১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১১:০৯

জিটুজিতে চুক্তি আছে চাল নেই

ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কিনছে সরকার। কয়েক মাস আগে এ সংক্রান্ত চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর বিপরীতে বিভিন্ন লটে চালগুলো দেশে আসছে। তবে কম্বোডিয়া থেকেও আড়াই লাখ টন আতপ চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডের সঙ্গেও চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। সবগুলো দেশের সঙ্গে পাঁচ বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনটি দেশ থেকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় বলা হয়, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড প্রতিটি দেশ থেকে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এখনো পর্যন্ত থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া থেকে এক টন চালও জিটুজিতে আমদানি হয়নি। ওই দুই দেশের চাল দেশের গুদামে পৌঁছানোর কোনো খবর নেই। বরং খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাল ও গম কেনা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এরই মধ্যে চাল ও গম কিনতে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন তারা। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতে জিটুজি পর্যায়ে চাল বা গম কেনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে যেতেন। এখন খোদ খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে টিমগুলো বিদেশে যাচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, চাল বা গম কেনার নেগোসিয়েশন মিটিং-এ মন্ত্রী চাইলেও উপস্থিত থাকতে পারেন না। কারণ কোনো দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী ওই সব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না। ফলে মন্ত্রী চাল বা গম কিনতে বিদেশ সফরে গেলেও তার কিছু করার থাকে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মিয়ানমার সফর করে এসেছেন। কথা ছিল মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে। তবে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর না করেই ফিরে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ সফরে ছিল পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এই দলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক তোফাজ্জেল  হোসেন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও মন্ত্রীর স্ত্রীও ছিলেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামে চালের মজুত গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। সরকারি গুদামে চাল রয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। অথচ ২০১১ সালের এই দিনে চালের মজুত ছিল প্রায় দশ লাখ টন। ২০১২ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩ সালে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। এবারই প্রথম চালের মজুত নিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। এরপর ভারত থেকে কম শুল্কে চাল আমদানি হলেও পাইকারি বাজারে এর তেমন  কোনো প্রভাব পড়ছে না। আমদানি শুল্ক প্রতি কেজি ৬ টাকা কমলেও দেশের বাজারে চালের দাম কমেছে মাত্র ৩ টাকা। এদিকে ১২ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। এর বিপরীতে এখনো পর্যন্ত অর্ধেক চাল কেনার ব্যবস্থা করা যায়নি। জিটুজিতে শুধুমাত্র ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কেনা গেছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন আতপ ও ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল রয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82402