১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:০০

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার বাংলাদেশের কূটনীতিক ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছে

# দিল্লীর অনুমতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা পরিদর্শনে যাচ্ছেন--মাহমুদুর রহমান # জার্মানির ইহুদি নিধনের মত মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে-- ডা. জাফরুল্লাহ # মিয়ানমারের সীমানার ভেতর সেইফ হোমের ব্যবস্থা করতে হবে-- আবুল হাসান চৌধুরী # বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে--আসিফ নজরুল #

‘ন্যাশনাল সলিডারিটি ফর দি রোহিঙ্গা’ বা রোহিঙ্গাদের জন্য জাতীয় সংহতি শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার বাংলাদেশের কূটনীতিক ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছে। তারা বলেন, বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া। নয়তো বাংলাদেশ একদিন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এসময় বক্তারা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় একটি নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়।
বিচারপতি আবদুর রউফের সভাপতিত্বে এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতিকের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন--- আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোফাজ্জল করিম, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ড. সুকোমল বড়–য়া, সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, মাওলানা শাহ আতা উল্লাহ হাফেজী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, রাজনীতিক বিশ্লেষক প্রফেসর দিলারা জামান, ব্লগার ডা. পিনাকি ভট্টাচার্য্য, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান, হেফাজত নেতা আজীজুল ইসলাম ইসলামাবাদী, প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, ডা. আবদুল ওহাব মিনার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, ’৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বার্মায় গিয়েছিলেন। সেখানে তারা আশ্রয় পেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করার সিদ্ধান্ত হলো। পরে অবশ্য আসতে দেয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি। নিরপত্তার দোহাই দিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে বাধা দেয়া দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের স্ত্রী এবং তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশা দেখতে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবেমাত্র অসহায় রোহিঙ্গাদের পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, এটাই স্বাভাবিক। সম্ভবত এতদিনে রোহিঙ্গাদের পরিদর্শনে যাবার জন্য দিল্লীর অনুমতি পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা ও জাতিগত নিধন প্রক্রিয়া চলছে দাবি করে তিনি বলেন, দিল্লীর হুকুমের যেসব দাস বিষয়টি এখনো বুঝতে পারছেন না তাদের জন্য গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের নতুন সংজ্ঞা দিতে হবে।
আমার দেশ সম্পাদক আরো বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি মিয়ানমার সফর শেষে দেশে ফিরে দাবি করেন যে মিয়ানমারে উগ্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। মোদির এমন বক্তব্যের পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে বক্তব্য দেন এবং এর পরই পুলিশের এক বড় কর্মকর্তাও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বক্তব্য দেন। এভাবেই একটি সম্পূর্ণ মানবিক বিষয়কে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হলো।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত বাংলাদেশের এককোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছিলো এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিলো। এর ফলে ভারতের লক্ষ্য পাকিস্তান ভাগ করা সফল হয়েছিলো, আমরাও স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। একটা উইন উইন পরিস্থিতি হয়েছিল। এটাই বাস্তবতা, এটাই ইতিহাস।
তিনি বলেন, শ্রীলংকার ক্ষেত্রেও ভারত তামিল টাইগারদের অস্ত্র, আশ্রয় ও ট্রেনিং দিয়ে প্রথম দিকে সাহায্য করেছিল। পরে অবশ্য ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসে, কারণ তামিল টাইগাররা স্বাধীনতা লাভ করলে তামিল অধ্যুষিত ভারতেও স্বাধীনতা আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।

অথচ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বেলায় ভারতের অবস্থান একেবারে ভিন্ন। রোহিঙ্গারা যদি মুসলমান না হয়ে হিন্দু হতো, মোদি কখনোই মিয়ানমার সফর থেকে ফিরে সন্ত্রাসবাদের গল্প বলতো না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষমতায় তিন হত্যাকারী। তারা একজোট হয়েছে। গুজরাটের হত্যাকারী মোদি, মিয়ানমারে গণহত্যাকারী সু কি ও বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হত্যাকারী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মধ্যে এখনো সংহতি না আসলেও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সংহতি সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এখন সবার উচিত জনগণকে এক করা। যদিও ২০১৪ সালের একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ঐক্যে ভয় পায়।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবেতর পরিস্থিতিতে যারা আবেগতাড়িত হচ্ছেন তাদেরকে নিয়ে যারা উপহাস করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, আবেগ ছাড়া কোন মানুষ হয় না, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কি আবেগ ছিল না?
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জার্মানির ইহুদি নিধনের মত মিয়ানমারে গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ নরিব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের তিন বন্ধু ভারত চীন রাশিয়া মিয়ানমার প্রশ্নে বাংলাদেশের বিপক্ষে কেন? এর কারণ চীন এবং রাশিয়া মিয়ানমারে ব্যবসা করবে। এজন্য তারা বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান করছে না। তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সম্মিলিত বিরোধী দলীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সীমানার ভেতর সেইফ হোমের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে এই ফোকাস অন্যদিকে চলে যাবে। পাশ্ববর্তী দেশের স্পর্শকাতরতার কারণে সার্ক সম্মেলন হলো না। মোদির স্টেইটমেন্টকে বাংলাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে বলেন, কূটনীতিতে আমাদের এগুতে হবে। আমরা চাই না চীন আমাদের ভেটু দিক। তিনি রোহিঙ্গ সংকট সমাধানে চীন এবং রাশিয়াতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি আরও কিছু ভ্রান্ত বাম ঘরারার বুদ্ধিজীবী রোহিঙ্গাদের মুসলমান বলে বিষয়টা অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। বিমসস্টেক ও আশিয়ানের মাধ্যমে তড়িৎগতিতে ক্ষেত্র প্রস্তুত করার আহ্বান জানান তিনি।

মোফাজ্জল করিম বলেন, আমাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখিন। সরকার সর্বক্ষেত্রে অনৈক্যে বিশ্বাস করে। কারণে এতে ঘোলাপানি মাছ শিকার করতে সুবিধা হয়। তারা হয়তো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত একটা নির্বাচন করতে চায়। তিনি বলেন বাংলাদেশের যে প্রতিক্রিয়া তা অত্যন্ত দু:খজনক। তিনি কবি নজরুলের কবিতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাগরিবের আজানের সময় এসে বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়া জানালো। বসে থেকে থেকে এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় হয়েছে। তিনি কূটনীতিকদের উখিয়া নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এত পুরনো সমস্যা আমাদের সরকারের রোহিঙ্গা নীতি নাই কেন? প্রতিবেশী দেশ থেকে দশক ১৯৭৮ সালে সমস্যাটা সমাধান করতে পেরেছিল। সে সময় কে ক্ষমতায় ছিল তা বলতে চাই না। তখন অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘের মাধ্যমে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আজ পারছে না কেন? এর দুটি কারণ। এক নম্বর হলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন আমরা যুদ্ধ করবো না। কিন্তু বিজিবির লোককে তুলে নিয়ে যায়। আকাশ সীমা লঙ্ঘন করা হয় অথচ কিছু বলা হয় না। এটা কেমন আত্মসম্মান বোধ। তাহলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নেবে। আমরা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়। আত্মসম্মানবোধের কথা বলা হয়। যখন ভারত সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয় তখন প্রতিবাদ করা হয় না। তাহলে তখন আত্ম সম্মানবোধ কোথায় যায় ? প্রশ্ন রাখেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

তিনি বলেন,কথায় কথায় এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে থাকে। অথচ মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার বার বার বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ করছে। তিনি প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কি কোন হেলিকপ্টার নেই? বাংলাদেশের সামরিক হেলিকপ্টার কি একবার সীমান্ত টহল দেয়ারও ক্ষমতা রাখে না?
আসিফ নজরুল বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায়, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র সদস্যদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। অথচ সরকার কোন পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুধু মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। আসিফ নজরুল বলেন, ন্যূণতমো আত্ম-সম্মানবোধ ও রাষ্ট্রসত্তার দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও সরকার এভাবে নিরব থাকতে পারতো না।

সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সব গর্জন যেন দেশের ভেতরে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে বিক্ষোভ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার – এমন অভিযোগ এনে আসিফ নজরুল বলেন, এই ইস্যুতে সরকারের উচিত জনমতকে আরো উত্তাল করে দেয়া যাতে বহির্বিশ্বও বিষয়টি জানতে পারে।
প্রফেসর দিলারা জামান বলেন, আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেম দুর্বল। দক্ষ কূটনীতিক দরকার ছিল। যেটা করা হয়নি। শিক্ষার মান পড়ে গেছে। অদক্ষ দলীয় লোকজনের হাতে কূটনীতি। ফরেন পলিসিতে জনমতের প্রভাব পড়ছে না। আমাদের বন্ধু নাই। প্রতিবেশি দেশ নিরবে আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। ভারতের বক্তব্য হচ্ছে ধরি মাছ না ছুঁই পানি। আমাদের মধ্যে তা ডেভেলপ করিনি। মূল গোড়ায় যাইনি। সবাই চেষ্টা করবো সংহতি আনার জন্য। বাংলাদেশের সামনে যে সংকটটা তৈরি হয়েছে নন ট্রেডিশনাল হুমকি আসছে। মানবিক বিপর্যয় ফেইস করছি। বার্মা ঘর ঠিক করে নিধনে নেমেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের আরাকানে বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য রোহিঙ্গাদের তাড়াচ্ছে। এজন্য চীন তাদের সমর্থন দিচ্ছে। কারণ মিয়ানমারে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।

শওকত মাহমুদ বলেন, জাতীয় সংহতি আমাদের দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের সরকার তা চায় কি না। সরকারের সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য হচ্ছে আমরা উদ্বিগ্ন আর সরকার আতঙ্কিত। তারা মনে করে এখানে কোন চক্রান্ত ষড়যন্ত্র আসে না। আমরা বলছি তাদের আশ্রয় দেয়া হোক। পরে কূটনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে বার্মাকে বাধ্য করা তাদের ফেরত নিতে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে অনেকগুলো জাতিগত অনেকগুলো সংঘর্ষ চলছে। আরাকানিদের বিতারণ করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য কোনখানে হচ্ছে না। কারণ কি? বাংলাভাষি মুসলমানদের সঙ্গে কিন্তু এরকম হচ্ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন একটা অবস্থান তৈরি করতে হবে যাতে বাঙ্গালি মুসলমানদের ওপর আর অত্যাচার করতে হবে। ভবিষতেও করার সাহস না পায়।
সাংবাদিক ও কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে একসময় রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছিল।

তিনি বলেন, বার্মিজরা আরাকান রাজ্য দখল করার আগ পর্যন্ত আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল এবং সেখানকার প্রধান ভাষা ছিল রোহিঙ্গাদের ভাষা। কবি আলাওলের মতো মহাকবি আরাকান রাজ্যের রাজসভার কবি ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের বাঙ্গালি ও অবার্মিজ আখ্যা দিয়ে দেশ থেকে বিতারণ করা হচ্ছে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়- মন্তব্য করে আব্দুল হাই শিকদার আরো বলেন, মিয়ানমার সরকারের বর্তমান প্রধান অং সান সুকির স্বামী একজন খ্রিস্টান ও অবার্মিজ ইংরেজ ছিলেন। তার ঔরসে সুকির যে সন্তানরা রয়েছে তাদেরকে কি রোহিঙ্গাদের মতো দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে মিয়ানমার সরকার? তিনি বলেন, রোহিঙ্গা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো রক্ষা করা। যারা একসময় রক্ষা করতো, আজ তারাই বিপদে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়–য়াা বলেন,রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো বর্বোরোচিত গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় তিনি লজ্জিত, মর্মাহত। ওই ঘটনায় তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, মিয়ানমারে মানবতা লঙ্ঘিত, ভুলুণ্ঠিত ও রক্তে মিশ্রিত। রোহিঙ্গারাও মানুষ, আমরা মানুষের পক্ষে তথা মানবতার পক্ষে।

মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সুকোমল বড়ুয়া বলেন, জাতিসংঘ, ওআইসি ও আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় ও সাহায্যের জন্য একটি অরাজনৈতিক নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে স্পষ্টতই গণহত্যা চলছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় সেই গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিক্ষোভ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না সরকার। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম আরাকান প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণেরও আহবান জানান মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান।
ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্লিপ্ততা ও নতজানুতার কারণেই ক্রমে দু:সাহসী হয়ে উঠছে মিয়ানমার।
তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ১৭ বার মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশ সীমান্তের অন্তত এক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে মিয়ানমার সেনারা অভিযান চালিয়েছে।
পিনাকী বলেন, মিয়ানমারের এমন বেপরোয়া আচরণ শুধু রোহিঙ্গাদের সাথে সম্পর্কিত নয়, এসব ঘটনার সাথে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জড়িত।
তিনি সরকারকে মিয়ানমার ও ভারতের তরিকা থেকে সরে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সব ধরনের কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণমানুষের আবেগের সাথে সরকার প্রতারণা করছে দাবি করে এই ব্লগার আরো বলেন, বিষয়টি মানবিকভাবে দেখা উচিত

http://www.dailysangram.com/post/299404