১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪৮

রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ১৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ১৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের কারষে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারছে না এসব ব্যাংক। গ্রাহকের টাকা লোপাটের সাথে জড়িতদের বিচার না হওয়াতে সাধারণ গ্রাহকরা কোন সঞ্চয় করছে না এসব ব্যাংকে। প্রতি বাজেটেই সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কোন মতে টিকে রয়েছে ব্যাংকগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্যাপিটাল ইঞ্জেকশন দিয়ে এসব ব্যাংক না চালিয়ে মারজার (একিভূত) করা জরুরি। তা না হলে রাষ্ট্র আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিতে বিশাল এই ঘটতির নেপথ্যে রয়েছে বিপুল খেলাপি ঋণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তাদের মতে, ব্যাংকের যোগ্য পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে ব্যাংকিং বিভাগের অদক্ষতারই প্রতিফলন বিপুল খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি।
হলমার্ক আর বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির পরে সারা দেশে এই নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগ বন্ধ না হলে এসব লুট কোন দিনই বন্ধ হবে না। সরকারের খোদ অর্থমন্ত্রীও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও কোন পরিবর্তন হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ বন্ধ হয়নি। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বড় বড় ঋণ দেয়ার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আর বড় ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া এসব পরিচালকরা। আর এ কারণেই খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। খেলাপি আদায়ও হচ্ছে না। যার কারণে প্রতি বছরই মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। এমনকি প্রতি দিনের ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।
সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ ব্যাংকটির গায়ে এখনো হলমার্ক কেলেঙ্কারির দগদগে ক্ষত। এর সাথে যোগ হয়েছে বছরের পর বছর বাড়তে থাকা পুঁঞ্জিভূত খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এরইমধ্যে যা ছাড়িয়েছে ১১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। আর এর হিসেবে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা।
রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া এসব ঋণ কোন দিনই তারা আদায় করতে পারবে না। এসব ঋণের অধিকাংশই আটকে রয়েছে মামলার জালে। বছরের পর বছর চলা এসব মামলা শেষ হচ্ছে না। আর এ কারণেই তারা টাকাও পাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই আবার দেউরিয়া হয়ে গেছে। সুতরাং এসব ঋণ পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনাও নেই।

এক সময় আদর্শ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল বেসিক ব্যাংক। কিন্তু ২০০৯'র পরে সীমাহীন লুটপাটের ফলে ব্যাংকটিতে এখন খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। ফলে এ ব্যাংকটিরও মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ ব্যাংকটিতে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ। কিন্তু ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানসহ অনেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর এ কারণেই ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একজন তত্ত্বাবধায়কও নিয়োগ দিয়েছে।
বিপুল পরিমাণে খেলাপি ঋণের কারণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৭ হাজার ৩১৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৭৪০ কোটি আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর এসব খেলাপি ঋণ দেখিয়ে আসছে ব্যাংক দুটি। কিন্তু কোন টাকাই তারা আদায় করতে পারছে না।

সিনিয়র ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের মতে, এসব খেলাপি ঋণের দায় মূলত সরকারের। সরকার কোনভাবেই এর দায়ভার এড়াতে পারে না। তার মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনভাবেই পরিচালক নিয়োগ দিতে পারে না রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলো। তারা মোর পলিটিকেল নেতাদের পরিচালক হিসেবে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আর তাদের কাছ হলো রাজনৈতিক নেতাদের বড় বড় ঋণ পাস করানো। তাদের কাগজপত্র দেখার সময় তাদের নেই। নেতাদের ঋণ দিতেই তাদের পরিচালক বানানো হয়েছে। তাহলে এর দায় কেন মন্ত্রণালয় নেবে না।
তিনি বলেন, এখন আর এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের কোনো যৌক্তিকতা নেই, বরং এগুলো ছেড়ে দেয়া উচিত বেসরকারি খাতে। বছরের পর বছর সরকার এর দায়ভার নিতে পারে না। এভাবে ব্যাংকের নাম করে জনগণের টাকা লোপাট করবে এটা হতে পারে না।

সেই সাথে ঋণের নামে এসব ব্যাংকে লুটপাটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যদি এসব লুটের বিচার না হয় তাহলে ব্যাংকিং খাতের লোপাট আরও বেড়ে যাবে। তাদের বাঁচিয়ে রাখার নামে ক্যাপিটাল ইঞ্জেকশন করার কোন যুক্তিকতা নেই। এগুলোকে এখন একীভূত করার সময় এসেছে।

http://www.dailysangram.com/post/299266