১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:০৬

চালের দাম বাড়ছেই

ঈদের পর থেকে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে চালের দাম। ঈদের আগে ও পরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা। চালের দামে এই অস্থিরতা সহসা কাটছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের সংকট মোকাবিলায় ঈদের আগে সরকার দুই দফায় আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২৮ থেকে ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ার কথা। কিন্তু ইতিবাচক কোনো প্রভাব দেশের চালের বাজারে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাদের মতে, দেশের ভেতরে ধান-চাল সংগ্রহের কাজে খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। ফলে সরকারি খাদ্যগুদামে চালের মজুত না বাড়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।

কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চাল ৩০০০ টাকা, নাজিরশাইল ৩৪০০ থেকে ৩৭০০ টাকা, আটাশ ২৫০০ থেকে ২৬০০, স্বর্ণা ও ভারত থেকে আসা মোটা চালের বস্তা ২২৫০ থেকে ২৩০০, পারিজা ২৪০০ এবং পাইজাম চালের বস্তা ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পরে এই বাজারে এসব চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। চালের খুচরা বিক্রেতা খলিল জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। আগামীকাল কেজিতে ১ টাকা বাড়বে। কেন চালের দাম বাড়ছে জানতে চাইলে খলিল বলেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকায় সরু চাল কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, উত্তম মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, উত্তম মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল প্রতিকেজি ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হয়। সংস্থাটির তথ্যমতে, সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে ৫.৩৬ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫.৫৬, উত্তম মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৩.৪৫, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চাল ৩.১৬, উত্তম মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪.০৮, স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দাম বেড়েছে ২.২৭ শতাংশ।

মিল মালিকদের কথামতে, দুই দফা বন্যার কারণে নাকি ধান নষ্ট হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বাড়তি। আমরা যারা খুচরা চাল বিক্রি করি। খুব সীমিত লাভ করে থাকি। কেজিতে দুই/এক টাকার বেশি আমাদের লাভ থাকে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আরেক খুচরা বিক্রেতা ফারুক বলেন, এখন মোটা চাল কেজি প্রতি বিক্রি ৪৬ টাকা, মিনিকেট ৬০ টাকা এবং নাজিরশাইল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে চালের দাম আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
ফারুক বলেন, যে পরিমাণ চাল পাবার কথা সে পরিমাণ চাল আমরা পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে সামনে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা এবং মিনিকেটের কেজি ৭০ টাকা হবে। আগামী বৈশাখ মাসে নতুন ধান উঠলে চালের দাম কমে আসবে।
এদিকে কাওরান বাজারে চাল কিনতে এসেছেন আব্দুল আলীম। দুই দিন আগে যে চাল কিনেছেন ৫৭ টাকায় এখন তা ৬০ টাকা। অভিমানের সুরে আলীম বলেন, কারে কি বলবো। বাজারে চালের আড়তে কোথাও তো চালের সরবরাহ কম দেখছি না। এই যে বাজারে এত চাল। এগুলো আসছে কোথা থেকে। তাহলে সংকটটা কোথায়? কেন চালের দাম এভাবে বাড়ছে। কেউ কি দেখার নেই? শহীদুর রহমান বলেন, আমরা তো পাকিস্তানি না যে রুটি খেয়ে থাকবো। আমরা বাঙালি আমাদের তো ভাত খেতেই হবে। চালের দাম বাড়ুক আর কমুক। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় ব্যবসায়ীরা। সরকারের উচিত চালের বাজারটা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। যাতে কেউ চাল নিয়ে চালবাজি করতে না পারে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82585