগান থেকে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। জানালেন, ঘাটে পেঁৗছার আগেই কোমর ভাঙে রাস্তায়। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পর বেড়িবাঁধ দিয়ে যত এগিয়েছেন, রাস্তা তত খারাপ। আক্ষেপ করে বললেন, 'ভর্তা করতে কৌটায় জাম যেভাবে ঝাঁকানো হয়, অটোরিকশায় এই সড়কে ওই একই অবস্থা হয় যাত্রীদের।'

গাবতলী থেকে সদরঘাট সড়কে চলাচলকারী ব্রাদার্স পরিবহনের চালক আবদুল খালেক জানান, রাজধানীতে এমন ভাঙাচোরা সড়ক আর নেই। সরেজমিন গিয়ে তেমন চিত্রই দেখা গেল। শুক্রবার সকালে মোটরসাইকেলে লালবাগের ট্যাংকির ঘাট থেকে যাত্রা শুরু। এখান থেকে গাবতলী সেতুর দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। সেখানেই শেষ সদরঘাট-গাবতলী সড়ক। বন্যার পানি ঠেকাতে গত শতকের আশির দশকে গাবতলী থেকে সরদঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। আর বাঁধের ওপর নির্মাণ করা হয় সড়ক। এতে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহনের চাপ কম ছিল। সড়কটি নির্মাণের ফলে গাবতলী থেকে সহজে মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, লালবাগ এলাকায় যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু গত তিন বছর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি ভেঙেচুরে বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেড়িবাঁধের নির্মাতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)।

সরেজমিন দেখা যায়, লালবাগ থেকে কামরাঙ্গীরচরের বিদ্যুৎকেন্দ্র সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। সেখান থেকে রায়েরবাজার কবরস্থান পর্যন্ত সড়ক খারাপ হলেও কিছুটা সহনীয়। কিন্তু আদাবর থেকে সড়কের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। কোথাও তিন ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে কাদা-জলে পায়ে চলারও উপায় থাকে না। পণ্যবাহী ট্রাক প্রায়ই আটকা পড়ে এসব খানাখন্দে। ব্রাদার্স পরিবহনের চালক আবদুল খালেকের ভাষায়, রাস্তার কারণে গাড়ির আয়ু দ্রুত শেষ হচ্ছে। এক্সেল ভাঙছে নিয়মিত। খানাখন্দের কারণে এমন ঝাঁকুনি হয়, মাঝে মধ্যে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়।
ঢাকা উদ্যানের সামনে কথা হয় ফল বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত তিন বছরে এক মুঠো মাটিও ফেলা হয়নি এই সড়কে। বর্ষায় কাদা-জলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, জরুরি প্রয়োজন না পড়লে কেউ এই সড়ক মাড়ায় না। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলায় থাকে একাকার।

সরেজমিন দেখা যায়, গত ক'দিন বৃষ্টি না হওয়ায় ধুলায় ধূসরিত গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়ক। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলে এই ধুলা রূপ নেবে কাদায়। সারা বছর ভোগান্তি আর ফুরায় না। স্থানীয় প্রতিনিধিদের অবগত করেও কোনো ফল হচ্ছে না। তারা বলেন পাউবোর কথা।
গাবতলী গরুর হাটের কিছুটা আগে, সড়কে একটুও পিচের চিহ্ন নেই। দু'পাশে বাস-ট্রাক পার্ক করা। বুড়িগঙ্গা থেকে তোলা বালি নিয়ে হেলেদুলে পার হচ্ছে ট্রাকগুলো। ঈদুল আজহায় গরুর হাট বসায় হাট এলাকা সংলগ্ন সড়ক কিছুটা সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু সে অংশও আবার নষ্ট হতে শুরু করেছে।
২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম সজীব জানান, তার নির্বাচনী এলাকায় পড়লেও সড়কটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাউবোর। পাউবোকে বহুবার বলা হয়েছে সড়কটি মেরামত করতে। কিন্তু তারা করছে না।
উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল তারেকুজ্জামান রাজিব বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তিনি। সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সড়কটির সংস্কার করা যাচ্ছে না।

http://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-khobor/article/17091312